ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

চকরিয়ায় অক্ষত সড়কে ১৯ কোটি টাকা লুটের পরিকল্পিত আয়োজন

প্রকাশিত: ১৯:০৭, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

চকরিয়ায় অক্ষত সড়কে ১৯ কোটি টাকা লুটের পরিকল্পিত আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ মহাসড়ক অক্ষত। খানাখন্দক এবং ভাঙ্গা নেই কোথাও। সড়কের বেশির এলাকা রক্ষিত আছে। ওই সড়কের আস্তরণ প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে সওজ বিভাগ অক্ষত সড়কের উন্নয়নের জন্য ১৯ কোটি ৯ লাখ টাকা। সরকারের এ বিপুল পরিমান অর্থের বরাদ্দ এনে বেশীরভাগ টাকা আত্মসাতের জন্য পরিকল্পিতভাবে এ আয়োজনে নেমেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, সম্পুর্ণ অক্ষত থাকা সত্বেও চকরিয়া হারবাং ইনানী রিসোর্টের সামনে প্রকল্পটি দেখানো হয়েছে। চকরিয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের অর্থায়নে ১৯ কোটি ৯লাখ টাকা ব্যয়ে চলমান কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১৯ কিলোমিটার অক্ষত সড়ক উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ তুলেছেন, সড়ক বিভাগের কতিপয় দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজস করে অক্ষত মহাসড়কে উন্নয়নের নামে বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা জুন ক্লোজিংয়ের আগেই ভাগবাটোয়ারা করতে দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসবে নেমেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করে বলেন, অক্ষত মহাসড়কের ১৯ কিলোমিটার এলাকায় ‘ওভারলে’ (আস্তরণ) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নামে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ১৯ কোটি ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও উল্লেখিত পরিমান সড়কের অংশে কোন খানাখন্দকের চিহ্নও নেই। তারপরও সরকারের এ বিশাল অঙ্কের টাকা বরাদ্দ দেয়ার ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে; কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট শাখা কর্মকর্তা কেউই চলমান উন্নয়ন কাজের দেখভালে নেই। ঠিকারদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সঙ্গে সড়ক বিভাগের একজন কার্যসহকারী সার্বক্ষনিক কাজের তদরকি করছেন। ফলে সিনিয়র কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতির সুযোগে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্টান নিজেদের ইচ্ছেমত যেনতেন ভাবে প্রকল্পের চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অক্ষত সড়কের উপরিভাগে সিডিউল বহির্ভূত নিন্মমানের বিটুমিন মিশিয়ে তার উপর প্রতিবর্গ ফুটে যে পরিমান খোয়ার মিশ্রনে ওভারলের কাজ করার কথা রয়েছে, সেই নিয়মগুলো সড়কের উন্নয়ন কাজের কোথাও মানা হচ্ছে না। সড়কে স্থান ভেদ উপরের স্তরে গড়ে ৫০ মিলিমিটার পুরুত্ব বজায় রাখার কথা থাকলেও এই ক্ষেত্রেও অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডিবিএস (ডাবল বিটুমিন ওয়্যারিং কোর্স সার্ফেসিং) এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখনও সড়কের বেশির এলাকা রক্ষিত আছে। তারপরও সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা অক্ষত সড়কের উন্নয়নের নামে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের বরাদ্দ এনে কেন অপচয় করা হচ্ছে, তা সচেতন মহলের মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ। চকরিয়া সড়ক বিভাগের উপ-সহকারি প্রকৌশলৗ আবু আহসান মো: আজিজুল মোস্তাফা বলেন, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া ডুলাহাজারা বাজার থেকে উত্তরে হারবাং ইউনিয়নের আজিজগর জালিয়ার ঢালা পর্যন্ত ও দোহাজারি অংশে সড়কের বিভিন্ন অংশের ১৫ কিলোমিটার ও কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ উপবিভাগের ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার সহ মাট ১৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলাকায় ওভারলে কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উন্নয়ন কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন কুমিল্লার ঠিকাদারী প্রতিষ্টান রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিডেট ও হাতেম বিল্ডার্স লিমিটেড নামে জয়েন্টবেঞ্চার প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, চলমান কাজের মধ্যে ১৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার ওভারলে, ১৮০ মিটার ড্রেইন, ৩৫টি সাইন সিগনাল, বিভিন্ন অংশে গাইডওয়াল, হার্ড সোল্ডারের উপর কার্পেটিংয়ের কাজ বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। এক পর্যায়ে সিডিউলের নিয়ম মানা হচ্ছে না স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, ওভারলে কাজে চার ধরণের ইন্ডিয়ান পাকুয়া পাথরের সঙ্গে মিশ্রন ঘটিয়ে প্রতি বর্গফুটে যে পরিমাণ বিটুমিন সংমিশ্রিত পাথর বসানোর কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে সড়কের ওভারলের কাজ ৪০ভাগ ও অন্যান্য কাজগুলো শতভাগ শেষ হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে সড়কের দুপাশে কোথাও হার্ড সোল্ডারের কাজ ও কাজের উপর কার্পেটিংয়ের কাজ দেখা যায়নি। স্থানীয় একাধিক ঠিকাদার ও জনপ্রতিনিধিরা দাবি করেছেন, ওভারলে প্রকল্পের আওতায় নিন্মমানের উন্নয়ন কাজের কারণে চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে এসব কাজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এলাকাবাসি সাংবাদিকদের জানান, সড়কের দুপাশে হার্ড সোল্ডারের কাজগুলো আগেই করা ছিল। বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হার্ড সোল্ডারের ৮শ মিটারের কাজ করেছেন বলে দাবী করলেও তা সঠিক নয়। গত ডিসেম্বর মাসে কাজটি শুরু করে চলতি মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা এবং জুন মাসে সরকারি কোষাগার থেকে বিলের টাকা উত্তোলনের জন্য জোরেসুরে রাস্তায় আস্তরণ প্রলেপ দেয়া হচ্ছে। মহাসড়কের ১৯ কিলোমিটার এলাকার সড়ক উন্নয়নের জন্য যে পরিমাণ সরকারি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তার অর্ধেক টাকাও উন্নয়ন কাজে ব্যয় হবে না বলে ধারণা করেছেন স্থানীয় বিভিন্ন সংস্থার ঠিকাদার, জনপ্রতিনিধিসহ অভিজ্ঞমহল। অনিয়মের বিষয়টি সত্য নয় দাবী করে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া মুঠোফোনে বলেন, উন্নয়ন কাজে কোন ধরণের অনিয়ম হচ্ছেনা। হার্ড সোল্ডার সড়কের সব জায়গায় দিতে হচ্ছে না, যেখানে দেয়া প্রয়োজন- সেখানে দেয়া হচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শতভাগ ভাল কাজ করছেন দাবী করে তিনি উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, আপনি ইঞ্জিনিয়ার নাকি? কাজের অনিয়মের ব্যপারে আপনি কি বুঝবেন। আমি প্রকৌশলী, কাজের ব্যাপারে আপনার চেয়ে আমি ভাল বুঝব।
×