ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় গ্রহণযোগ্যতা পেল আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি

প্রকাশিত: ১১:৫২, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

বগুড়ায় গ্রহণযোগ্যতা পেল আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ কেমন হলো বগুড়ার আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি! সাধারণ মানুষের কৌতূহলের যেন অন্ত নেই। প্রায় চার যুগের কান্ডারি মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদ্দিনের (সর্বশেষ সভাপতি) মৃত্যুর পর আলোচিত হচ্ছিল মমতাজ বিহীন বগুড়ার আওয়ামী লীগ কেমন হবে! ১৯৯৩ সাল থেকে প্রায় ২৫ বছর একটানা সভাপতি ছিলেন মমতাজ উদ্দীন। তার আগে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। খুবই ঠা-া মাথায় কোন ধরনের হঠকারিতায় না গিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আন্দোলনে যেমন ছিলেন সক্রিয় তেমনই দল পরিচালনায় ছিলেন দক্ষ। তার অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে তাকে কেন্দ্রীয় সদস্যের পদে অভিষিক্ত করেছিলেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছর ১৭ ফেব্রুয়ারি মমতাজ উদ্দিনের মৃত্যুর পর দলে বড় ধরনের শুন্যতা দেখা দেয়। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন সর্বজন শ্রদ্ধেয় বর্ষীয়ান নেতা ডাঃ মকবুল হোসেন। সততার দৃষ্টান্তে তিনি প্রজন্মের বাতিঘর। দলকে সামলে নিতে দ্রুত বগুড়ায় সম্মেলনের প্রস্তুতি নেন। বগুড়ায় ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর সম্মেলনের তিন বছর পর সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। তা না হয়ে সময় বয়ে যায়। অবশেষে নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পর পাঁচ বছরের মাথায় বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় এ বছর (২০১৯) ৭ ডিসেম্বর। এবারের সম্মেলনে সাধারণের বড় কৌতূহল ছিল- কে হবেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বগুড়ার প্রেক্ষাপটে একটা কথা চালু আছে- বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি (কথিত)! এই কথার একমাত্র উৎস সাবেক সামরিক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাড়ি বগুড়ার বাগবাড়ি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর বগুড়ায় যে প্রজন্ম বেড়ে ওঠে তাদের কাছে জিয়াকে উপস্থাপিত করা হয় নানাভাবে। এই প্রজন্মের কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সেভাবে উপস্থাপিত করা হয়নি। পরে যারা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে পরিবারের সদস্যদের কাছে থেকে এবং বই পড়ে জেনেছেন তাদের ভ্রান্ত ধারণা ভেঙ্গে যায়। প্রজন্মের তরুণ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে থাকে। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার এবং ২০০৮, ২০১৪ ও সর্বশেষ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তরুণদের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল তুলে ধরলে ভুল ভাঙতে থাকে। যে ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির কাছে এখন অনেক বড় দায়িত্ব বর্তেছে। কমিটির সভাপতি হয়েছেন মজিবর রহমান মজনু। তিনি ছিলেন সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তার বাড়ি বগুড়া থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলা সদরে। সাংগঠনিক তৎপরতায় দূরত্ব কোন বাধা হয়নি। তিনি তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী। স্নœাতক উত্তীর্ণ মজনুর কেরিয়ার- ২০০১ সালে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক থেকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হয়ে পরবর্তী বছরে সাধারণ সম্পাদকে নির্বাচিত হন। সেই থেকে ১৮ বছর ধরে তিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি দুইবার শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও ৫ বার পৌরসভার মেয়র ছিলেন। নতুন কমিটিতে তিনি প্রয়াত মমতাজ উদ্দিনের স্থলাভিষিক্ত হয়ে সভাপতির পদ পেলেন। দলকে কেমন পরিচালনা করবেন তা আগামী বলে দেবে। দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুর তারুণ্যদীপ্ত বর্ণাঢ্য জীবন দল পরিচালনায় সেনাপতির ভূমিকায় মজনুকে সাহস জোগাবে। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু অত্যন্ত মেধাবী। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। উচ্চমাধ্যমিকে ভাল ফলাফলে উত্তীর্ণ হওয়ার পর স্নœাতক ডিগ্রী লাভ করেন। রিপু তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে লালিত। গ্রামীণ জীবনে বেড়ে উঠে গ্রাম দেখেছেন। গ্রামের মানুষের পাল্স খুব ভাল বোঝেন। একইসঙ্গে শহুরে জীবনেও তিনি মানিয়ে নিতে পারেন। রাজধানীর ঢাকা কলেজে হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করে রাজধানীর সুর শুনেছেন, আয়ত্বে এনেছেন। তার বাড়ি বগুড়া নগরী থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে নামুজা ইউনিয়নের চিঙ্গাসপুর গ্রামে। তার বাবা মোঃ ওয়াজেদ আলী তালুকদার ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে থাকা স্নেœহভাজনে মানুষ। তিনি নামুজা ইউনিয়নের পাঁচবার চেয়ারম্যান ছিলেন। ইউনিয়নবাসী প্রতিবার তার সততার ও কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন করেছেন। তার ছেলে রাগেবুল আহসান রিপু বাবার অনুসারী হয়েছেন। জনপ্রিয়তায় তিনি যোগ্য বাবার যোগ্য সন্তানের পরিচয় দিয়ে গ্রামে ও শহরে সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। রিপু জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দল তাকে কৃতজ্ঞতার পুরস্কার দিয়ে এবারের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়েছে। এই বিষয়ে রাগেবুল আহসান রিপুর কথা শুনতে চাইলে বলেন ‘আপনাদের আশীর্বাদ আমার পথকে এগিয়ে নেবে। আপনারা দোয়া করবেন যে বড় দায়িত্ব আমার ওপর বর্তেছে তা যেন সুন্দরভাবে পালন করে দলের সম্মানকে এগিয়ে নিতে পারি।’ রিপু সম্পর্কে বগুড়ার সুধীজনের কথা ॥ ছেলেটি প্রচ- ট্যালেন্ট। যে কোন বিষয়ে কথা বলতে পারে। বিশেষ করে বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাস। তার প্রতিটি কাজ শুধু রাজনৈতিক নয় পরিচ্ছন্ন ডিপ্লোমেটিক। কখন কোথায় কি বলতে হবে কিভাবে বলতে হবে তা সে ভাল বোঝে। সততার দৃষ্টান্তে সে বাবার মতো। একজন অধ্যাপক বললেন, এতদিন আওয়ামী লীগের বিষয়ে যা শুনতাম রিপু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় তা পাল্টে গেছে। আশা করব সে (রিপু) বগুড়ার আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। টিআইবির বগুড়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি মাসুদুর রহমান হেলাল বললেন ‘রিপু আমার বাড়ির কাছেই থাকে। ওকে চিনি সেই ছোট থেকেই। রিপু সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর বগুড়ার মানুষ খুশি হয়েছে। এখন রিপুর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব আওয়ামী লীগকে সাধারণের মধ্যে নিয়ে গিয়ে উন্নয়নের ধরাকে সঙ্গে নিয়ে এই খুশিকে ধরে রাখা। আমরা আশা করব তার পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য রিপুকে এগিয়ে নেবে। রিপুর সামনে এখন অনেক বড় পরীক্ষা।’ আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে প্রয়াত সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের ছেলে মাসুদুর রহমান মিলনকে অর্থ বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। মিলন বগুড়া চেম্বারের সভাপতি, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও সিআইপি। দলের জন্য সে নিবেদিত কর্মী। বগুড়ার ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
×