ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সফলতা অর্জনকারীদের পুরস্কারের বদলে তিরস্কার

বরিশালে মাদক বিরোধী অভিযানে আগ্রহ হারাচ্ছে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২৬ মে ২০১৮

বরিশালে মাদক বিরোধী অভিযানে আগ্রহ হারাচ্ছে পুলিশ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও বরিশালের অধিকাংশ থানার ওসি ও এসআই’দের এ অভিযান নিয়ে তেমন একটা আগ্রহ নেই। উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের মনজয় করতে প্রায় প্রতিদিনই হাতেগোনা কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী কিংবা সেবীদের গ্রেফতার করা হলেও অতীতের অভিজ্ঞতায় পুরস্কারের বদলে তিরস্কার পাওয়ায় বড় বড় অভিযান নিয়ে তেমন কোন মাথা ঘামাচ্ছেননা বিভিন্ন থানার ওসি থেকে শুরু করে চৌকস এসআই-রা। ফলে এখনও মাদকের বড় বড় ডিলার কিংবা গডফাদার রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এনিয়ে জনকন্ঠের বিশেষ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সূত্রমতে, বরিশাল নগরীসহ জেলার দশ উপজেলা ও ছয় পৌরসভার প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ড, ৮৬টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি অলিগলিতে রয়েছে মরননেশা ইয়াবার একক আধিপত্য। বরিশালের ছোট থেকে বড়, তরুণ ও বৃদ্ধ সকলের কাছেই ইয়াবা যার অপর উচ্চারন ‘বাবা’ নামটি বিশেষভাবে পরিচিত। এ অঞ্চলের মাদকসেবীদের কাছে তাদের জন্মদাতা ‘বাবা’র চেয়ে এই বিশেষ ‘বাবা’র প্রতিই যেন ভক্তি শ্রদ্ধা বেশি। দিনে একবার হলেও তাদের অবশ্যই বাবার সান্নিধ্য চাই-ই-চাই। আর তা না হলে নাকি মাদকসেবীদের দিন শুরু কিংবা রাত শেষ হয়না। এ ভয়ঙ্কর ‘বাবার’ আসল নাম ইয়াবা। অন্য যেকোনো মাদকদ্রব্যের তুলনায় বরিশালে ইয়াবার জনপ্রিয়তা সবার উপরে। ফলে বরিশালে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মরন নেশা ইয়াবা। এখানে ফেনসিডিল, হেরোইন, মদ, বিয়ার, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকের বিস্তার থাকলেও ইয়াবার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে গোটা বরিশাল। প্রাণঘাতী ইয়াবায় সয়লাব হয়ে গেছে গোটা জেলা। ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন-শ্রেণির লোকজন এমনকি নারীদেরও অনেকে এ নেশায় আসক্ত হয়ে পরেছে। ফলে জেলার প্রতিটি উপজেলায় একপ্রকার প্রকাশ্যেই চলে ইয়াবার রমরমা বাণিজ্য। জেলার সহস্রাধীক যুবক ভ্রাম্যমাণ ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, একটি চক্র বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝেও ইয়াবা ছড়িয়ে দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এ ব্যবসার সাথে রাজনৈতিক দলের অনেকেই জড়িত রয়েছে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয়ধারীরা ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে বলেও সূত্রগুলো দাবি করেছেন। ফলে ইয়াবার ভয়াবহ থাবায় যুব সমাজ হচ্ছে ক্ষতবিক্ষত। কলেজ ছাত্রীসহ চার তরুনী আটক ॥ ইয়াবার নেশায় আশক্ত হয়ে খরচ বহন করতে স্কুল-কলেজের কতিপয় ছাত্রীরা বেঁছে নিয়েছে মাদক ব্যবসার পথ। কলেজ ছাত্রীসহ এমনই চার তরুনীকে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি মধ্যরাতে আটক করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। বরিশাল নগরীর অমৃত লাল দে সড়ক (হাসপাতাল) রোডের অষ্টোকোনা মন্দির সংলগ্ন ‘মায়া কানন’ বাড়ি থেকে নগরীর কাশিপুর স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী হাদিয়া চৌধুরী মুনা, কলেজ এভিনিউ লেচুশাহ সড়কের বাসিন্দা দুলাল বাড়ৈর কন্যা বৃষ্টি বাড়ৈ, নলছিটি উপজেলার বাসিন্দা আব্দুল জলিল হাওলাদারের কন্যা নুসরাত জাহান নিশাত ও একই উপজেলার বাসিন্দা জামাল হোসেনের কন্যা ইসরাত জাহান ইভাকে আটক করে কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ। আটককৃতরা মাদকাসক্ত ছাড়াও ইয়াবা বিক্রির সাথে জড়িত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পুরস্কারের বদলে তিরস্কার ॥ দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত ইয়াবার আমদানিকারক মানিক মাঝি। তার গ্রামের বাড়ি জেলার গৌরনদী উপজেলার কটকস্থল গ্রামে। সে ওই গ্রামের মজিবুর রহমান ইঙ্গুল মাঝির পুত্র। বরাবরেই থানার বড়কর্তাকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে মহাদাপটের সাথে ইয়াবার পাইকারী ব্যবসা করে আসছে মানিক মাঝি। তার অধীনে রয়েছে প্রায় শতাধিক পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা। মানিক মাঝির মাদকের আস্তানায় তার নিরাপত্তার জন্য রয়েছে অবৈধ অস্ত্র। বর্তমানে ক্রসফায়ার আতংকে ইয়াবা ডিলার মানিক মাঝি পাশ্ববর্তী কালকিনি উপজেলায় ও তার ভাই ইয়াবার পাইকারী বিক্রেতা হিরা মাঝি নারায়নগঞ্জে আত্মগোপন করেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। গত বছরের ২৯ মার্চ রাতে বিপুল পরিমান ইয়াবাসহ জেলা ডিবি পুলিশ মানিক মাঝির ভাই পাইকারী ইয়াবা বিক্রেতা হিরা মাঝিকে তার দুই সহযোগীসহ গ্রেফতার করে। হিরা মাঝি ও তার সহযোগীরা তৎকালীন গৌরনদী মডেল থানার ওসিকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় একচেটিয়া মাদক ব্যবসা করে আসছিলো। ৩০ মার্চ সকালে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ইয়াবার পাইকারী বিক্রেতা হিরা মাঝি ও তার সহযোগীরা স্বীকারোক্তি প্রদান করে। এ অভিযোগের ভিত্তিতে তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপার তাৎক্ষনিক গৌরনদী থানার ওসিকে প্রত্যাহার করে নেন। পরবর্তীতে গৌরনদীকে শতভাগ মাদকমুক্ত করার প্রত্যয়ে ওই বছরের ২ এপ্রিল গৌরনদী মডেল থানায় নতুন ওসি হিসেবে যোগদান করেন ফিরোজ কবির। সূত্রমতে, মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার জন্য ওইসময় স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ নবাগত ওসি ফিরোজ কবিরকে নির্দেশ দেন। ফলশ্রুতিতে মাত্র একমাসের ব্যবধানে ওসি ফিরোজ কবির মাদক বিরোধী সাড়াশী অভিযান পরিচালনা করেন। এক মাসেই তিনি (ফিরোজ কবির) দক্ষিণাঞ্চলের প্রভাবশালী ইয়াবা ডিলার মানিক মাঝি ও পাশ্ববর্তী কালকিনি উপজেলার প্রভাবশালী ইয়াবা সম্রাট গিয়াস উদ্দিন নলিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তকমা লাগিয়ে দীর্ঘদিন মাদকের সাথে যুক্ত থাকা ১২৮জন মাদক বিক্রেতা ও সেবীকে গ্রেফতারের পাশাপাশি উদ্ধার করেন বিপুল পরিমান ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে মাদকের স্বর্গরাজ্য হিসেবেখ্যাত গৌরনদী উপজেলায় মাদকের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে মাত্র চার মাসের ব্যবধানে শতকরা আশিভাগ সফলতা অর্জনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ওসি ফিরোজ কবিরকে ‘মাদার তেরেসা’ স্বর্ণ পদক দেয়া হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তারা জনকন্ঠকে বলেন, তৎকালীন সময় বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শেখ মোঃ মারুফ হাসান বিপিএম বিভাগের বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার ও থানার ওসিদের উপমা দিয়ে বলতেন, গৌরনদী মডেল থানার ওসি ফিরোজ কবিরের মতো সকলের মাদক বিরোধী