স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর কাওরনবাজারে দুই বাসের প্রতিযোগীতায় হাত হারানোর পর টানা পাঁচ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকা তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। বোর্ডের চিকিৎসকরা জানান, রাজীবের মস্তিকের তেমন সাড়া না মেলায় দুশ্চিন্তার কারন।
রাজীবের চিকিৎসায় গঠিত সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের প্রধান সমন্বয়কারী প্রফেসর ডাঃ মোঃ শামসুজ্জামান রবিবার জানান, গত মঙ্গলবার ভোর পৌনে ৪টায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে রাজীব। এরপর ওই দিন সকাল ৮টায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয় তাকে। এই পাঁচদিনেও রাজীবের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। তার হার্ট খারাপ ছিল। কিন্তু এখন ভালো। একটু ইমপ্রুভমেন্ট হয়েছে। লাংসও ভালো। তবে প্রস্রাব হচ্ছে কম। ফলে কিডনি সাফার করতেছে।
এটা একটা এলার্মিং। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা জানান, রাজীবের মস্তিস্কে এখন কাজ করছে না। শুধু নিশ্বাস নিচ্ছে। তারা জানান, মেডিকেলের ভাষায় স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষের গ্লাসগো কোমা স্কেল অর্থাৎ সজ্ঞানতার অবস্থা (জিসিএস) ১৪-১৫ থাকে। কিন্তু এটি যখন আটের নিচে নেমে আসে তখন রোগীর অবস্থাকে ক্রিটিক্যাল বলা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে রাজীবের জিসিএস অবস্থান এখন তিনের কোটায়। অর্থাৎ আটের নিচে। যেটি ক্রিটিক্যাল বলে প্রমানিত হয়। প্রফেসর শামসুজ্জামান জানান, রাজীবের ব্রেইন আনচেঞ্জড, তার ব্রেইনের কোনো উন্নতি হয়নি। যদি ব্রেইনের ইমপ্রুভ হয়, তাহলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না হলে তো সম্ভব না। তিনি জানান, এটা হঠাৎ করে ইমপ্রুভ করবে না। তবে আমরা আশা ছাড়িনি।
উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারের সার্ক ফোয়ারার কাছে বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন। বাসটি হোটেল সোনারগাঁওয়ের বিপরীতে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে পৌঁছালে হঠাৎ পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে গা ঘেঁষে অতিক্রম করে। এ সময় দুই বাসের চাপায় তার ডান কনুইয়ের উপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুর্ঘটনায় রাজীবের মাথার সামনে-পেছনের হাড় ভেঙে যাওয়া ছাড়াও মস্তিষ্কের সামনের দিকে আঘাত লাগে। প্রথমে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নেয়া হলেও সেখান থেকে পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তার চিকিৎসার জন্য গঠন করা হয় মেডিকেল বোর্ড। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামের রাজীব তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় মা এবং অষ্টম শ্রেনিতে পড়ার সময় বাবাকে হারান। ঢাকার মতিঝিলে খালার বাসায় থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন স্নাতকে। পড়ালেখার ফাঁকে একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করে নিজের আর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই ভাইয়ের খরচ চালানোর সংগ্রাম করে আসছিলেন তরুণ রাজীব হোসেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: