ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

চকরিয়া মাতামুহুরী নদীতে বিলীন সহস্রাধিক বসতি

প্রকাশিত: ০২:৪২, ২২ জুলাই ২০১৭

চকরিয়া মাতামুহুরী নদীতে বিলীন সহস্রাধিক বসতি

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ চকরিয়ার বুকচিরে প্রবাহিত একসময়ের প্রমত্তা মাতামুহুরী নদী বর্তমানে এলাকাবাসির জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর বর্ষাকালে অব্যাহত ভাঙ্গনে দুইযুগ সময়ে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে নদীর তীর এলাকার অন্তত সহস্রাধিক বসতি ও বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি। পাশাপাশি ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ঠিকানা হারিয়েছে একাধিক মসজিদ মাদরাসা ও বিদ্যালয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, মাতামুহুরী ভাঙ্গনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড সরকারের টাকায় প্রতিবছর কবলিত এলাকায় জোড়াতালির কাজ করলেও কোন সময় টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেনি। প্রতিবছর বর্ষাকালে ভারী বর্ষণ এবং নদীর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তান্ডবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তোড়াতালির সব কাজই নদীতে তলিয়ে যায়। এরপর শুরু হয় নদী ভাঙ্গনের মহোৎসব। এখনও অব্যাহত রয়েছে নদীর দু’তীরে ভাঙ্গনের খেলা। এতে বসতি ও বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারাচ্ছে মানুষ, বিপন্ন হচ্ছে সভ্যতা। জন প্রতিনিধিদের দাবি, নির্বিচারে পাথর আহরণ ও গাছ কেটে লুটে নেয়ার কারনে প্রতিবছর বর্ষাকালে মাতামুহুরীর নদীর উৎপত্তিস্থল লামা ও আলীকদমের পাহাড় থেকে নেমে আসা পলিমাটি ঢলের পানির সঙ্গে মিলে গিয়ে বছরের পর বছর নদীতে নাব্যতা সৃষ্টি হচ্ছে। নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ার কারনে পরের বছর বর্ষাকালে নদীতে ঢলের পানি নামলে তা দু’তীর উপড়ে অনায়সে ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। এতে চকরিয়ার সর্বস্থরের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। ভেঙ্গে যাচ্ছে সকল ইউনিয়নের সড়ক-উপ-সড়ক। স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর বন্যার সময় নদীতে বানের পানির প্রবাহ কিছুটা কমে গেলে ফের শুরু হয় নদীর দুই তীরে ভাঙ্গনের মহোৎসব। এভাবে গত দুইযুগ ধরে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদীর তীর এলাকার জনপদ বিশেষ করে চকরিয়া সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যাচর, ফাসিয়াখালী, কৈয়ারবিল, বরইতলী, পুর্ববড়ভেওলা, কোনাখালী, বিএমচর, সাহারবিল, চিরিঙ্গা ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভার অন্তত হাজারো পরিবার বাড়িভিটা ও জমিজমা হারিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। চকরিয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী বলেন, প্রতিবছরের মত চলতি বর্ষা মৌসুমে শুরুতে অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে সৃষ্ঠ বন্যার তান্ডবে নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে চকরিয়া পৌরশহর রক্ষা বাঁধ এবং ফাসিয়াখালী ঘুনিয়া পয়েন্টের বেড়িবাঁধ। চলতিমাসে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে চকরিয়া পৌরসভার শহররক্ষা বাঁধ এলাকার গনী সিকদারপাড়ার অন্তত ১২টি বসতঘর ও বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি, স’মিল এবং বিদ্যুৎ লাইনের ছয়টি খুটি। তিনি বলেন, একইভাবে ভাঙ্গনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে চকরিয়া আবদুল বারী পাড়ার অন্তত ৬টি বসতঘর এবং আবাদি জমি। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলো সব হারিয়ে বর্তমানে পরিবার সদস্যদের নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। মেয়র দাবি করেন, বন্যার তান্ডব থেকে চকরিয়া শহর এবং আশপাশ এলাকাকে নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা করতে হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। জোড়াতালির উন্নয়ন কাজ হলে তা দিয়ে আগামীতে চকরিয়া শহর ও পৌরবাসির জানমাল রক্ষা করা যাবে না। ফাসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি সময়ের বন্যার তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত চকরিয়া শহররক্ষা বাঁধ রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরুরী প্রকল্পের আওতায় প্রথমে স্পার দেয়া হয়। কিন্তু দুইদিনের মাথায় পানির প্রবল টানে স্পার গুলো ভেসে গেছে। শহররক্ষা বাঁধ এবং আশপাশ এলাকা রক্ষার্থে ইতোমধ্যে পাউবো’র পক্ষ থেকে সেখানে তাৎক্ষনিকভাবে বালুর বস্তা ফেলে কোনমতে নদী ভাঙ্গন ঠেকানো হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আরসিসি ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন কাজ করা না গেলে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ড ও ফাসিয়াখালীর জনবসতি, রাস্তা-ঘাট, মসজিদ মাদরাসা, স্কুল ও মন্দিরসহ একাধিক স্থাপনা। পাশপাশি ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হলে যে কোন মুহুর্তে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নদী গর্ভে তলিয়ে যাবে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে মাতামুহুরী নদীতে ব্যাপক ভাঙ্গনের শুরু হয়েছে। নদীর তীরবর্তী প্রায় এলাকায় ভাঙ্গনে ঘর-বাড়ি ও আবাদি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। এ অবস্থার উত্তোরণের লক্ষ্যে আমরা চকরিয়া শহররক্ষা বাঁধ ও ঘুনিয়া পয়েন্টের বেড়িবাঁধ এলাকায় নদীতে প্রথমে ফাইলিং করে গাছের স্পার দিলেও পানির প্রবল স্রোতের তলিয়ে গেলে সেখানে বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) দিয়ে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ভাঙ্গন স্থানের আড়াইশত মিটার এলাকায় ৯ হাজার বালু বস্তার নদীতে ডাম্পিং করা হয়েছে। বর্ষা মৌসুম পর্যন্ত সময়ে ওই এলাকার নদীতে এভাবে বালুর বস্তা ডাম্পিং অব্যাহত থাকবে। যাতে বেড়িবাঁধটি নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা যায়। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, বর্তমানে ঘুনিয়া পয়েন্টের ভাঙ্গন এলাকায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে পাথরের আরসিসি ব্লক বসানোর কাজ চলছে। আগামী শুস্ক মৌসুমে একই স্থানে ভাঙ্গন প্রতিরোধে আরও তিনশত মিটার এলাকায় পাথরের ব্লক বসানোর কাজ করা হবে।
×