ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্র কি টিকতে পারবে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৬ আগস্ট ২০১৭

তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্র কি টিকতে পারবে

তিউনিসিয়ায় পরিবর্তনটা ধীরে ধীরে এবং তারপর আকস্মিকভাবেই এসেছিল। ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে মোহাম্মদ বুয়াজিজি নামে লাইসেন্সবিহীন এক সবজি বিক্রেতার পণ্য জনৈক পুলিশ অফিসার বাজেয়াপ্ত করলে ক্ষোভে দুঃখে সেই সব্জি বিক্রেতা নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। অগ্নিদগ্ধ বুয়াজিজির মারা যেতে ১৮ দিন লেগেছিল। এই সময় তার কাহিনী শুধু তিউনিসিয়াজুড়ে নয়, গোটা আরব বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তিউনিসিয়ার মানুষ রুদ্ররোষে ফেটে পড়ে। বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে গোটা দেশ। ২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি বুয়াজিজি মারা খাওয়ার দশ দিন পর প্রেসিডেন্ট জয়নুল আবেদীন বেন আলীর ২৩ বছরের শ্বৈরশাসনের পতন ঘটে। তিউনিসিয়ায় যে আরব বসন্ত শুরু হয়েছিল তা ছড়িয়ে পড়ে মিসর ও লিবিয়ায়। এই অঞ্চলের শ্বৈরশাসকরা একের পর এক উৎখাত হতে থাকে কিংবা উৎখাতের হুমকির সম্মুখীন হয়। সাড়ে ছয় বছর পরও আরব বসন্তের সেই অভিযান অব্যাহত আছে। লিবিয়া বিভক্ত রয়েছে। সিরিয়া গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। মিসর ও সৌদি আরব রাজনৈতিক ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা নিয়েছে। এদিকে তিউনিসিয়া আরব বিশ্বের সত্যিকারের একটি মুক্ত বাজার গণতন্ত্রের দেশে পরিণত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হলো এই যে তিউনিসিয়ার বিপ্লব উপদলীয় যুদ্ধের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায়নি। দেশের নতুন জাতীয় ঐক্যের সরকারে অনেক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো সাহায্য নিতে এগিয়ে এসেছে। তিউনিসিয়ার গণতন্ত্রের সংগ্রামীরা নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেছে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। তিউনিসিয়ার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পর্যটন শিল্প। বেশ কয়েকটি বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলায় সেই শিল্প মার খেয়েছে। প্রবৃদ্ধি থমকে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতের ওপর মানুষের আস্থার অভাব থেকে এক নিরানন্দ ধারার সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কিছু তিউনিসিয়ায় বুয়াজিজির দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আগুনে আত্মাহুতি দিয়েছে। আরব বিশ্বের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর সাফল্যের কাহিনীর উল্টোদিকে এ হলো এক তিক্ত কাহিনী। প্রশ্ন হচ্ছে তিউনিসিয়া কি স্থিতিশীলতার কেন্দ্র এবং ইসলামী পন্থীদের বিরুদ্ধে মিত্র হিসেবে থাকতে পারবে? প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ শাহেদ (৪১) অবশ্য ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদী। পূর্বসূরি হাবিব এজিদ অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার কারণে এক বছর আগে অপসারিত হওয়ার পর সাবেক এই স্থানীয় সরকারমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হন। মন্থর প্রবৃদ্ধি তিউনিসিয়ার কাহিনীর এখনও একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গণঅভ্যুত্থানের আগে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল বার্ষিক প্রায় ৫.৪ শতাংশ। আজ তা শেষে এসেছে ১ শতাংশে। শাহেদ বলেন, গত পাঁচটি বছর আমরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পেছনে ব্যয় করেছি এবং তাতে সফলও হয়েছি। আজ আমাদের বেকারত্বের হার বেশিÑ প্রায় ১৫ শতাংশ, আর সেটাই এখনকার মস্ত চ্যালেঞ্চ। আরেক বড় চ্যালেঞ্জ হলো দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি। ২০১৫ সালে তিনটি বড় সন্ত্রাসী হামলার পর দেশে জরুরী অবস্থা জারি আছে। শাহেদ বলেন জঙ্গী সংক্রমিত অস্থিতিশীল প্রতিযোগী লিবিয়ার কারণে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। গণতন্ত্রের উত্তরণের পর থেকে তিউনিসিয়া মার্কিন সাহায্য পেয়ে আসছিল। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এই সাহায্য ৬৭ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হলে তিউনিসিয়া এক বড় রকমের ধাক্কা খায়। এই আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজনীয় দেশটির জন্য জরুরী হয়ে উঠেছে। আইএমএফ তিউনিসিয়ার সাহায্য সমর্থন দিয়ে আসছিল। কিন্তু ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে আসতে না পারলে সংস্থটির এই ধারণা জন্মাতে পারে যে তারা অপাত্রে সাহায্য দান করছে। বরাবরের মিত্র দেশ ফ্রান্স ও তার এই প্রাক্তন উপনিবেশটিকে সাহায্য দিতে খুব একটা এগিয়ে আসেনি যদিও নয়া প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন হয়ত সাহায্য বাড়িয়ে দেবেন। শাহেদ বলেন, তিউনিসিয়ার অর্জনগুলোতে উপেক্ষা করার উপায় নেই। ২০১৪ সালে দেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে রাজনৈতিক দল, বাক স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক উদ্যোগের স্বাধীনতা সবকিছুর অস্তিত্ব এখন সে দেশে আছে। তিউনিসিয়ার নিরপেক্ষতাই দেশটিকে শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী ভূমিকা পালনের এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর লড়াইয়ের পরিণতি থেকে নিজেকে রক্ষা করার সুযোগ এনে দিয়েছে। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×