ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

লালমনিরহাটে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন জহিরন

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩ অক্টোবর ২০১৯

  লালমনিরহাটে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন জহিরন

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ জহিরন বেওয়া। বয়স প্রায় ৯৫ বছর। তিনি দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে বাইসাইকেল চালিয়ে গ্রামের অসহায় মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এতটুকু উদ্যম, সাহস ও কর্মদক্ষতা কমেনি তার। অদম্য এই সংগ্রামী নারীর দরিদ্র মানুষের শান্তির আশ্রয় স্থল হয়ে উঠেছেন। জহিরণ বেওয়া মূলত একজন প্রশিক্ষিত ধাত্রী। দীর্ঘ জীবনে তার হাত দিয়ে গ্রামের শতশত মহিলার নিরাপদে সন্তান প্রসব করিয়েছেন। সেই সাথে গ্রামের সাধারণ দরিদ্র পরিবার গুলোকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন বিনামূল্যে। মানব সেবার মহৎ প্রাণ মানুষটি আদিতমারীতে যেন একজন মাদার থেরেসা। দিনরাত বাইসাইকেলে চেপে ছুটছেন মানব সেবায়। ব্যক্তিজীবনে কোন চাওয়া পাওয়া নেই। অসুস্থ্য মানুষের সেবাই করা যেন তার ধ্যানজ্ঞান হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানব সেবায় ছুটে চলছে গ্রামের পথে পথে। বাড়ি বাড়ি। জহিরন বেওয়ার বাড়ি লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের ভারত সীমান্ত ঘেঁষা তালুক দুলালী গ্রামে। স্বামী সায়েদ আলী মারা গেছেন ১৯৬৮ সালে। স্বামীর অকালমৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়েনি এই সংগ্রামী নারী। শোককে শক্তিতে পরিনিত করেছেন। সময় পাড় করেছেন অসুস্থ মানুষের সেবা করে। দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে। এখন জীবনের শেষ প্রান্তে এসে শারীরিক ও মানুষিকভাবে আরো দৃঢ়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবনের শেষ নিঃস্বাষ পর্যন্ত মানুষের কল্যানে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাবেন জহিরন বেওয়া। সংগ্রামী এই নারীর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে সংসার। আট বছর আগে বড় ছেলে দানেশ আলী ৬৮ বছর বয়সে মারা যান। ছোট ছেলে তোরাব আলীর বয়স ৫৯। ৯৫ বছর বয়সেও সংসারে এই সংগ্রামী নারী এখনো সচল, সজাগ আর কর্মউদ্যমী হয়ে বেঁচে আছেন। বাইসাইকেল চালিয়ে ছুটছেন গ্রামের পথে পথে। প্রতিদিন প্রায় ৭০টি বাড়িতে তিনি যান। কোন অসুস্থ মানুষ আছে কিনা খোঁজ খবর নেন। এ বয়সে তার বাড়ির বারান্দায় কিংবা কোনো গাছের ছায়ায় বসে নাতি-নাতনিদের গল্প শোনানোর কথা। কিন্তু তিনি প্রতিদিন ছুটে বেড়াচ্ছেন গ্রামের পর গ্রাম মাইলের পর মাইল। কারো অসুস্থতার সংবাদ পেলেই নাওয়া-খাওয়া ভুলে বাইসাইকেলে চড়ে ছুটে যান। সেই রোগীর বাড়িতে । চিকিৎসা সেবা দিতে। বর্তমান সরকারের আমলে তুলনামূলক গরিব মানুষ ভালো আছে। মানুষের আয় রোজগার বেড়েছে। চোখের সামনে দেশের ও দেশের মানুষের উন্নয়ন দেখে যেতে পারলাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মাহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে। দেশকে স্বাধীন করেছে। তার সুযোগ্য মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল করছে। তার হাত ধরে দেশ আজ অর্থনৈতিক মুক্তি পাচ্ছে। গ্রাম হচ্ছে শহর । রোগাক্রন্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় এখন কেউ থাকছেনা । এটা দেখে যেতে পারলাম, এটাই আমার শান্তনা। এ জীবনে কিছুই চাই না। শুধু সুস্থ্য থাকতে চাই।
×