স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রথম টি২০তে লড়াই করে হেরেছে বাংলাদেশ। ২০ রানে হেরেছে। এবার সামনে দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচ আছে। রবিবার পোচেফস্ট্রুমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচটি দিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষ হবে। শেষ ম্যাচটিতেই জেতার আশা বাংলাদেশের। প্রথম টি২০ ম্যাচটিই এজন্য প্রেরণা হয়ে দাঁড় হচ্ছে।
প্রথম টি২০ ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ ওপেনার সৌম্য সরকারের কণ্ঠেই সেই আশার ইঙ্গিত মিলেছে। বলেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা দুই শ’র (১৯৫ রান) মতো রান করেছে। আমরা ১৭৫ রান করেছি। অবশ্যই আমাদের সামর্থ্য আছে পুরোটা যাওয়ার। মাঝখানে যদি একজন ব্যাটসম্যান রান পেত আমরা হয়তো সহজেই ম্যাচটা জিতে যেতাম। এখান থেকে আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস বেড়েছে যে, আমরা দুই শ’ রান করতে পারি।’ বিশাল রান তাড়া করতে গিয়ে শুরুটা দুর্দান্ত করেছিল বাংলাদেশ। মাঝপথে একটু বিপত্তি হয়েছিল। কিন্তু শুরুতে সৌম্যের (৪৭) অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পর যখন সাব্বির রহমান (১৯), মেহেদী হাসান মিরাজ (১৪), মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন (৩৯*) হাল ধরলেন দল এগিয়ে যেতে থাকল। একটা সময় ১৮০ রানের ঘরেও চলে যায়। কিন্তু আর কোন বল জমা না থাকায় হারতেই হয়। টেস্ট সিরিজ, ওয়ানডে সিরিজে চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিতে পারেনি বাংলাদেশ। অথচ টি২০তে লড়াই করেছে। বাংলাদেশের হারের পেছনে আসলে ডট বলকেই দায়ী করা হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়েও বেশি ডট বল হয়েছে। সেখানেই আসলে পেছনে পড়ে গেছে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ২২টি ডট বলের বিপরীতে বাংলাদেশের ডট বল হয়েছে ৪৫টি। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে চার-ছক্কা থেকে এসেছে ৮৮ রান। বাংলাদেশের এসেছে ৯৮ রান। চার-ছক্কায় বাংলাদেশ বেশি রান তুলতে পারলেও ডট বল বেশি হয়ে গেছে। সেখানেই পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। সৌম্য যেমন বলেছেন, ‘ডট বল তো টি২০তে বড় একটা ব্যাপার। কিন্তু তার আগে আমরা যখন ফিল্ডিং করেছি রান আরও কম দিতে পারলে ভাল হতো। কিছু বল ওয়াইড হয়েছে। ফিল্ডিংয়ে একটা দুইটা মিস হয়েছে। ওই রানগুলো যদি আমরা না দিতাম তখন দেখা যেত আরও ২০টা রান কম হতো। ওদের রান থাকত ১৭০-এর মতো।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘ওই রান পেলে একটা আলাদা মনোবল থাকত। ডট বল হয়েছে, এটা অবশ্যই আমাদের জন্য ভাল না। পরের ম্যাচে যদি ডট বল কমাতে পারি তাহলে রান আরও বেশি হবে।’
সৌম্যের উড়ন্ত সূচনার পর সাব্বির, মিরাজ, সাইফুদ্দিন যা করেছেন, এরসঙ্গে আরেক ব্যাটসম্যান যোগ দিতে পারলেই হতো। বিশেষ করে সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহর মধ্যে একজন সিনিয়র যদি একটা বড় ইনিংস খেলে দিতে পারতেন তাহলে দল হয়তো জিততেও পারত। তাই ব্যাটসম্যানদের দিকেই তীর ছুড়েছেন সৌম্য। বলেছেন, ‘আমাদের ৩ থেকে ৬ নম্বর ব্যাটসম্যানের কেউ যদি বড় রান করতে পারতাম তাহলে হয়তো ভাল হতো। (জেতা) সহজ হতো। তখন শেষ ১০ ওভার নিয়ে চিন্তা করতে হতো না। একটা থিতু ব্যাটসম্যান থাকলে আরও সহজে অনেক কিছু হতে পারত।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘১৩০ রানের একটা পরিকল্পনা থাকে, ১৯০ রানের আরেকটা পরিকল্পনা থাকে। অবশ্যই ১৯৬ রানের এই লক্ষ্য জেতার মতোই ছিল। আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম, যতটুকু সম্ভব আমরা ইতিবাচক ক্রিকেট খেলব। নিজেদের শতভাগ দিয়ে যতটুকু যাওয়া যায়।’ কিন্তু হয়নি।
সৌম্য যে শুরুটা করেছিলেন তাতে তাল মেলানো যায়নি। সৌম্য তাই ম্যাচটিতে বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোরারই হয়ে থাকলেন। এই ইনিংসে অবশ্য সৌম্যের মুখে হাসি ফুটতে পারেনি। দল যে জিততে পারেনি।
চোটের জন্য প্রথম টেস্ট খেলা হয়নি। দ্বিতীয় টেস্টে এক ইনিংসেও দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। প্রথম দুই ওয়ানডেতেও একাদশের বাইরে ছিলেন। তৃতীয় ওয়ানডেতে একাদশে থেকেও নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। যে সময়টি গেছে তাতে প্রথম টি২০তে নৈপুণ্যে করে স্বস্তিতেই থাকার কথা। কিন্তু সেই স্বস্তি মিলছে না। দল যে জিতেনি। তাই সৌম্য বলেছেন, ‘যদি আমি ইনিংসটা বড় করতে পারতাম। দল যদি জিততে পারত তখন ইনিংস নিয়ে কথা বলা যেত। এখন আমিও শেষ করতে পারিনি, আগেই আউট হয়ে গেছি। দলও জেতেনি অবশ্যই এই রানটার (অত গুরুত্ব) নাই। ভিন্ন ফরমেটে খেললে তার একটা আলাদা পরিকল্পনা থাকে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ টি২০ দুইটা যেভাবে খেলেছিলাম, পরিকল্পনা ছিল সেভাবেই খেলব। একইভাবে খেলেছি।’ সৌম্য সফলও হয়েছেন। কিন্তু দল শেষ পর্যন্ত লড়াই করেও সফল হতে পারেনি। তবে এই লড়াই-ই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে। দ্বিতীয় টি২০তে জেতার আশা জাগাচ্ছে।