ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ-উল-আজহায় উপলব্ধি

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

প্রকাশিত: ০০:৪১, ১৪ জুলাই ২০২২

ঈদ-উল-আজহায় উপলব্ধি

দোয়া করি

সদ্য সারাদেশে বিপুল উসাহ-উদ্দীপনায় ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে উদ্যাপন করা হলো ঈদ-উল-আজহামুসলমানদের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উসবটি উদ্যাপনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে উসাহ আর উসবের কোন ঘাটতি ছিল নাবাড়বাড়ন্ত কোভিডের চোখ রাঙানিও এতে কোন ছেদ টানতে পারেনিঈদেন দিন রাতে দেশের বড় মাপের একটি টিভি চ্যানেলের টকশোতে আমার ডাক পড়েছিল ঈদ নিয়ে আলোচনা করার জন্যঈদ-উল-আজহা উদ্যাপনের ধর্মীয় প্রেক্ষাপটটি যথারীতি আলোচনায় উঠে এলোএ বিষয়ে আলোচনার জন্য দেশের একজন বিশিষ্ট আলেম অনুষ্ঠানটিতে যোগ দিয়েছিলেনতিনি এ বিষয়ে যে ব্যাখ্যাটি প্রদান করলেন তা অবশ্য আমাদের সবার জানাআমাদের মনের ভেতরে লালিত যত হিংসা-বিদ্বেষ আর লোভ, সেসবকে বিসর্জন দিয়ে একটি আদর্শ জীবনযাপনের প্র্যাক্টিসটাই মূলত আমরা মুসলমানরা ঈদ-উল-আজহা উদ্যাপনের মাধ্যমে করে থাকি

একজন ভাল মানুষ হিসেবে একটি ভাল জীবনযাপনই প্রত্যেক মুসলমানের প্রতি ইসলামের নির্দেশঈদ-উল-আজহায় আমরা যে প্র্যাক্টিসটি করি তা আমাদের জন্য অবশ্য পালনীয়- বছরের তিনশপঁয়ষট্টিটি দিনই যদি আমরা সত্যিকারের মুসলমান হয়ে থাকিতারপরও বছরের তিনশপঁয়ষট্টি দিন ঈদ-উল-আজহা উদ্যাপন না করে বছরের একটি বিশেষ দিনে এই ঈদটি উদ্যাপনের উদ্দেশ্য সারাবছরের জন্য যা অবশ্য পালনীয় তার একটি প্রতীকী এক্সারসাইজ করা

টকশোতে বসেই বিজ্ঞ সহ-আলোচকদের আলোচনা শুনতে শুনতে ভাবছিলাম, ঈদ-উল-আজহার উদ্যাপনের যে মর্মবাণী তা বোধকরি সেদিনের চেয়ে আজ আরও বেশি করে প্রযোজ্য এবং পাশাপাশি বছরের তিনশপঁয়ষট্টিটি দিন তার প্রতিপালন, সেদিনের চেয়ে আজকের দিনে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিংও বটেসেদিনের চ্যালেঞ্জটা ছিল সাম্যের ভিত্তিতে একটি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠারএখন সেই চ্যালেঞ্জটা তো আছেই, সঙ্গে বাড়তি যোগ হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার চ্যালেঞ্জটিওসেদিন মহান আল্লাহর প্রেরিত রসুল এবং পয়গম্বরগণ সমাজে ধর্মীয় উগ্রতাকে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেননি, বরং তা নিরুসাহিত করেছেনমক্কায় বিপুল বিজয়ের পর মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) সেখানে সকল ধর্মের স্বাধীনভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত করেছিলেন

সেখানে একজন মানুষের ওপরও সেদিন ইসলাম চাপিয়ে দেয়া হয়নিএমনকি তাঁর চাচা আবু লাহাব ইসলাম ধর্ম কবুল না করেও মক্কাতেই মৃত্যুবরণ করেছিলেনমহানবীর অনুসারী ইসলাম প্রচারকরাও পরবর্তী সময়ে মানুষের মন জয় করেই তাদের ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করেছিলেন, তরবারির তাগদে নয়আমাদের এই ভূখ-েও এর ব্যতিক্রম ঘটেনিহযরত শাহজালাল (রাঃ) এবং তাঁর সহগামী তিনশষাটজন আউলিয়া এদেশে ইসলামের বাণী প্রচার করেছিলেন আর জিতে নিয়েছিলেন বাঙালীর বিশ্বাস ও আস্থাতাঁরা তরবারি দিয়ে গলা কেটে আর ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি করে এখানে ইসলাম প্রচার করেননি

