ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রিজ থেকেই অগ্নিকাণ্ড গ্রেনফেলে

প্রকাশিত: ২১:১০, ২৪ জুন ২০১৭

ফ্রিজ থেকেই অগ্নিকাণ্ড গ্রেনফেলে

অনলাইন ডেস্ক ॥ ঘটনার দশ দিনের মাথায় নিশ্চিত হওয়া গেল আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে। লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে আগুন লাগার পর পর প্রাথমিক ভাবে বলা হয়েছিল, কোনও ফ্রিজারের আগুন থেকেই ভয়াল রূপ নিয়ে লেলিহান শিখা গ্রাস করেছে গ্রেনফেল টাওয়ারকে। পূর্ণাঙ্গ তদন্তেও উঠে এল, আগুন লাগার পিছনে দায়ী ওই ফ্রিজার। কিন্তু সেই আগুনকে মারাত্মক আগ্রাসী করে তুলতে অনেক বড় ভূমিকা ছিল গ্রেনফেল টাওয়ারের বাইরে নির্মাণ-সজ্জায় (ক্ল্যাডিং) ব্যবহৃত সামগ্রীর। প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে গত কালই বলেছেন, গ্রেনফেলের ওই ক্ল্যাডিং-এর মতো একই জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে লন্ডনের অন্তত তিনটি ব্লকে। এই সব ব্লকের ছ’শো বহুতলে আছে সেই মরণ-ফাঁদ। গ্রেনফেল টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হতে প্রশ্নের মুখে সেই সব বহুতলও। এখনও পর্যন্ত গ্রেনফেল বিপর্যয়ে মৃতের সংখ্যা ৭৯। উদ্ধারকাজ অনেকটাই এগিয়ে যাওয়ার পরেও কেউ নিশ্চিন্তে বলতে পারছেন না, যে আর দেহ উদ্ধার হবে না সেখান থেকে। আপাতত মেট্রোপলিটান পুলিশের দাবি, ওই বহুতলের বাইরের নির্মাণে সঠিক গুণমান রাখা হয়নি। তাই এ বার এই ঘটনায় তারা খুনের মামলা দায়ের করার কথা ভাবছে। হটপয়েন্ট-এর ফ্রিজার ছিল গ্রেনফেল টাওয়ারে। ওয়ার্লপুলের অধীনস্থ সংস্থা হটপয়েন্ট। সরকার এখন ওই ফ্রিজারটিও পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশ দিয়েছে। ওয়ার্লপুল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে: ‘‘যাঁরা প্রিয়জন, নিজের ঘর, সহায়-সম্বল— সব হারিয়েছেন, সেই আক্রান্তদের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা।’’ তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে ওই সংস্থা। এ ব্যাপারে কাজে লাগানো হয়েছে ২৫০ জন বিশেষ তদন্তকারীকে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড জানিয়েছে, শুধু খুনের অভিযোগ নয়, খতিয়ে দেখা হতে পারে অন্য সব অপরাধের মাত্রাও। অর্থাৎ আবাসনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, অগ্নিবিধি এবং সাধারণ নিরাপত্তার দিকগুলিও তদন্ত করে দেখা হবে। গ্রেনফেল টাওয়ার সংস্কারে যে সব সংস্থা কাজ করেছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই তদন্ত হবে। পুলিশ বলছে, এখনও পর্যন্ত তদন্তে একটা বিষয় স্পষ্ট। সেটা হল, আগুনটা ইচ্ছে করে কেউ লাগায়নি ঠিকই। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে আগুন যে ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা ‘অপ্রত্যাশিত।’ বহুতলের উপর থেকে নীচ— পুরোটাই খতিয়ে দেখেছে পুলিশ। যেখানে যতটুকু গলদ মিলছে, সেটাই লিখিত ভাবে রেকর্ডে তোলা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে গ্রেনফেলের বাইরের দিকে একটি লিফটও লাগানো হবে। তবে গোটা বহুতলের ফরেন্সিক পরীক্ষা হতে গোটা বছর লেগে যাবে বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যতম অফিসার ফিয়োনা ম্যাক-করম্যাক বলেছেন, ‘‘এখনও একটা ভয়ঙ্কর সত্যি মানতে হচ্ছে। আগুনের বীভৎস তাপে অনেকেরই চেহারা শনাক্ত করা যায়নি। কাউকে কাউকে হয়তো আর খুঁজেই পাওয়া সম্ভব হবে না।’’ আবাসনের বাসিন্দাদের মধ্যে এখনও যাঁরা নিখোঁজ, তাঁরা বৈধ অভিবাসী কিনা, তা নিয়ে এখন মাথা ঘামাচ্ছে না ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তদন্তকারীরাও এখন ও সব মাথায় রাখছেন না বলে জানান ফিয়োনা। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ একটাই বিষয়। ঠিক কারা কারা নিখোঁজ, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। এর পরে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ করে খুঁজে বের করা যে তাঁরা সুস্থ এবং সুরক্ষিত রয়েছেন কিনা। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×