কর্মকান্ডে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এরইমধ্যে রেঞ্জ ডিআইজি মারুফ হাসান অন্যত্র বদলী হয়ে যাবার পরেই রহস্যজনক ভাবে কোন কারণ ছাড়াই চার মাসের ব্যবধানে ওসি ফিরোজ কবিরকে গৌরনদী মডেল থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এ যেন একপ্রকার পুরস্কারের বদলে নিজ বাহিনী থেকে তিরস্কার পেয়েছেন ওসি ফিরোজ কবির। পরবর্তীতে কারাগারে থাকা মাদক বিক্রেতারা জামিনে বেরিয়ে ফের মাদকের স্বর্গরাজ্য গৌরনদী থেকে নিয়ন্ত্রন করে গোটা বরিশাল। সচেতন গৌরনদীবাসী ওপেন হাউজ ডে সহ বিভিন্ন সভায় মাদক নিমূর্লে ওসি ফিরোজ কবিরকে পূর্ণরায় গৌরনদী থানায় পোস্টিং দেয়ার জন্য বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে একাধিকবার দাবি জানিয়েও কোন সুফল পাননি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গৌরনদীতে সর্বপ্রথম ২০১১ সালে মাদকের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম পিপিএম। ওই বছরের ২৭ এপ্রিল নিজের জীবন বাঁজি রেখে চৌকস ওসি নুরুল ইসলাম (বর্তমানে মহানগরীর কাউনিয়া থানার (ওসি) পালরদী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে স্প্রীডবোর্ড বোঝাই বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্যসহ পাঁচ বিক্রেতাকে আটক করে এলাকায় ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। বেশ স্বল্প সময়ে মাদক নির্মূলে ওসি নুরুল ইসলামও সফলতা অর্জন করার কয়েকদিনের মধ্যে তাকেও এখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। একইভাবে উজিরপুর মডেল থানার ওসি গোলাম সরোয়ার মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ায় তাকেও অন্যত্র বদলী করা হয়। যেকারণে কোন ওসির সময়েই মাদকের গডফাদার পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এসব কারণেই জেলার অধিকাংশ থানার ওসি থেকে শুরু করে চৌকস এসআই’রা বদলী কিংবা প্রত্যাহারের আশংকায় এখন আর মাদকের বড় বড় অভিযান নিয়ে তেমন কোন মাথা ঘামাচ্ছেন না। মাদক বিক্রিতে বাঁধা দেয়ায় দুই খুন ॥ মাদক বিক্রিতে বাঁধা দেয়ায় ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর গৌরনদী নন্দনপট্টি গ্রামের খাদেম সরদারকে (৬০) কুপিয়ে হত্যা ও তার ছোট পুত্র আসলাম সরদারকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে একই গ্রামের প্রভাবশালী মাদক স¤্রাট নান্নু মৃধা ও তার সহযোগীরা। নান্নু ওই গ্রামের মৃত সফিউদ্দিন মৃধার পুত্র। অতিসম্প্রতি আদালত ওই মামলায় নান্নু মৃধাকে ফাঁসির আদেশ ও তার সহদর সেন্টু মৃধাসহ দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় ঘোষণা করেন। বর্তমানে নান্নু ও সেন্টু মৃধার স্ত্রী তাদের স্বামীর ব্যবসা (মাদক) আকড়ে রেখেছেন। ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট গৌরনদীর দক্ষিণ পালরদী গ্রামের মাদক স¤্রাট নুর ইসলাম বেপারীর পুত্র মাদকসহ ২২টি মামলার অন্যতম আসামী মাদক বিক্রেতা রাসেল বেপারী ও তার সহযোগী রিংকু সরদার আগৈলঝাড়ার শিহিপাশা গ্রামে মাদক বিক্রি করতে গিয়ে জনতার রোষানলে পরে। ওইসময় এলাকাবাসীর গণপিটুনীতে রাসেল নিহত হয়। এ ঘটনায় রাসেলের মা বাদী হয়ে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাদের নামে একটি হয়রানীমূলক মামলা দায়ের করেন। উল্লেখযোগ্য মাদক বিক্রেতা ॥ সম্প্রতি সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার ও তালিকা সূত্রে জানা গেছে, মাদকের স্বর্গরাজ্য গৌরনদীতে মাদকের আমদানিকারক কটকস্থলের মানিক মাঝি ও হিরা মাঝির অধীনে পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলো, একই এলাকার রাসেল, মাঈনুল ঘরামী। সাউদেরখালপাড় গ্রামের জাবেদ সরদার ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগম। দক্ষিণ পালরদীর কাওসার খান, নুর ইসলাম বেপারী, কসবার রাজিব, বিদেশী খালেক, কালা চাঁন খান, নাঈম, দুলাল, রানা, জসিম ও আরিফ। গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড ও বন্দরে প্রটকল মুরাদ, বিপ্লব, মাহাবুল খান। দাসবাড়ি এলাকায় নুরু, মহসিন, বাদল সিকদার। চাঁদশীতে রাসেল, জুয়েল। রামেরপাড় এলাকায় মনির হোসেন। মোল্লাবাড়ি এলাকায় রুবেল, নয়ন। টরকীতে মাহাবুবুর রহমান কুট্টি, আকতার হোসেন, ছমিল, বাবলু, বড়মাছুম, নুর ইসলাম, ফরিদ, রায়হান, দেলোয়ার, হানিফ, খলিল। দক্ষিণ বিজয়পুর হিজলতলায় রুবেল সরদার। মদিনাস্ট্যান্ডে বল্লা আরিফ। উত্তর গেরাকুল গ্রামের বাবু মাতুব্বর। এছাড়া জেলার নদীবেষ্টিত মুলাদী উপজেলা বাটামারা ইউনিয়নে দাপটের সাথে মাদক বিক্রি করে আসছে সেলিমপুর গ্রামের আনু হাওলাদারের পুত্র রিপন হাওলাদার। ছবিপুর ইউনিয়নের চরমালিয়া গ্রামের মালেক সরদারের পুত্র রাজিব তার সহদর রাহাত, চাচাতো ভাই সোহেল সরদার, বোন মিনারা, মুক্তা বেগম, তার বোন জামাতা রিপন, স্থানীয় জাকির ও জহির আকন। সফিপুর আমানতগঞ্জ বাজার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মৃত আলী ঘরামীর পুত্র সাহাবুদ্দিন। মহাদাপটের সাথে ইয়াবার রমরমা ব্যবসা করে গত কয়েক বছরে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া রাজিব সরদার ইতোমধ্যে ঢাকার নবীনগর ও গাজীপুরে দুইটি বিলাসবহুল বাড়ির মালিক হয়েছেন। বাকেরগঞ্জের দাঁড়িয়ালে রয়েছে একটি শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট চক্র। ওই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ করছে আবুয়াল লিমন, নান্নু হাওলাদার ও সবুজ নামের তিন মাদক ব্যবসায়ী। বাকরকাঠী এলাকার আব্দুল আজিজ ও আবুল কালাম। বানারীপাড়া উপজেলার শীর্ষ ১০ মাদক ব্যবসায়ীরা হলো-সলিয়াবাকপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হেমায়েত উদ্দিনের ভাই মাঈন উদ্দিন, পৌর ছাত্রদলের সভাপতি তুহিন মৃধা, পৌর যুবদলের বহিঃস্কৃত যুগ্ম আহবায়ক সিরাজ ফকির, ল্যাংড়া সোহেল, প্যাচা কামাল, ইয়ার হোসেন, জামাল হোসেন, সোহেল মোল্লা, মজিবর রহমান ও রুবেল। আগৈলঝাড়া উপজেলার ফুল্লশ্রী গ্রামের বাসিন্দা এক উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার ছোট ভাইয়ের অধীনে রয়েছে অর্ধশতাধিক মাদক বিক্রেতা। ক্ষমতাসীন দলের তকমা লাগিয়ে বরিশাল সদর, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও বাবুগঞ্জ উপজেলায়ও রয়েছে মাদকের শক্ত সিন্ডিকেট। প্রশাসনের বক্তব্য ॥ নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্ভরযোগ্য একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের এক সময়ের চরপন্থী থেকে শুরু করে পেশাগত অপরাধীরা যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো তাদের অধিকাংশই গত কয়েক বছরে ইয়াবার ব্যবসা ও বহন করে এখন লাখ লাখ টাকা গুনছে। মাদকের ডিলাররা লাখ পেরিয়ে এখন নামে-বেনামে কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করে রাজনৈতিক দলের তকমা লাগিয়ে বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পরেছে। একসময়ের পেশাগত চরমপন্থী ও অপরাধীরা ইয়াবার ব্যবসা করে কাঁড়িকাঁড়ি টাকার মালিক হওয়ায় এলাকায় সামাজিক বিচার ব্যবস্থায়ও তারা আধিপত্য বিস্তার করে ‘কুচ পরোয়া নেহি’ ভাব দেখিয়ে জীবনযাপন করছে। জেলার অধিকাংশ ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরাও মাদক ব্যবসা কিংবা সেবনে নিজেদের জড়িয়ে রেখেছেন।
×