ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত অসাধু আড়ৎদার ও ফড়িয়াদের সিন্ডিকেট দমন করেছে সরকার

প্রকাশিত: ০১:১০, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

খাদ্য মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত অসাধু আড়ৎদার ও ফড়িয়াদের সিন্ডিকেট দমন করেছে সরকার

সংসদ রিপোর্টার ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, খাদ্য মূল্য বৃদ্ধি করে জনজীবনে হয়রানী সৃষ্টিকারক অসাধু আড়ৎদার ও ফড়িয়াদের সিন্ডিকেট দমন করতে সরকার সক্ষম হয়েছে। এই ধরণের সিন্ডিকেট না থাকার ফলে দীর্ঘ দিন যাবত ভোক্তা সাধারণ সহনীয় মূল্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ক্রয় করতে পারছে। এছাড়া বাজারে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরণের সিন্ডিকেট গড়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে কাজ করার জন্য সরকার প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করেছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, সরকারের নির্দেশে সারাদেশে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ গোয়েন্দা সংস্থার গোপনীয় প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আড়ৎদার ও ফড়িয়াদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ জানান, চাল আমদানীর ওপর কোন সময়ই শুল্ক ছিল না। কৃষকরা চালের ন্যায্য মূল্য পায় না এটা বলে তখন সরকারের কাছে শুল্ক আরোপের দাবি আসলো। তখন আমরা শুল্কারোপ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। ২৮ ভাগ পর্যন্ত শুল্কারোপ করেছিলাম। এতে কৃষক খুশি হয়েছিল, তারা ন্যায্য মূল্য পেয়েছে। এইবার হাওড়ে ও উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় যে টার্গেট ছিল তার থেকে ২০ লাখ টন চাল ঘাটতি দেখা যায়। তিনি বলেন, বন্যার কারণে উৎপাদন কম হয়েছে এটা বিদেশীরা জানতে পেরে তারা চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। এরপর আমরা শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেই। প্রথমে ১০ ভাগ হ্রাসের পরও না হওয়ায় আরও ১৬ ভাগ কমিয়ে এখন মাত্র ২ ভাগ শুল্ক রাখা হয়েছে। এখন চালের দাম স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। মন্ত্রী আরও জানান, শুল্ক হ্রাসের পর তা কার্যকর করতে ১৫ দিন সময় লেগে যায়। এই সময় আমদানী করার চালের ট্রাক অসাধু ব্যবসায়ীরা বর্ডারে অপেক্ষায় রাখে। শুল্ক হ্রাস হলেই আমদানী করে লাভবান হবে এই আশায়। এরপর মিডিয়াতে আকস্মিক খবর এলো ভারত চাল রফতানি করবে না বাংলাদেশে। এই একটা মিথ্যা সংবাদে চালের দাম বেড়ে গেল। কিন্তু যারা সুযোগ নিয়ে মজুদ করে দাম বাড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। বাস্তবতার নিরিখে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। নুরুল ইসলাম মিলনের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি অনেক। আমরা ৭শ’ মিলিয়নের মতো ভারতে রফতানি করি। আর ভারত আমাদের দেশে রফতানি করে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার। ভারত আমাদের তামাক ও মদ ছাড়া সকল পণ্যের ডিউটি ফ্রি কোঠা দিয়েছে। তৈরি পোশাকে ভারত আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বি। তারপরও তারা আমাদের ব্যাপক সুবিধা দিচ্ছে। ভারত আমাদের থেকে তৈরি পোশাকে পিছিয়ে। আমরা তৈরি পোশাক রফতানিতে বিশ্বে দ্বিতীয়। একটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি থাকলে সেটা কখনো ক্ষতি করে না। চীন আমাদের দেশে ১১ বিলিয়ন ডলার রফতানি করে। আমরা চীনে মাত্র এক বিলিয়ন ডলার রফতানি করি। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সমান হওয়া সম্ভাবনা খুবই কম। সেই জায়গায় আমরা এখনও উন্নীত হয়নি। সরকার দলীয় অপর সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মিলনের প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমানে তৈরি পোশাক রফতানি দেশের মোট রফতানির প্রায় ৮২ ভাগ। তৈরি পোশাক রফতানির এই ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তন্মোধ্যে নতুন বাজার অনুসন্ধান অন্যতম। তৈরি পোশাকের নতুন বাজার অনুসন্ধানে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ভারতে মেডিকেল ভিসা নিয়ে জটিলতা নিরসন করা হবে ॥ মেডিকেল ছাড়া ভারতের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। যে কারণে অনেক বাংলাদেশী রোগী হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দারের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, ভারত আমাদের বন্ধু দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের বড় ধরণের অবদান রয়েছে। সেখানে এমপিদের কুটনৈতিক ভিসা নিয়ে গেলে চিকিৎসা সেবা পেতে কোন বাধা থাকার কথা নয়। আর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশন থেকে মেডিকেল ভিসা পেতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি আরো বলেন, ভারতে গিয়ে চিকিৎসা সেবা পেতে সমস্যা হচ্ছে, বিষয়টি আমার জানা নেই। সংসদ সদস্য যেহেতু বিষয়টি উত্থাপন করেছেন, সেহেতু বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখবো। কোন সমস্যা থাকলে, তা ভারতীয় হাই কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
×