‘নিরুত্তর পরিবেশন করছেন শিল্পীরা
দেশের একটি অংশের মানুষ ভাসছে বানের জলে। আগ্রাসী বন্যার ভয়াবহতায় ডুবে রয়েছে বাড়িঘর, নিমজ্জিত হয়েছে মাঠের ফসল, ঘটেছে প্রাণহানি। আর এমন দুঃসময়ে বানভাসি মানুষের জন্য সরব হয়েছে শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গন। সেই সুবাদে সাংস্কৃতিক সংগঠন শুদ্ধমঞ্চের আয়োজনে পরিবেশিত হলো নিরুত্তর শীর্ষক গীতিআলেখ্য। অনুষ্ঠানটির মিডিয়া পার্টনার ছিল দৈনিক জনকণ্ঠ। বন্যাপীড়িত মানুষের সহায়তায় গাওয়া হলো গান। সঙ্গে ছিল কবিতার শিল্পিত উচ্চারণ। কবি রামচন্দ্র দাসের লেখা গান ও কবিতা অবলম্বনে গান ও কবিতার সম্মিলনে সজ্জিত আয়োজনটির স্লোগান ছিল ‘জলেডোবা মানুষেরা তো আমাদেরই লোক-আমরা সাথে আছি।’ শনিবার রাতে ধানমণ্ডির ছায়ানট মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আগত দর্শকরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগের পাশাপাশি বানভাসিদের জন্য অর্থ সহায়তা দেন। সেই সঙ্গে পরিবেশনার পাশাপাাশি শুদ্ধমঞ্চের শিল্পীরাও যে যার মতো করে তহবিলে সহায়তা করেছেন।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। শুদ্ধমঞ্চের চেয়ারম্যান শিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রামচন্দ্র দাস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব মসিউদ্দীন খান সমীর।
সম্মেলক গানের সুরে অনুষ্ঠানের অনেক কণ্ঠ মিলে যায় এক সুরে। সবাই মিলে গেয়ে একে একে গেয়ে শোনান ‘আমি এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষায় ডাক দিয়ে যাই মা’, ‘কি হবে হিসেব কষে অপর বেলায়’ ও ‘পরাজয় মানবো না এইখানে’ শিরোনামের সঙ্গীত। একক কণ্ঠের পরিবেশনায় রিদওয়ানা আফরীন সুমী গেয়ে শোনান ‘প্রভু এমন শক্তি চাই যেন প্রতিদিন গত দিনকে ছাড়িয়ে যাই’ শীর্ষক সঙ্গীত। মাহবুবা মীনা পরিবেশন করেন ‘তোমাকে দিলাম নববর্ষের বাঙময় মুখরতা’। বাবুল হোসাইন শুনিয়েছেন ‘তোমার বিশ^ দেউল মাঝে’। মুন্নি কাদের চৌধুরী গেয়েছেন ‘এই ধানসিঁড়িটির তীরে’। শামীমা নাসরিন চমন পরিবেশন করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার/মুক্তিযোদ্ধা আমার অলংকার’। উম্মে রুমা ট্রফি ‘আমার নিঃশ^াসে বাংলা আমার বিশ^াসে বাংলা’। এছাড়া একক কণ্ঠে গান শুনিয়েছেন নিশি কাউসার, নওরোজ ও ফাতেমা তুজ জোহরা।
অনুষ্ঠানে রূপশ্রী চক্রবর্তীর উচ্চারিত কবিতার সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পী অর্পা। চন্দ্রিমা দেয়া পাঠ করেন সেই ফাগুন শিরোনামের কবিতা। এছাড়া অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন মৃন্ময় মিজান, শরমিন জুঁই, নেসার উদ্দিন আইয়ুব, লুলুয়া ইসাহাক মুন ও হাসান মাহাদী।
একা এক নারী নাটকের মঞ্চায়ন ॥ শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকল্প একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার মঞ্চস্থ হয় নাট্যদল নাট্যচক্র প্রযোজিত নাটক একা এক নারী। দারিও ফো এবং ফ্রাংকা রামের লেখা নাটক ‘এ উইমেন এ্যালোন’ বাংলায় নামকরণ করা হয়েছে ‘একা এক নারী’। অনুবাদ করেছেন আবদুস সেলিম। নির্দেশনা দিয়েছেন দেবপ্রসাদ দেবনাথ। আর নাটকটিতে একক অভিনয় করেছেন তনিমা হামিদ।
নাট্যকাহিনীতে দেখা যায়, এক বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে তালাবদ্ধ নিঃসঙ্গ এক নারীর সংলাপের মাধ্যমে নাটকের মূল রূপরেখা বিধৃত। নিত্যদিনের গৃহস্থালি কাজ, অশ্লীল ভীতিপ্রদ ফোন, বিপরীত ফ্ল্যাটের যৌনবিষয়ে অতি উৎসাহী তরুণের সঙ্গোপনে বাইনাকুলারের দৃষ্টি, কামাতুর দেবর, আর সদাক্রন্দনরত শিশু সন্তানের মোকাবেলা করতে করতে এই নারী তার জীবনের আশা-নিরাশা, ভালবাসার কথা বলে যায়।
এর ভেতর তার স্বামী এবং নিজের পরকীয়া প্রেমের কথাও স্থান পায়। এদিকে স্বামীর পরকীয়াতে তার কোন প্রতিবাদের স্থান ছিল না। অথচ তার পরকীয়ার অপরাধে তাকে এই তালাবদ্ধ জীবনযাপনে বাধ্য করেন ঈর্ষাকাতর অক্ষম স্বামী। আপাতদৃষ্টে অবাস্তবতা থেকে এক শোকাবহ অভিজ্ঞতায় উত্তীর্ণ এই নিঃসঙ্গ নারীর স্বগতোক্তির সঙ্গে পুরুষের একতরফা আধিপত্য, নারীর যৌনবঞ্চনা, বাধ্যতামূলক গৃহস্থালি কর্ম, পরপুরুষের যৌন নিপীড়ন এবং সর্বোপরি মারিয়ার গৃহবন্দিত্ব ইত্যাদির সঙ্গে বিশ্বের সকল নারী জাতির যোগসূত্রের সত্যতা স্পষ্ট হয় এ নাটকে। চূড়ান্ত দৃশ্যে বিদ্রোহের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় নারী জাতির অন্তর্গত শক্তির স্বরূপ।