ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাওয়া যাবে

আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি দ্রুত ছাড়করণে চিঠি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি দ্রুত ছাড়করণে চিঠি

বাংলাদেশকে দেওয়া আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার

বাংলাদেশকে দেওয়া আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার দ্রুত ছাড়করণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সংস্থাটিকে অনুরোধ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদ বরাবর ওই চিঠি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। তাদের যৌথ স্বাক্ষরকৃত চিঠিটি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান কার্যালয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি মাসের ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড় করবে সংস্থাটি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 
জানা গেছে, আইএমএফের এই ঋণের ডলার পাওয়া গেলে তা তাৎক্ষণিকভাবে সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ সরকারের নির্দিষ্ট হিসাবে (এ্যাকাউন্ট-নম্বর) জমা হবে। সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এখান থেকে দেশীয় মুদ্রা সংগ্রহ করে তা নির্ধারিত প্রকল্পে খরচ করবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে যুক্ত হবে ঋণ থেকে পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রা ডলার। এতে করে রিজার্ভ বাড়বে। সারা বিশ্বে এখন ডলার সংকট চলছে।

বিশেষ করে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো ডলার সংকটের কারণে আমদানি-রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধনে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ অবস্থায় আইএমএফের এই ঋণ থেকে প্রাপ্ত ডলার রিজার্ভে যুক্ত হলে দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ডলার সংকট নিয়ে দেশের অর্থনীতিতে যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল তা দূর হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। 
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, আইএমএফ থেকে এই ঋণ পাওয়া দেশের জন্য একটি বড় সুযোগ। মোটা দাগে ডলার সংকট দূর হবে। একই সঙ্গে আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে সেগুলো পালনে যথাযথ পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। সংস্থাটি যেসব সংস্কারমুখী প্রস্তাব দিয়েছে তা ঠিকই আছে। আইএমএফ বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকি ব্যয় কমিয়ে আনার কথা বললেও কৃষির ক্ষেত্রে কোন শর্ত দেয়নি।

কিংবা ব্যাংকও আর্থিক খাত সংস্কারের কথা বলেছে। একই সঙ্গে ব্যয় সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ করে রাজস্ব আদায়ের কথা বলছে আইএমএফ। তিনি বলেন, অর্থনীতিবিদ হিসেবে আমরাও বিভিন্ন ফোরামে বিভিন্ন সময়ে এসব কথা বলে এসেছি। এ কারণে ঋণের পরবর্তী কিস্তিগুলো যাতে দ্রুত ও সঠিক সময়ে পাওয়া যায় সে লক্ষ্যে এখন থেকে কাজ শুরু করতে হবে। অন্যথায় আইএমএফ যে কোন সময়ে ঋণের কিস্তি আটকে দিতে পারে। 
জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী ও গভর্নর কর্তৃক আইএমএফকে লিখিত ওই চিঠিতে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে ঋণের অর্থ দ্রুত ছাড়করণের বিষয়ে। গত ৩০ জানুয়ারি সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের বোর্ড মিটিংয়ের আগেই চিঠিটি প্রধান কার্যালয়ে পৌঁছে যায়। এ কারণে বোর্ড মিটিংয়ে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদনের সময় দ্রুত অর্থ ছাড়করণের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র। জানা গেছে, আইএমএফের বোর্ড মিটিংয়ে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনাসহ রিজার্ভ নিয়েও আলোচনা করেন সংশ্লিষ্টরা।

ওই বৈঠকে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফররত সংস্থাটির ডিএমডি অ্যান্তোইতে মনসিও সায়েহ জানান, বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের সংকট চলছে। এ কারণে ঋণের অর্থ দ্রুত ছাড়করণের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের চিঠিটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এতে প্রথম কিস্তি হিসেবে আসবে ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি থেকে দ্রুত ঋণের অর্থ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। 
প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ॥ আইএমএফ তাদের পূর্বাভাসে জানিয়েছে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরে প্রবৃডি অনেকটাই কমবে। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি উঠে যাবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হবে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।

মহামারির আগে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এর আগে কয়েক বছর তা ৮ শতাংশের ওপরে ছিল। আইএমএফের পূর্বাভাস, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হবে। অর্থাৎ আগামী পাঁচ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে ওঠার সম্ভাবনা দেখছে না আইএমএফ। বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করার সঙ্গে দেশের সম্ভাব্য কিছু অর্থনৈতিক সূচক প্রকাশ করেছে আইএমএফ। যদিও আইএমএফের এই পূর্বাভাসের সঙ্গে একমত নয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।

ইআরডি থেকে ইতোমধ্যে প্রবৃদ্ধি আরও বেশি হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবকে ভিত্তি ধরলে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষে অর্থাৎ আগামী জুনের মধ্যে এ রিজার্ভ বেড়ে অন্তত ৩ হাজার ৭৭০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। কিন্তু উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আগামী জুন পর্যন্ত ১৫০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ পাওয়া যাবে বলে সরকার আশা করছে।

×