ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঋতুর চিত্র- পাল্টে গেছে মাঘ, নিয়ে এসেছে উৎসব

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

ঋতুর চিত্র- পাল্টে গেছে মাঘ, নিয়ে এসেছে উৎসব

সমুদ্র হক ॥ শীত ঋতুর শেষ মাস মাঘে কয়েকটি উৎসব। তবে প্রবাদের মাঘের শীতে বাঘ পালানোর অবস্থা এবারও নেই। গতবারও ছিল না। ঠাহর করা যাচ্ছে না এটা মাঘ না ফাল্গুন। সকালের কুয়াশা দ্রুত কেটে গিয়ে দৃষ্টিসীমা অনেক দূর যাচ্ছে। দুপুর শুরুতে উঠছে টানা রোদ। মধ্য দুপুরে একটু করে বাতাস বইছে। কয়েক পাক দিয়ে ধূলিও উড়ছে। একটু গরমে গা চিটমিট করছে। গলায় মফলার, গায়ে কোট জ্যাকেট রাখা যাচ্ছে না। এই সময় স্যুট (কোট প্যান্ট টাই) পরিহিত যারা অফিস করেন তাদের কোট স্থান ত্যাগ করে চেয়ারের হেলানদানিতে ঝুলে থাকছে। তবে গোধূলিলগ্নে জানান দেয় শীতকাল এখনও ফুরোয়নি। বাংলা সনের মাঘ শীত ঋতুর শেষ মাস। মাঘ নামটি এসেছে মঘা নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান মাঘা থেকে। মাঘের শুরুটা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে আসে সূর্যব্রত। এই দিন অবিবাহিত নারী দ্রুত মনের মতো বর পেতে সূর্যব্রত পালন করে। এই দিন পুরনো ঢাকায় বাঙালীর ঐতিহ্যের সাকরাইন ও ঘুড়ি উৎসব চলে। বর্ণিল আলোয় ঝলসে ওঠা এমন রাত হালে দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে। শুক্লা পঞ্চমীর তিথি নিয়ে আসে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা। এই মাসেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ঘরে মাঘী পূর্ণিমা মাঘের মহাউৎসব হয়ে আসে। কখনও ভরা চাঁদের এই পূর্ণিমা কোজাগরি পূর্ণিমার রূপ এনে দেয়। পৌষ সংক্রান্তিতে সকল পিঠা মাঘের শুরুতে যোগ হয়ে দিনে দিনে ছড়িয়ে পড়ে মাসজুড়ে। মাঘের ব্যর্থতা- পৌষের এই সুর বয়ে বেড়াতে হয়। বিশ^জুড়ে উষ্ণায়নের প্রভাব ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফেরে পড়ে মাঘ তার চিরন্তন রূপ হারিয়ে ফেলছে। সাধারণত মাঘে আসে আমের মুকুল। এবার পৌষে এসেছে। হালে মাঘে আম ফলছে রাজশাহী অঞ্চলে। এখন মাঘে আর সেই শীত থাকছে না। আবহাওয়া বিভাগ অবশ্য বলছে, জানুয়ারির মধ্যভাগের পর শৈত্য প্রবাহের থাবা শুরু হবে। বগুড়ার মাঠের চিত্র তা বলছে না। হিমালয় পাদদেশীয় উত্তরাঞ্চলের চিত্রও কম বেশি একই রকম। কংক্রিটের বন রাজধানী ঢাকা দিনে দিনে উষ্ণাঞ্চলে পরিণত হচ্ছে। তবে আবহাওয়া বিভাগের এক সূত্র জানাচ্ছে, দিনকয়েক পর কংক্রিটের এই বনেও হিমবায়ু ঢুকে পড়বে। ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক আবু হায়দার জানালেন, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ অবস্থান করছে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে। ফলে জানুয়ারি মাসজুড়েই শীত থাকবে। কতটা থাকবে! জানুয়ারির পরের মাস ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগ পর্যন্ত মাঘ মাস। তাহলে মাঘের বাকি অর্ধেকটায় কি শীত থাকবে না! বসন্তের প্রথম মাস ফাল্গুন কি এবার মাঘের শেষ অর্ধেক খেয়ে ফেলবে! এমন আলামত তো এখনই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বহু আগে কবি পি বি শেলী লিখেছেন ‘ইফ উইন্টার কামস ক্যান স্প্রিং বি ফার বিহাইন্ড (শীত আসলে বসন্ত কি খুব দূরে)’। একবিংশ শতকের পৃথিবী শেলীর কথারই পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে। শুধু যোগ হয়েছে ‘জলবায়ুর পরিবর্তন’। ব্রিটিশ কবি এডিথ সিটওয়ে লিখেছেন- শীত হলো স্বাচ্ছন্দ্য ও ভাল খাবারের সময়। আগুনের পাশে বসে উষ্ণতায় গল্প করার সময়। দ্রুত ঘরে ফেরার সময়। তিনি ভাল খাবারের কথা বলেছেন। বাঙালীর প্রেক্ষাপটে শীতে যে কত বাহারি পিঠা। ভাল খাবার তৈরি হয় শীত মৌসুমেই বনভোজনে। বিশ^জুড়ে জানুয়ারি শীতের মাস। বাঙালীর মাঘ মাস নিয়ে আসে অনেক বারতা। এই মাঘ মাসকে ঘিরেই খনা বচন দিয়েছে ‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ ধন্যি রাজার পুণ্যি দেশ’।
×