ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সিডরে নিখোঁজরা ফিরে আসছে

প্রকাশিত: ০১:১৪, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

সিডরে নিখোঁজরা ফিরে আসছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা ॥ সিডরের দশ বছর পরে ফিরে এলেন তালতলী উপজেলার তেতুঁলবাড়ীয়া গ্রামের জেলে হানিফ গাজী। ছেলেকে পেয়ে বাবা মোনসের গাজী খুশি। তাকে দেখতে এলাকার শত শত কৌতুহলী মানুষ বাড়ীতে ভীর করেছে। জানাগেছে, সিডরের পাঁচ দিন পূর্বে উপজেলার তেতুঁলবাড়ীয়া গ্রামের নুরু সিকদারের ট্রলারে পনের জন জেলে সাগরে মাছ ধরতে যায়। সিডরের তিন দিন পূর্বে ওই ট্রলারের মেশিন বিকল হয়। এ সময় তেতুঁলবাড়িয়ার ছয় জেলে অপর একটি ট্রলারে করে কিনারে আসে। সিডরের দিন রাতে সাগরের প্রচন্ড ঢেউয়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। এ সময় ট্রলারে থাকা সকল জেলে নিখোঁজ হয়। এরা ছিল পাথরঘাটা উপজেলার বাইনচটকি ও কালিরচর গ্রামের বাসিন্দা। ওই নিখোঁজের তালিকায় ছিল তেঁতুলবাড়ীয়া গ্রামের ১৯ বছরের হানিফ গাজী। অনেক খোঁজাখুঁজির করেও হানিফের সন্ধান পায়নি। তাকে না পেয়ে পরিবারের লোকজন ভেবে ছিল হানিফ আর বেঁচে নেই। হানিফ বেঁচে নেই ভেবে সিডরের দুই বছর পরে তার স্ত্রী আসমা বেগম বরগুনায় বিয়ে করেন। গত পনের দিন ধরে তেতুঁলবাড়িয়া ও জলায়ভাঙ্গা এলাকায় হানিফ মানষিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ঘোরাফেরা করছিল। শনিবার বিকেলে হানিফের মেঝ ভাই শুক্কর গাজীর সাথে তেঁতুলবাড়িয়া বাজারে তার দেখা হয়। ওই সময় সে হানিফকে ভাত খাওয়ানোর জন্য বাড়ীর মধ্যে ডেকে নেয়। বাড়ীর মহিলারা তাকে দেখে সনাক্ত করে। এ সময় হানিফের বাবা মেনসের গাজী বাড়ীতে ছিলেন না। খবর পেয়ে বাড়ীতে এসে বাবা ছেলেকে দেখে প্রথমে চিনতে পারেনি। পরে ছেলের নাভির ওপর পোড়া এবং পিঠে কালো দাগ দেখে নিশ্চিত হন এই তার হারিয়ে যাওয়া ছেলে হানিফ। ছেলেকে চিনতে পেরে বাবা তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। কিন্তু হানিফ বাকরুদ্ধ। সে তেমন কথা বলতে পারেনা। শুধু সকলের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। তবে বাবার নাম একটু একটু বলতে পারে। অবাক করে অলৌকিকভাবে হানিফ গ্রামে ফিরে আসায় পরিবার ও এলাকার মানুষ আনন্দিত। তেতুঁলবাড়ীয়া গ্রামের হানিফের প্রতিবেশী জসিম প্যাদা বলেন গত পনের দিন ধরে হানিফ তেতুঁলবাড়ীয়া ও জলায়ভাঙ্গায় মানষিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ঘোরাফেরা করছিল। শনিবার বিকেলে হানিফকে ভাত খাওয়ানোর জন্য তার ভাই শুক্কর গাজী বাড়ীতে ডেকে নেয়। এ সময় ওই বাড়ীর মহিলারা দেখে তাকে চিনতে পারে। পরে বাবা এসে তাকে সনাক্ত করে। তিনি আরো বলেন হানিফ বাড়ী ফিরে এসেছে এ খবর শুনে শত শত লোক হানিফকে দেখতে আসে। হানিফের বাবা মেনসের গাজী কেঁদে বলেন “মুই মোর হারাইন্না পোলা দশ বচ্ছর পরে ফিররা পাইছি। মোর আর আল্লার কাছে কিছুই চাওয়ার নেই। কিন্তু মুই গরিব মানু কি দিয়া মোর পোলারে চিহিসা হরামু” হানিফের চাচা মোসলেম গাজী বলেন ওই সিডরে হারিয়ে যাওয়া ভাইয়ের ছেলে হানিফ। হানিফ মানষিক ভারসাম্যহীন। দু’একদিন পরে চিকিৎসার জন্য বরিশাল নিয়ে যাব। তিনি আরো বলেন ওর মা নেই, বাবা গরীব মানুষ। ওকে চিকিৎসা করানোর মত টাকা ওর বাবার নেই। তাই ওকে দেখাশুনা করার সকল দায়িত্ব আমি নিয়েছি। উল্লেখ সিডরের তিন দিন পূর্বে সাগরে ধানশি কাটতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া আমতলীর ঘটখালী গ্রামের এনসান আলীর ছেলে সোহেল (২৮) এ বছর জুন মাসে সাড়ে নয় বছর পরে বাড়ীতে ফিরে আসে। সেও বাকরুদ্ধ। তেমন কথা বলতে পারেনা। কোথা থেকে বিভাবে এসেছে কেউ কোন হদিস পাচ্ছে না। এভাবে এক এক জন অলৌকিক ভাবে ফিরে আসায় মানুষের মাঝে কৌতুহল দেখা দিয়েছে। নিখোঁজ সোহেল ফিরে আসার পরে পরিবারের লোকজন চিকিৎসা করালেও কোন কাজে আসছে না। সে বাকরুদ্ধ অবস্থায়ই রয়েছে।
×