ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

তামিমদের বিশ্রামে রাখলে বিকল্প কোথায়?

প্রকাশিত: ১২:০৭, ৬ আগস্ট ২০১৯

তামিমদের বিশ্রামে রাখলে বিকল্প কোথায়?

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার মাত্র কিছুদিন পরই ছিল শ্রীলঙ্কা সফর। ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মুশফিকুর রহীম ছাড়া আর কোন ক্রিকেটারই ভাল পারফর্মেন্স দেখাতে পারেননি। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে ছিল বেহাল অবস্থা। বিশ্বকাপে প্রত্যাশিত নৈপুণ্য দেখাতে না পারা তামিম ইকবাল এ সিরিজেও চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। সে কারণে অনেকেই মনে করছেন তামিমসহ সিনিয়র ক্রিকেটারদের টানা খেলার ক্লান্তি থেকে মাঝেমাঝে বিশ্রাম দেয়া জরুরী। তবে পঞ্চপা-বের ওপর নির্ভরশীল দলে সেজন্য নতুন কাউকে সুযোগ করে দিতে হবে। সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক এবং বর্তমানে জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান মনে করেন, প্রতিবছর অন্তত একজন করে নতুন খেলোয়াড়কে জাতীয় দলের জন্য বের করে আনতে হবে ভবিষ্যতের চিন্তা করে। সেই সুযোগ তাদেরই দেয়া উচিত যারা বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট, একাডেমি ক্রিকেট ও ‘এ’ দলের হয়ে ভাল করতে পারবে। তাই সেদিকেই এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অধিক মনোযোগী হওয়া উচিত বলে মনে করছেন আতহার। এ বছরে আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামের (এফটিপি) আওতায় আর কোন ওয়ানডে ম্যাচ নেই বাংলাদেশের। আগামী বছর টি২০ বিশ্বকাপের আগে দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোয় টেস্ট ও টি২০ ম্যাচ রয়েছে। আগামী বছর মে-জুনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ওয়ানডে ছাড়া আর কোন ৫০ ওভারের আন্তর্জাতিক ম্যাচ নেই বাংলাদেশের। এ বিষয়ে আতহার বলেন, ‘এফটিপি অনুসারে এই সময়ের মধ্যে আসলে সব দলই ওয়ানডে কম খেলবে। কারণটা আমরা জানি যে, আগামী বছর টি২০ বিশ্বকাপ রয়েছে। তাই সবাই বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্যই এমনটা করবে। তাই এফটিপিতেও আইসিসি এমনই রেখেছে। তাছাড়া ইতোমধ্যে দুই বছর মেয়াদী টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়েছে। সেজন্য আমি মনে করি ওয়ানডে না খেলাটা কোন চিন্তার বিষয় নয়। আমরা দীর্ঘদিন ওয়ানডে, টেস্ট ও টি২০ খেলে পেশাদার হয়ে উঠেছি। সেদিক থেকে যখন যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে আমাদের অবশ্যই মানিয়ে নিতে হবে।’ কিন্তু ক্রিকেট পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে বিসিবি কতটা এগিয়ে যেতে পেরেছে? গত দেড়/দুই বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। এরপরও শেষ ওয়ানডেতে তারা চার নিয়মিত পারফর্মারকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে খেলেছে। বাংলাদেশ দল তেমনটা পারেনি। তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মাশরাফি বিন মর্তুজার ওপর চরমভাবে নির্ভরশীল দলকে তাদের ওপরই আস্থা রাখতে হয়। সে কারণেই আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের পরই বিশ্বকাপে দেড় মাস খেলে আসলেও শ্রীলঙ্কা সফরে বিশ্রাম পাননি সিনিয়র ক্রিকেটাররা। কারণ, উপযুক্ত বিকল্প বাংলাদেশ দলের জন্য নেই। মাশরাফি, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ইনজুরির কারণে এবং সাকিব, লিটন কুমার দাস ছুটি নেয়াতে কয়েকজন সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু তামিম, মুশফিক, রিয়াদকে দলে রাখতেই হয়েছে। তারই প্রভাব পড়েছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। টানা খেলার ক্লান্তি থেকে বের হতে না পেরে তামিম নিজের ফর্ম ফিরে পাননি। এ বিষয়ে আতহার বলেন, ‘আমাদের আসলে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের দিকে নজর দিতে হবে খুব ভালভাবে। বিশেষ করে তাদের জন্য উন্নত মানের কোচিং স্টাফ রাখা জরুরী। সাইফউদ্দিন কিন্তু একাডেমি থেকে বেরিয়ে এসেছে। এ রকম আমরা যদি প্রতিবছরে একজন করে ভাল ক্রিকেটারকে জাতীয় দলে এনে নিয়মিত করতে পারি তাহলে ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। এখনও যে কেউ সুযোগ পাচ্ছে না সেটাও নয়। সাকিবের অভাব পূরণের জন্য তাইজুলকে আনা হয়েছে, সে কিন্তু ভাল বোলিং করেছে। কিন্তু আমরা সবাই জানি সাকিবের বিকল্প হয় না। তাইজুল বোলিংয়ে ভাল করতে পারলেও সাকিবের মতো ব্যাট কিন্তু কেউ করতে পারেনি। তার জন্য সবসময় আমাদের দুইটা খেলোয়াড়ের কথা ভাবতে হয়। সেজন্য আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা যেন একটা করে সাকিব, একটা তামিম, একটা রিয়াদ বের করে আনতে পারি।’ আতহার অবশ্য হতাশ হচ্ছেন না। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট দল ইংল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলছে। সেখানে বাংলাদেশের যুবারা দুর্দান্ত পারফর্মেন্স দেখিয়েছে। তাই ভবিষ্যতটা গড়ে উঠছে বলেই মনে করছেন তিনি। আতহার বলেন, ‘ইংল্যান্ডে গিয়ে খেলাটা কিন্তু সহজ নয়। অনুর্ধ-১৯ দলের ওদের তো তেমন অভিজ্ঞতাও নেই। এরপরও কিন্তু অনেক ভাল করছে। তানজিদ হাসান, তৌহিদ হৃদয়, তানজিম হাসান সাকিবরা দারুণ পারফর্মেন্স করেছে। তাই বলব যে আমাদের ভাল খেলোয়াড় নেই তেমন নয়। এখন এদের দিকে আমাদের আরেকটু পরিচর্যা বাড়িয়ে দিতে হবে যেন দ্রুত তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসে ভাল করতে পারে। তাদের সুযোগ করে দিতে হবে। সুযোগ না পেলে ভাল ক্রিকেটার পাব কিভাবে। ইমরুল কায়েস একজন ভাল ক্রিকেটার, কিন্তু সে সুযোগ পাচ্ছে না। আবার এনামুল হক বিজয় অনেকদিন পর সুযোগ পেয়েছিল এবার। এভাবে সুযোগ পাচ্ছে অনেকেই। তবে এসে ভাল করতে না পেরে তারা বাদ পড়ে যাচ্ছে। সময়টা দিতে হবে। সুযোগ বেশি বেশি পেয়ে গেলেই একজন ভাল ক্রিকেটার তৈরি হতে পারে।’ তামিম, সাকিব, মুশফিকরা অনেক সময় ও সুযোগ পেয়েছে বলেই তারা আজ নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ দলের। কিন্তু তামিম এই মুহূর্তে টানা ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী। এ বিষয়ে আতহার বলেন, ‘সব ক্রিকেটারেরই কিছু খারাপ সময় আসে। তার বিশ্রামের ব্যাপারে যারাই বলছে আমিও সেটার সঙ্গে একমত। টানা খেলার মধ্যে থাকলে অবশ্যই কারও বিশ্রামের প্রয়োজন। একজন মানুষ যে কাজটি করে, টানা সেটি চালিয়ে যেতে পাওে না একভাবে। তারও বিশ্রামের দরকার হয়। আমাদের প্রত্যাশা থাকে তামিমের কাছ থেকে অনেক বেশি। সে রান করতে না পারলে আমাদের মেনে নেয়াটা কষ্ট হয়। আমি শ্রীলঙ্কায় দেখেছি তার ভাগ্যটাও সহায়তা করেনি। প্রথম ম্যাচে খুবই ভাল বলে সে আউট হয়েছে, দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হয়েছে। আমাদেও ধৈর্য ধরতে হবে। তামিম যে ধরনের ব্যাটসম্যান, আমি মনে করি সে দ্রুতই এই খারাপ সময়টা কাটিয়ে উঠবে। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে (টি২০ বিশ্বকাপ, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ), তাই তার রানে ফেরাটা আমাদের জন্য জরুরী।’
×