ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সোমবার বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড দু’দলই পৌঁছেছে চট্টগ্রামে, বুধবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে

এবার সাগরিকায় সিরিজ জয়ের লড়াই

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১১ অক্টোবর ২০১৬

এবার সাগরিকায় সিরিজ জয়ের লড়াই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ তেরো বছর আগে চট্টগ্রাম শহরে প্রথমবার গিয়েছিল ইংল্যান্ড। সেবার বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিল দলটি। কারণ, দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে এসে চট্টগ্রামে গিয়েই টেস্ট সিরিজ নিশ্চিত করেছিল ইংলিশরা, মাইকেল ভনের নেতৃত্বে ইংল্যান্ড ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশকে। এ কারণে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে নামার আগে বেশ খোশ মেজাজেই ছিল তারা। কিন্তু এবার প্রেক্ষিত ভিন্ন, ভেন্যুও আলাদা- সাগরিকার মাঠ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড যে কেউ জিততে পারে সিরিজ। কারণ সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ তৃতীয় ওয়ানডেতে নামার আগে উভয় দলই মিরপুরে একটি করে ম্যাচ জেতে যাওয়ায় এখন ১-১ সমতা। এই মাঠটি বাংলাদেশ দলের জন্য পয়মন্ত ভেন্যু হিসেবেই পরিচিত। কারণ ১৬ ম্যাচের ১০টিতেই জিতেছে এখানে টাইগাররা। সর্বশেষ ৮ ম্যাচের মধ্যে তো একটিই মাত্র পরাজয়, সেটাও ২০১১ সালে প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের সঙ্গে। প্রথম ওয়ানডে হারের পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের তাই এখানেই ইংলিশদের বিপক্ষে সিরিজ জেতার স্বপ্ন। সেক্ষেত্রে টানা ৭ ওয়ানডে সিরিজ জয় করবে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। সিরিজ জয়ের অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে সোমবার চট্টগ্রাম পৌঁছেছে উভয় দল। এখন চূড়ান্ত লড়াইয়ে নামার অপেক্ষা। ২০০৩ সালে চট্টগ্রামে প্রথমবার বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে। সেই ম্যাচে ৭ উইকেটে জিতেছিল সফরকারীরা। ৭ বছর পর আবার চট্টগ্রামের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে নামছে ইংল্যান্ড। সেটা সাগরিকায়, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। ২০১০ সালের ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত সে ম্যাচে ৪৫ রানে জয়ী হয় ইংল্যান্ড। কিন্তু ঠিক সে বছরই প্রথমবার ইংলিশদের বধ করে গৌরব বয়ে আনে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ইংলিশ ভূমি ব্রিস্টলে ১০ জুলাই ৫ রানের অবিশ্বাস্য জয়টাই ছিল প্রথমবার ইংল্যান্ডকে হারানো। এরপর থেকেই ছক পাল্টে গেছে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নামলেই যেখানে নিশ্চিত পরাজয় আগে ভাগে জেনে নেয়া যেত, এখন বরং উল্টোটা জয়ের পাল্লা ঝুঁকে থাকে বাংলাদেশের দিকেই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টানা ১২ হারের পর ব্রিস্টলে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ, এরপর আরও ৫ বার ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে দল। এর মধ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে ৩-২ ব্যবধানে। এখন লড়াইটা যে দারুণ জমজমাট এবং হাড্ডাহাড্ডি সেটা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে ২০১১ সালেই দেশের মাটিতে প্রথমবার ইংলিশদের বধ করেছে বাংলাদেশ। ২০১১ সালের ১১ মার্চ বিশ্বকাপের ম্যাচে ২ উইকেটে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ এই সাগরিকার মাঠেই। আর এবার ওয়ানডে সিরিজে ইংলিশদের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলছে মাশরাফির উজ্জীবিত দল। যে দলটি গত দেড় বছর ধরে ভীতিকর একটি শক্তি হিসেবে বিশ্ব ক্রিকেটে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশের মাটিতে সর্বশেষ ২০১৪ সালের জুনে সফরকারী ভারতের দ্বিতীয় সারির দলের কাছে ২-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। এরপর আর টাইগারদের পরাজয়ের গ্লানি দিতে পারেনি কোন দলই। ২০১৪ সালের শেষদিকে বাংলাদেশ দলের ক্ষুদ্র পরিসরের ক্রিকেট অধিনায়ক হন মাশরাফি। এরপরই দুরন্ত হয়ে ওঠে টাইগাররা। ২০১৪ সালের নবেম্বরে জিম্বাবুইয়েকে ৫-০, গত বছর এপ্রিলে পাকিস্তানকে ৩-০, জুনে পূর্ণশক্তির ভারতকে ২-১, জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২-১ এবং নবেম্বরে জিম্বাবুইয়েকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জয় করে। এরপর দীর্ঘ বিরতির পর সেপ্টেম্বরের শেষে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে খেলতে নেমে সিরিজ জয় দিয়েই আবার শুরু করে টাইগাররা। ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জয় করে নেয় আফগানদের বিপক্ষে। টানা ৬ সিরিজ জয় হয়ে গেছে। এবার রেকর্ড সপ্তম সিরিজ জয়ের হাতছানি। সেজন্য সাগরিকায় জিততে হবে বাংলাদেশকে। পয়মন্ত এ ভেন্যু কি আরেকটি গৌরব দেবে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে? এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪ ম্যাচ হারের পাশাপাশি ৪ ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জেতা হয়নি ইংলিশদের বিপক্ষে। এবারই দারুণ সুযোগ দেখছেন অধিনায়ক মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘এমন একটি ম্যাচ জেতার পর নৈতিক ও মানসিকভাবে সবার অবস্থা ভাল হওয়ার কথা। সবাই যদি ফিট থাকি এবং চট্টগ্রামে গিয়ে ভালভাবে প্রস্তুতি নিতে পারি সেক্ষেত্রে ভাল সুযোগ আছে।’ শুরু থেকেই বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ নিয়ে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা ছিল ইংলিশদের। তবে ঢাকার সঙ্গে মানিয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিল তারা। সাগরিকায় সেই সুযোগ মাত্র দুই দিন। সোমবার ও আজ অনুশীলন করে আজই সাগরিকায় নামতে হবে তাদের। দ্বিতীয় ওয়ানডে থেকেই সিরিজের উত্তাপ অনেকখানি বেড়ে গেছে। মাঠে উভয় দলের ক্রিকেটাররা বাগ্বিত-ায় জড়িয়েছেন। উভয় দলই সাগরিকায় জেতার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে নিজেদের পয়মন্ত ভেন্যুতে টাইগাররা এগিয়ে থাকবে। এখন মাঠের খেলার ওপরেই নির্ভর করছে সবকিছু।
×