গভীর রাতে টিভি স্টুডিওতে বসে এবং এরপর বাসায় ফিরতি পথে ভাবছিলাম, সমাজে যে শ্রেণী বৈষম্য তা তো সেদিনের মতো আজও বিদ্যমানএর পাশাপাশি আজকের সমাজে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তারতা থামানোর উপায় কি? আর তো কোন রাসুল বা পয়গম্বর আমাদের মাঝে এসে আমাদের সঠিক পথের নির্দেশ দেবেন নাঅতএব, আমাদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থে যেমনটি বলা আছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে ভাল মানুষদের জন্য বসবাস উপযোগী ভাল মানুষের দেশ প্রতিষ্ঠার কাজটি তো আমাদেরই করতে হবেকিন্তু সমস্যা হচ্ছে সেই কবে থেকেই তো এদেশে ইসলামকে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয়েছে মানুষকে বেকায়দায় ফেলার জন্য আর নিজ স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবেআমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে ইসলামের নামে এদেশে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত বইতে দেখেছি; কখনও ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যায় ধর্ম ব্যবসায়ীদের অমুসলমান নারীকে বানাতে দেখেছি গনিমতের মাল

বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের পবিত্র রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে জিয়া-মোশতাক চক্রকে আমরা এদেশেই দেখেছি ইসলামের নামে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভাগাড়ে পাঠানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হতেআবার লম্পট রাষ্ট্রপতির হাতে ব্যক্তির ধর্মকে রাষ্ট্রের ধর্মে পরিণত করার অপচেষ্টাও তেমনি আমাদের দেখতে হয়েছে এ দেশেইএমনকি এখনও এদেশেই শিক্ষককে গলায় জুতার মালা পরতে হয় আর যেতে হয় কারাগারে ইসলাম ব্যবসায়ীদের চতুরতায়আর আমরা দেশের বৃহ জনগোষ্ঠী তা কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি

তাই বলে কিন্তু ইসলামের অবমাননা হয়নিইসলাম তার জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ স্থানেই রয়েছেবরং নানা সময়ে যারা ইসলামকে পণ্য করে নিজেরা ধন্য হতে চেয়েছে, তারাই গিয়ে ঠেকেছে ভাগাড়েআজও যারা এদেশে ইসলামের ধ্বজাধারী হয়ে ইসলাম বিকৃতির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, তাদের স্থানও যে একদিন সেখানটাতেই হবে, তা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ ন্যূনতমআমরা যারা ঈদ-উল- আজহা উদ্যাপনে মাতি, শত কষ্টে কত ঘণ্টায় দেশে যাই স্বজনদের সঙ্গে এই ঈদের আনন্দটুকু ভাগ করে নিতে, এ জন্য তাদের করণীয় কিন্তু অনেকখানিঈদ-উল- আজহাকে শুধু উদ্যাপন করলেই হবে না, অনুধাবনও  করতে হবে

দেশে পরিবারের সঙ্গে ঈদ-উল-আজহা উদ্যাপন শেষে আবারো শত কষ্টে অত ঘণ্টার ফিরতি পথের অলস বসায় এই বিষয়টুকু যদি আমরা একটু চর্চায় নেই, আর মজ্জায় ধারণ করি, তাতেই বোধ করি ঈদ-উল-আজহা নামক আমাদের বাসরিক আনন্দ উদ্যাপনের এই এক্সারসাইজটি পরিপূর্ণতা পাবে

লেখক : ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

×

শীর্ষ সংবাদ:

গাজীপুরে দুই ট্রেনের সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত
জেনে নিন এসএসসির ফল প্রকাশের তারিখ
যে কারণে ইতালির ভিসা পেতে দেরি হচ্ছে, জানাল দূতাবাস
তীব্র তাপদাহের পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি
মিল্টন সমাদ্দার ৩ দিনের রিমান্ডে
১২ কেজি এলপিজির দাম কমলো ৪৯ টাকা
শনিবার মাধ্যমিক, রোববার খুলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়
শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ
স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন না ৫ লাখ আবেদনকারী, শঙ্কায় চালকরা
ঢাকায় পৌঁছেছে ভূমধ্যসাগরে নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ
সীমান্ত থেকে ১০ জেলেকে অপহরণ করেছে আরাকান আর্মি
অর্থ আত্মসাৎ মামলায় ইউনূসহ ১৪ জনের জামিন
ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করছে কলম্বিয়া
বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়,অথচ বাইডেন চুপ!