ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

খেলাপী ঋণ পরিস্থিতি প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় ভালো ॥ ফরাসউদ্দিন

প্রকাশিত: ০২:০৮, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

খেলাপী ঋণ পরিস্থিতি প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় ভালো ॥ ফরাসউদ্দিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশের খেলাপী ঋণ পরিস্থিতি প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় এখনো ভালো অবস্থানে আছে। বর্তমানে এ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, সেটির সমাধানও খুব কঠিন কিছু নয়। এজন্য পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ীই দেশে ব্যাংকিং খাতের সম্প্রসারণ হয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা (ক্যাপাসিটি) সেই তুলনায় অর্ধেকও বাড়েনি। বুধবার সরকার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনের (রিসার্চ অ্যালমানাক) উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান। উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. কেএএস মুর্শিদ। অনুষ্ঠানে ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, গত ৪৭ বছরে বাংলাদেশের গর্ব করার মতো অনেক অর্জন আছে। ‘৭২ সালের ৩ বিলিয়নের জিডিপি এখন ২৫০ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় ১২৯ ডলার থেকে এখন ১ হাজার ৬১০ ডলার হয়েছে। এটা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব। বিবিএসের এই হিসাবকে অনেকে কটাক্ষ করেন। যদিও ইকোনমিস্টের হিসাবে আমাদের মাথাপিছু আয় আরও বেশি, ১ হাজার ৬৩৮ ডলার। তিনি বলেন, যাদের কাছ থেকে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম, সেই পাকিস্তানের সঙ্গেও আমাদের উন্নতির ব্যবধান স্পষ্ট। পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি সাড়ে তিন থেকে ৪ শতাংশ, মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৫৭০ ডলার। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন সূচকে আমরা তাদের থেকে এগিয়ে আছি। সাবেক এই গবর্নরের মতে, বাংলাদেশের আগামীর পথচলা কঠিন হবে। তবে সম্ভাবনাও আছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেশের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলেও তিনি মনে করেন। অবশ্য এজন্য কিছু চ্যালেঞ্জও বাংলাদেশকে মোকাবেলা করতে হবে। এগুলো হলো ক্রমবর্ধমান বৈষম্য কমিয়ে আনা, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, শিল্পায়ন এবং রফতানিতে বহুমুখীকরণ করতে হবে। এছাড়া বিদ্যুত খাতের নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে রাখা, ই-কমার্স খাতকে করের আওতায় আনা, পাট শিল্পের প্রতি মনোযোগ দেয়া এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটকে (বিএসটিআই) আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মসিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি নিঃসন্দেহে অনেক গৌরবের। কিন্তু এ অর্জন ধরে রাখতে হলে প্রশাসন, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা-বাণিজ্যকে অধিকতর জ্ঞাননির্ভর হওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে আমাদের এখানে ব্যবহারকি জ্ঞানের প্রয়োগ কম হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে রেগুলেটরি কমিশন অনেক আছে। কিন্তু সেগুলোর ক্ষমতা প্রয়োগের দক্ষতা বাড়ানো উচিত। সাময়িক লাভের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদে কীভাবে লাভবান হওয়া যায় সেই অর্ন্তদৃষ্টি প্রতিটি রেগুলেটরি কমিশনের থাকা উচিত। উদাহরণ হিসেবে তিনি মোবাইলের তরঙ্গ নিলামের ক্ষেত্রে এককালীন বেশি দর হাঁকানোর পরিবর্তে তরঙ্গ বরাদ্দের পর কি কি বিনিয়োগ সুবিধা-অসুবিধা সৃষ্টি হবে সেগুলো বিবেচনায় নেয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আমাদের কর ব্যবস্থাপনাকে ক্রুটিমুক্ত করতে হবে। কর আরোপ যদি বিনিয়োগ ও সঞ্চয় নিরুসাহিত করে তাহলে জাতীয় আয় বাড়বেনা। তাছাড়া প্রবাসী আয় কিভাবে বিনিয়োগে আনা যায় সেটি ভাবতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এম সাইদুজ্জামান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন। এগুলো হলো- নতুন নতুন রফতানি বাজার সৃষ্টি, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে রেমিট্যান্স প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা, মধ্যম ও উচ্চ আয়ের দেশ হওয়ার জন্য নীতি নির্ধারণের চ্যালেঞ্জ, বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বাড়ানো, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প সহ সার্বিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি। তার মতে, ঔষধ, চামড়া, আইসিটি,কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, ট্যুরিজম, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন শিল্প রপ্তানিতে নজর দিতে হবে। দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের ছয়টি সেশনে এবার মোট ২২টি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। বুধবার উদ্বোধনী অধিবেশনের পর দিনব্যাপী তিনটি টেকনিক্যাল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এসব অধিবেশনে বিআইডিএস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা কৃষি, শ্রম ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে মোট ১১টি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
×