ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় পরিষদ (পিসিসি) সোমবার দেশটির কর্তৃপক্ষকে (পিএ) ইসরাইলকে দেয়া স্বীকৃতি স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছে। ইসরাইল স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি না দিলে, ১৯৬৭ সালে দখল করা পূর্ব জেরুজালেম না ছাড়লে ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি নির্মাণ বন্ধ না করা পর্যন্ত ইহুদী রাষ্ট্রটিকে স্বীকৃতি বাতিলের সুপারিশ করেছে পিসিসি। এএফপি, টাইমস অব জেরুজালেম ও আল মনিটর।
পিএ’র দুই দিনব্যাপী বৈঠকে চূড়ান্ত ঘোষণায় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কাছে ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের নিরাপত্তা সহযোগিতা বন্ধ ও প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসারও দাবি জানিয়েছে। ১৯৯৩ সালের ইসরাইল-ফিলিস্তিন অসলো শান্তি চুক্তির সংযোজন হিসেবে পরের বছর ২৯ এপ্রিল দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করতে প্যারিস চুক্তি করা হয়েছিল। পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত প্রতিনিধিরা বলেন, অসলো চুক্তির আওতায় ফিলিস্তিনীদের সব প্রতিশ্রুতি অকার্যকর হয়ে গেছে। পশ্চিম তীরের শহর রামাল্লায় রবিবার বৈঠকের প্রথম দিন পিএলও’র ৮৬ নেতাকর্মীর সামনে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস আগুনঝরা বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, পিএলও ও পিএ একটা মারাত্মক সন্ধিক্ষণ পার করছে। ১৯৪৮ ও ১৯৬৭ সালে যে ভুল করেছিলাম, আমরা এবারও সেই ভুল করতে পারি না। আমরা গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছি। আমাদের ভবিষ্যত ঝুঁকির মধ্যে। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অখ- জেরুজালেমকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর স্বীকৃতি দেয়ার প্রেক্ষাপটে পিসিসি’র এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিসিসি’র সিদ্ধান্ত এখন পিএলও’র নির্বাহী কমিটির সামনে তুলে ধরা হবে। তারাই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ক্ষমতা রাখেন। এদিকে ইসরাইলের এক নিরাপত্তা সূত্র জানায়, ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ ইসরাইলকে এখনও জানায়নি যে নিরাপত্তা সহযোগিতা ঝুঁকিতে রয়েছে। আব্বাস ও পিএলও প্রতিনিধিরা ভাল করে জানেন যে তাদের সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব না। অন্যান্য সিদ্ধান্ত থেকেও তারা এক সময় নিজেদের গুটিয়ে নিবেন। ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থার (পিএলও) সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা পিসিসি’র সুপারিশ বাস্তবায়ন করা বাধ্য কিনা; তা পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস নিবেন। এর আগে ২০১৫ সালে ইসরাইলের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাতিলে পিসিসি’র প্রস্তাব বাস্তাবায়ন হয়নি। হোয়াইট হাউসের প্রস্তাবকে শতাব্দীর চপেটাঘাত আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন আব্বাস। তিনি বলেন, ট্রাম্পের অবস্থান এটাই প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিনের শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতার দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। ফিলিস্তিনীরা পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যত রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দেখতে চান।
২০১৪ সালে স্থগিত হওয়ার পর ইসরাইল-ফিলিস্তিনকে শান্তি আলোচনায় ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। কিন্তু রবিবার বৈঠকের শুরুতে আব্বাস বলেন, আমরা ট্রাম্পকে ‘না’ বলেছি। আমরা তাদের প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছি না। আব্বাস যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে শান্তি আলোচনার জন্য আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীর আহ্বান জানান। আব্বাসের পররাষ্ট্র নীতি ও অহিংস আন্দোলন পুরো ব্যর্থ হয়েছে। পিসিসি মূলত ফিলিস্তিনী জনগণের সমর্থনের জন্য এসব সুপারিশ করেছে। অসলো চুক্তিতে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শেষে ফিলিস্তিনী রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু গত চব্বিশ বছর শেষে বর্তমানে এসে এ রকম কোন উদ্যোগ দূরাশা ছাড়া কিছু না। ফিলিস্তিনের তরুণ প্রজন্ম এক ধরনের হতাশা থেকেই ফাতাহ আন্দোলনের ঘেঁষতে চাচ্ছেন না। ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, ওয়াশিংটনের সমালোচনা ও ইসরাইলের সঙ্গে ইহুদীদের সম্পর্ক অবমূল্যায়ন করে প্রেসিডেন্ট আব্বাস ইসরাইলের সুবিধা করে দিয়েছেন। তিনি সব সময় যা বলেন, বৈঠকে তার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। যে কোন সীমান্তে ইসরাইল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যানই হচ্ছে সংঘাতের মূল কারণ। নয়াদিল্লীতে সফররত নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনীরা যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আর কোন মধ্যস্থতাকারীকে খুঁজে পাবেন না।