ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সোনাকাটা ট্যাংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বেহাল দশা

প্রকাশিত: ২৩:৫৬, ৬ নভেম্বর ২০১৭

সোনাকাটা ট্যাংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বেহাল দশা

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী ,বরগুনা ॥ বরগুনার তালতলী উপকুলীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চল সকিনা, নিশানবাড়িয়া ও নিদ্রাছকিনা নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের লীলাভুমি। এ বনাঞ্চলে রয়েছে সোনাকাটা ট্যাংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ইকো-ট্যুরিজম। চরম অযত্ন ও অবহেলায় এ ইকো-ট্যুরিজমের অধিকাংশ বেষ্টনি ভেঙ্গে পরেছে। ভেতরের রাস্তার বেহাল দশা। কাঠের পুল গুলো ভাঙ্গা। পটুয়াখালী বন উপ-বিভাগীয় তালতলী রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, ১০ হাজার ৬৩৩ একর জমির উপর এ উপকূলীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বঙ্গোপসাগরে কোল ঘেষা এ বনাঞ্চলের বৈশিষ্ট হচ্ছে দক্ষিণে সাগর, পূর্বে কুয়াকাটা, পশ্চিমে পায়রা (বুড়িশ্বর) নদী, উত্তরে তালতলী ও আমতলী উপজেলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভুমি এ বনাঞ্চল। এ বনাঞ্চলে রয়েছে সোনকাটা ট্যাংরাগিরি সংরক্ষিত ইকো-ট্যুরিজম। এখানে দাড়িয়ে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। তিন দিকে সাগর ও ৯টি ক্যালেন (খাল) বেষ্টিত এ বনাঞ্চল। শীত মৌসুমে নৌ-ভ্রমনে শত শত পর্যটকরা এখানে আসে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ট্যাংরাগিরি বিটে পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় এবং আমতলী উপজেলা পরিষদ ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছে সোনাকাটা ট্যাংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ইকো-ট্যুরিজম। ইকো-ট্যুরিজম প্রবেশ পথ থেকে সাগর মোহনা পর্যন্ত ওই সময় সাড়ে তিন কিলোমিটার ইটের সলিং সড়ক নির্মাণ করে। বর্তমানে এ সড়কটি বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে। এ সড়কের মধ্যে রয়েছে ১৭টি কাঠের পুল। এরমধ্যে ১৬ টি পুল ভাঙ্গা। অনেক পুলের পাটাতন নেই। সড়কের ইটের সলিং সরে গর্তে পরিনত হয়েছে। অনেক স্থানে সড়কের মাটি সরে গিয়ে একাকার হয়ে গেছে। এতে পর্যটকদের ইকোপার্কে যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক পর্যটক সড়ক ও কাঠের পুলের বেহাল অবস্থা দেখে সাগরপাড়ে যাচ্ছে না। এতে অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে ভ্রমণ পিপাসুদের আনন্দ। ভেঙ্গে পরেছে হরিণ , বাঘ ও শুকরের খাঁচা। কুমিরের খাচা নিচু হয়ে গেছে। এতে নিরাপত্তার ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এগুলো সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেই। পর্যটকরা এ ইকোপার্ক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ২০১৩ সালে ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইকো-ট্যুরিজমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ওই সময় ইকো-ট্যুরিজমটিতে ২টি কুমির, ৯টি হরিণ, ২৬টি শুকর ও ১টি মেছোবাঘ ছিল। বর্তমানে শুকর, কচ্ছপ ও মেছোবাঘ খাঁচায় নেই। সোমবার সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, বাউন্ডারী প্রাচীর খসে যাচ্ছে। লোহার খাঁচাগুলোতে মরিচা ধরেছে। পার্কের ভিতরে সুপিয় পানির জন্য গভীর নলকূপ বসানো থাকলেও তাতে কোন পানি উঠছে না। পয়ঃনিস্কাশনের ব্যবস্থা থাকলেও শৌচাগারগুলো পরিস্কার পরিছন্নতার অভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে। পর্যটকদের জন্য বসার জায়গা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। যে কয়টি রয়েছে তা অপরিছন্ন। বন্যপ্রাণীদের জন্য নেই কোন ছাউনি। ভিতরের সলিং রাস্তার ইট খসে পরে গর্তে পরিনত হয়েছে। ১৬টি কাঠের পুল চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। পুলের পাটাতন উঠে গেছে। পুলের উপরে কাঠ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে মানুষ পারাপার হচ্ছে। বেষ্টনীর মধ্যে শুধু ৫টি হরিণ ও ২টি কুমির আছে। বাকী বেষ্টনীতে কোন প্রাণী নেই। বেষ্টনীগুলো ফাঁটল ধরেছে। বেষ্টনীর নিচের ক্যানেলের লোহার রড ভেঙ্গে গেছে। শুরুতে যে প্রাণী ছিল বর্তমানে ওই প্রাণীগুলো নেই। বাঘের খাঁচায় বাঘ নেই, শুকরের খাঁচা শুন্য, পুকুরে কচ্ছপ নেই। আমতলী থেকে আসা পর্যটক আহুরুজ্জামান আলমাস খান বলেন ইকোপার্কের অভ্যান্তরিন অবস্থা অত্যান্ত নাজুক। সড়কের ১৬ টি পুলের সকল পুলই ভাঙ্গা। রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপোযোগী। এগুলো দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। পর্যটক নজরুল ইসলাম বলেন পার্কের ভিতরের করুন অবস্থা দেখে মনে হয় এটা কোন অরক্ষিত বনাঞ্চল। পার্কের মধ্যে কোন সুপ্রিয় পানির ব্যবস্থা নেই। গভীর নলকূপ অকেজো অবস্থায় পরে আছে। তিনি আরো বলেন পর্যটকদের বসার স্থান ও পয়ঃনিস্কাশনের শৌচাগারগুলো অত্যন্ত অপরিছন্ন। বরগুনা থেকে আসা পর্যটক কলেজ ছাত্রী সুমি বেগম বলেন সুন্দর পরিবেশে ইকোপার্কটি স্থাপিত হলেও বর্তমানে সংস্কারের অভাবে ইকোপার্কটি বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে। ট্যাংরাগিরি (সকিনা) বিটের বন কর্মকর্তা জাহিদ প্রামানিক জানান ইকোপার্কের এ বেহাল অবস্থা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। সরকারী বরাদ্দ পেলে পার্ক সংস্কার করা হবে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র বলেন ইকোপার্ক সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হবে। তিনি আরো বলেন ইতিমধ্যে ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। ওই টাকা দিয়ে হরিণ ও কুমিরের খাঁচা সংস্কার করা হবে।
×