মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে ইয়াবার চালান আসছে সমুদ্রপথে। খালাসের পর অন্যত্র পাচার হচ্ছে সড়কপথে। প্রশ্ন উঠেছে, আকাশপথে ইয়াবার চালান যাচ্ছে কিনা। কারণ, ফিশিং ট্রলারে পতেঙ্গা বা মাঝিরঘাট ও সদরঘাটে মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালান খালাসের পর যাচ্ছে কোথায়। এসব ইয়াবা কোন্ পথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার হচ্ছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন র্যাব সেভেনের ইন্টেলিজেন্স টিমসহ প্রশাসন। মিয়ানমার ও দেশীয় চোরাকারবারিদের একাধিক সিন্ডিকেট ইয়াবার চালানের সঙ্গে জড়িত হয়ে নিজেদের ফায়দা লুটতে গিয়ে দেশের মেধাবী যুব সমাজকে অন্ধকারে ধাবিত করছে এমন অভিযোগ সচেতন নাগরিকদের।
অভিযোগ রয়েছে, মিয়ানমার এবং টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম রুটে মাদক পাচারকারীরা নৌপথে তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। ফলে চট্টগ্রামের গহিরা, আনোয়ারা, পতেঙ্গা সী-বিচ, খেজুরতলা সী-বিচ, হালিশহর সী-বিচ, ভাটিয়ারি এবং কুমিরা সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার জনমানবহীন অংশে ইয়াবার চালান খালাসের ঘটনা চলে সন্ধ্যার পরপরই। তবে পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে সড়কপথেই এসব ইয়াবার চালান পাচার হলেও ধরা পড়ছে না কেউই। প্রশ্ন উঠেছে, নৌপথে আসা ইয়াবার বড় চালানগুলো র্যাবের হাতে ধরা পড়ার ঘটনা ঘটলেও কেন পুলিশের তৎপরতা থাকার পরও ধরা পড়ছে না অন্যত্র পাচারের সময়। র্যাব সেভেনের গোয়েন্দা অনুসন্ধানের তথ্যানুযায়ী, মিয়ানমার এবং এ দেশীয় চোরাচালানিদের বেশ কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র নৌপথ বা সমুদ্রপথকে ব্যবহার করেছে মাদক পাচারে। মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক পাচারকারী চক্র মাছের ব্যবসার আড়ালে ইয়াবার চালান মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। র্যাব সেভেনের সদস্যরা চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবার পাচার রোধে সমুদ্রে টহল ও নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি সড়কপথেও তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। বিশেষ করে রমজান ও ঈদকে ঘিরে মাদক ব্যবসায়ীরা তৎপর থাকলেও এ ক্ষেত্রে র্যাব সেভেনের ইন্টেলিজেন্স টিম সক্রিয় থাকায় শুক্রবার মায়ের দোয়ানামক ফিশিং ট্রলার থেকে ১৫ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এই ঘটনায় পাচারকারী দলের ১২ সদস্যের সিন্ডিকেটকে গ্রেফতার করেছে। ইয়াবা পাচারের গোপন সংবাদে, শুক্রবার রাতে বঙ্গোপসাগরের চট্টগ্রামস্থ পতেঙ্গা বহির্নোঙ্গর থেকে ১৫ লাখ ইয়াবার চালানের সঙ্গে জড়িত ৫ জন মিয়ানমার নাগরিক ও জেলের বেশে ৭ জন দেশীয়সহ মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব সেভেন। এ ঘটনায় প্রায় ৭৫ কোটি টাকা মূল্যের ইয়াবা অবৈধভাবে বহনকারী মায়ের দোয়ানামক ফিশিং ট্রলারটিও আটক করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, এসব ইয়াবার মালিক চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের নন্দেরখিল গ্রামের মৃত সাইদুল হকের ছেলে মোঃ ফারুক। যিনি এলাকায় বাইট্টা ফারুক ওরফে বিচ্চু ফারুক নামে পরিচিত। জব্দকৃত ‘মায়ের দোয়া’ ট্রলারটি আসামি ছাদেকের নামে রেজিস্ট্রি থাকলেও প্রকৃত মালিক ফারুক। ট্রলারটির মাঝি আসামি নজির আহমেদ। এর আগে তারা এই ট্রলারে মোট ৫ বার ইয়াবার চালান মিায়ানমার থেকে নিয়ে আসে। এর মধ্যে তিনবারে ১০ লাখ করে মোট ৩০ লাখ পিস ইয়াবার চালান নিয়ে আসে। সর্বশেষে মিয়ানমার থেকে ১৫ লাখ পিস ইয়াবা পাচারকালে শুক্রবার রাতে ধরা পড়েছে ১২ জনের এই সিন্ডিকেট। ইয়াবার মালিক মোঃ ফারুককে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে র্যাব সেভেন। তবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় তার নামে মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে। র্যাব সেভেন সূত্রে জানা গেছে, একটি মাদক পাচারকারী সিন্ডিকেট মিয়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবার চালান ট্রলারে করে সমুদ্রপথে চট্টগ্রামে খালাস করবে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার বিকেল থেকে র্যাব সেভেনের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম পতেঙ্গা সমুদ্র এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে ‘মায়ের দোয়া’ নামের একটি দ্রুতগতি সম্পন্ন ট্রলারকে বহির্নোঙ্গরে চিহ্নিত করে। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রলারটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আটকের পর দেখা গেল ট্রলারটিতে সাধারণ ইঞ্জিনের পরিবর্তে বাসের হিনো মডেলের ইঞ্জিন লাগানো হয়েছে। ফলে অভিযান দলকেও একটু বেগ পেতে হয়েছে।
পরবর্তীতে আটককৃত মায়ের দোয়ানামক ট্রলারটি তল্লাশি করে ১৫ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এই ইয়াবার চালান পাচারের সঙ্গে জড়িত ৫ জনসহ মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা সকলেই জেলে বেশে থাকলেও মূলত তারা ইয়াবা পাচারের সঙ্গেই জড়িত। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ কক্সবাজারের মহেশখালীর পুটিবিলা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে নজির আহমেদ প্রকাশ দুলাল মাঝি ও লালু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ জাফর, রেজাউল করিমের ছেলে মোহাম্মদ খোকন, একই এলাকার মামুনুর রহমানের ছেলে মোঃ হাসেম, গুনাপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ সিদ্দিক আহমদের ছেলে খায়রুল আমিন, বান্দরবানের লামা উপজেলার আলংপাড়াস্থ বৈদ্যভিটা গ্রামের মোঃ ছাদেক। এদিকে, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান ফিশিং ট্রলারে নিয়ে আসার ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেÑ মিয়ানমার নাগরিক বর্তমানে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার চকবাজার গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইল, মহেশখালীর পুটিবিলা গ্রামের ফজল আহম্মদের ছেলে আনিসুর রহমান, টেকনাফের লেদা শরণার্থী ক্যাম্পের নুর আলমের ছেলে আবদুল খালেক, একই ক্যাম্পের নুরুল আলমের ছেলে মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, মৃত ইউনুস মিয়ার ছেলে নুর আলম ও সাইদুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ সেলিম।