বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ আমাদের সবার মাঝে দুটি সত্তা রয়েছে। একটি সত্তা বাইরে থেকে দেখা যায়, অন্যটি মানুষের ভেতরে থাকে। ভেতরের সত্তাটি হলো বিবেক। বিবেক কখনও অন্ধকার কাজের পক্ষে সাড়া দেয় না। তাই বিবেক যা বলে, সেটি আমাদের শোনা উচিত। বিবেকের কথা শুনলে মাদক থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। তাছাড়া, উন্নয়ন, দুর্নীতি, মাদক এবং ধ্বংস সব একইসূত্রে গাঁথা। এগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে সম্পর্কিত।
সোমবার সকালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ও মাদকাসক্তি: বর্তমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এসব কথা বলেন। ছাত্র-নির্দেশনা ও পরামর্শদান দফতর এবং মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস) এর যৌথ আয়োজনে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানসের সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন ছাত্র-নির্দেশনা ও পরামর্শদান দফতরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মেহজাবীন চৌধুরী।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতায় দুঃখ প্রকাশ করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, যেকোন সঙ্কটে প্রতিবাদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শেষ আশ্রয়স্থল। তবে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আগে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালগুলোর শিক্ষার্থীরা মাদক নিত। যখন এ সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভিযান চালানো হলো, তখন দেখা গেল তাদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর যোগাযোগ রয়েছে। এটি আমাকে ব্যথিত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এদেশের মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। এখানেও যদি নেশার মরণ থাবা পড়ে, তাহলে আমরা কোথায় যাব?
তিনি বলেন, মাদকের ব্যবসা করে অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছে, ২০১৬ সালে দুদকের পক্ষ থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছে এমন গডফাদারদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। সারাদেশ থেকে তিনশরও বেশি নাম আমরা পাই। তবে দুঃখের বিষয় এই যে, এ বিষয়ে যখন তদন্ত শুরু হয়, তখন দেখা যায় প্রায় সকলেরই ভুল ঠিকানা দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে আবারো নতুন করে তালিকা দেয়া হলে, দুর্নীতির দায়ে একজন জনপ্রতিনিধিকেও ধরা হয়। ইতোমধ্যে অবৈধ সম্পদ অর্জনের জন্য ১২ জন গডফাদারের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে কোন চেষ্টাই সফল হবে না, যদি না গণসচেতনতা সৃষ্টি হয়। দুর্নীতির সঙ্গে মাদক, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অব্যবস্থাপনা- সবকিছু জড়িত।
সেমিনারে ‘বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ও মাদকাসক্তি: বর্তমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধে অরূপ রতন চৌধুরী। বাংলাদেশে মাদকাসক্তির অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮০ ভাগই যুবক। এর মধ্যে ৪৩ ভাগ বেকার। ৬০ ভাগ মাদকাসক্ত বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও মাদকাসক্তদের মধ্যে ৪০ ভাগ অশিক্ষিত এবং ৪৮ ভাগ মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষিত। এ সময় মাদক গ্রহণের কারণ, ক্ষতিকর প্রভাব, মাদক চোরাচালানের পথ হিসেবে বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করার বিভিন্ন দিক ও কারণ, মাদক দমনে নতুন আইন, মাদক দমনের অন্তরায়গুলো, মাদকরোধে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, সিগারেট সকল ধরনের মাদক গ্রহণের মূল হোতা। যিনি ধূমপান করেন, তার অন্যান্য মাদক গ্রহণের সম্ভাবনাও বেশি। দেখা যায়, মাদকদসেবীদের মধ্যে ৯৮ ভাগই ধূমপায়ী। এ ছাড়া মাদকদসেবীদের ৫৭ ভাগ যৌনকর্মী। যারা ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করে, তাদের মধ্যে ৭ ভাগই এইচআইভিতে আক্রান্ত। উদ্বেগের বিষয় এই যে, মহিলা ও পথশিশুরা মাদক গ্রহণ থেকে শুরু করে বিক্রয় ও বহনে অধিক হারে যুক্ত হচ্ছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: