ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আঘাত পাওয়া রোগীর প্রায় সবাই গুলি বা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছে

প্রকাশিত: ০২:১৩, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আঘাত পাওয়া রোগীর প্রায় সবাই গুলি বা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, গুরুতর আঘাত পাওয়া প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে কক্সবাজারের বিভিন্ন হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এসব রোগীর প্রায় সবাই গুলি বা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫২ হাজার রোহিঙ্গা শিশুকে বিভিন্ন রোগের টিকা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানানোর জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে গঠিত কন্ট্রোল সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমকর্তার পদবী ও ফোন নম্বর ঃ সহকারী পরিচালক (সমন্বয়)-০১৭১২ ১৮০৫৬০ (মোবাইল), ০২-৯১২১৭৯৩ (অফিস) এবং সহকারী পরিচালক (মনিটরিং)- ০১৭১৫ ২৩৫১৪৮ (মোবাইল)। সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, উখিয়া, টেকনাফ ও বান্দরবানের যেসব এলাকায় শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছে, সেসব এলাকায় বাড়তি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। অনেকগুলো নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। গর্ভবতী নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫২ হাজার শিশুকে হাম, রুবেলাসহ নানা রোগের টিকা দেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৪০টির বেশি বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্বাস্থ্য কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরগুলোয় রোগ প্রতিরোধ, পুষ্টি ও সেবার পাশাপাশি পরিবার পরিকল্পনাসেবা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা চিরকালই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাসেবা থেকে বঞ্চিত। রোহিঙ্গা নারীদের পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা নারীদের গর্ভ-পূর্ববর্তী, গর্ভকালীন ও প্রসব-পরবর্তী সব ধরনের সেবার ব্যবস্থা করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের এদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। মানবিক কারণ এই নয় যে, তারা এখানে দীর্ঘ দিন এদেশে থাকবে। তাদেরকে নিজ দেশে অবশ্যই ফিরে যেতে হবে। আমরা মায়ানমার সরকারকে অনুরোধ করবো তারা যেন দ্রুততম সময়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়। সেদেশের সরকার যেন এভাবে বর্বর হত্যাকান্ড বন্ধ করে। এটা মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গা শরনার্থীদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা ও রোগ ব্যাধি চিকিৎসার জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মোট ১০টি মেডিকেল টীম গঠন করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে চিকিৎসকদের উখিয়া ও টেকনাফ-এ মেডিক্যাল টীমে কাজ করার জন্য সংযুক্ত প্রদান করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক গঠিত মেডিকেল টীমের সাথে সমন্বয় করে উক্ত টীম গুলো কাজ করছে। মেডিক্যাল টীমগুলো ৮ থেকে ১০ প্রকার ওষুধ এবং তিন ধরণের অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী (কনডম, খাবার বড়ি, তিন মাস মেয়াদী ইনজেকশন) বিতরণ করছে। আগত শরনার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গর্ভবর্তী মহিলা রয়েছে। তাদের প্রসব পূর্ববর্তী শারীরিক চেকআপ , নিরাপদ প্রসব সেবা এবং প্রসব পরবর্তী সেবা নিশ্চিত করার জন্য উখিয়া ও টেকনাফে ৬টি এফডব্লিউসি’তে প্রসব সেবার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উক্ত কেন্দ্রগুলোতে ১জন স্যাকমো, ১জন এফডব্লিউভি, ছাড়াও ইউএনএফপিএ এর অর্থায়নে ২ জন ডিপ্লোমা মিডওয়াইফ নিয়োজিত আছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৭৩টি নরমাল ডেলিভারীর মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হয়েছে। এছাড়াও জরুরী প্রসুতি সেবার প্রয়োজন হলে এ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার -এর ব্যবস্থা আছে। উক্ত এফডব্লিউসিগুলোতে আরও ১২ জন মিডওয়াইফ সংযু্িক্ত প্রদানের জন্য নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তর-কে পত্র দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা শিশুদের ইপিআই টিকা প্রদানের জন্য এ অধিদপ্তরের ২০ জন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক কে স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য সহকারীদের সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে বিশেষ টিকাদান কার্যক্রম চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ১ (এক) জন উপপরিচালককে ন্যস্ত করা হয়েছে এবং কক্সবাজারে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে উপপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা, কক্সবাজারকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
×