ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জে প্লাস্টিক কারখানায় আগুনে আরও পাঁচজনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ১০:১৯, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

 কেরানীগঞ্জে প্লাস্টিক কারখানায় আগুনে আরও পাঁচজনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার কেরানীগঞ্জে প্লাস্টিকসামগ্রী তৈরির কারখানায় আগুনে দগ্ধ আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে চারজন রবিবার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহতরা হচ্ছেন- সুমন দেওয়ান (২২), মোস্তাকিন (২২), আব্দুর রাজ্জাক (৪৫) ও আবু সাঈদ (২৯)। এছাড়াও এ ঘটনায় মারাত্মকভাবে দগ্ধ দুর্জয় দাস নামে এক শ্রমিক কেরানীগঞ্জের হিজলতলা বাজারে এলাকার নিজ বাড়িতে মারা যান। ঢামেক বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুর্জয়কে নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন তার পরিবার। এ নিয়ে এই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৯। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সমন্বয়কারী ডাঃ সামন্ত লাল সেন জনকণ্ঠকে জানান, রবিবার সন্ধ্যা সোয়া ৫টার দিকে মারা যান সুমন। ভোর ৬টার দিকে মারা যান মোস্তাকিম। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মারা যান আব্দুর রাজ্জাক ও বেলা সাড়ে ১১টায় মারা যান আবু সাঈদ। তিনি জানান, মৃত সুমন দেওয়ানের শরীর ৮০ শতাংশ, রাজ্জাকের শরীরের ১০০ শতাংশ, মোস্তাকিমের ২০ শতাংশ ও আবু সাঈদের শরীরের ৮০ শতাংশ দগ্ধ ছিল। ৩ জন লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। ময়নাতদন্তের পর তাদের মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। মৃত সুমনের বাড়ি বরিশালের হিজলা উপজেলায়। তার বাবার নাম খলিল দেওয়ান। তিনি কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা উত্তরপাড়ায় থাকতেন। মৃত সুমনের বড় ভাই সোহাগও (২৫) এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে আইসিইউতে ভর্তি আছেন। মোস্তাকিমের মা রোকেয়া বেগম জানায়, তাদের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার ঋষিপুর গ্রামে। তারা কেরানীগঞ্জে চুনকুঠিয়া এলাকায় থাকত। এক ছেলে দুই মেেেয়র মধ্যে ছোট মোস্তাকিম দুই বছর ধরে এই কারখানায় কাজ করত। নিহত রাজ্জাকের স্ত্রী গুলশান আরা জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি কেরানীগঞ্জের চুনকুঠিয়া এলাকায়। রাজ্জাকের এক মেয়ে আয়েশা (১৩) অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশুনা করে। এদিন দুপুরে কেরানীগঞ্জের আগুনে দগ্ধদের অবস্থা জানতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম। তিনি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রোগীদের অবস্থা ঘুরে দেখেন। মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, দগ্ধদের দেখে খুব খারাপ লাগছে। এত ইনজুরি যে, আগে এদের রিকোভারি করতে হবে। সরকার থেকে চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সবসময় খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তিনি জানান, চিকিৎসকরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রথম কথা তাদের জীবন বাঁচানো। পরে অন্য বিষয়ে ভাবা যাবে। এ সময় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের জানান, কেরানীগঞ্জে প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরির কারখানায় আগুনে মারাত্মক দগ্ধ ৩১ জনকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এসেছে। এদের মধ্যে সোহাগ (১৯), মফিজ (৪৫), সুমন (২২), সিরাজুল (১৯), সোহাগ (২৫) ও ফিরোজকে (৩৯) শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। আর আটজন ঢাকা মেডিক্যাল বার্ন ইউনিটে ভর্তি। তিনি জানান, এদের বিনামূল্য চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কারও কোন খরচ করতে হচ্ছে না। এদের জীবন বাঁচানোই এখন প্রথম। শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে যে ছয়জন ভর্তি আছেন তাদের অবস্থা খুবই গুরুতর। তাদের অন্যত্র সরানোর মতো কোন অবস্থা নেই। কাজেই আমি মনে করি দেশেই চিকিৎসা সম্ভব। ডাঃ সামন্ত লাল সেন জানান, এখন পর্যন্ত কেরানীগঞ্জের আগুনে দগ্ধদের মধ্যে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মোট ১৯ জন মারা গেল। তিনি জানান, ১৩ জনের মৃতদেহ শুক্র ও শনিবার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে ঢাকার জেলা প্রশাসন। বাকিদের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে।
×