স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাতৃভাষার টানে ভাষা আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত আর একজন শহীদের নাম আবুল বরকত। তিনি ওই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ভারতের মুর্শিদাবাদের ভরতপুর থানার অন্তর্গত বাবলা গ্রামে ১৬ জুন ১৯২৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন
তিনি। মৌলভী শামসুদ্দিনের জ্যেষ্ঠপুত্র আবুল বরকত তাবেলপুর হাইস্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে মেট্রিক পাশের পর বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে ভর্তি হন। ’৪৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশের পর ’৪৮ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। পুরানা পল্টন লাইনে বিষ্ণুপ্রিয়া ভবনে তিনি তার মামার সঙ্গে মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন।
’৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সে ভর্তি হন। ’৫১ সালে অনার্স পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে চতুর্থ স্থান লাভ করেন। ছাত্র হিসেবেই যে মেধাবী ছিলেন তা নয়, বরং স্বভাব চরিত্র এবং ব্যবহারে ছিলেন মার্জিত ও অমায়িক। শহীদ বরকত তমদ্দুন মজলিশ কর্তৃক প্রকাশিত ভাষা আন্দোলনের মুখপাত্র সাপ্তাহিক সৈনিকের মাধ্যমে ভাষার আন্দোলনের এই মহান আন্দোলনের প্রেরণা লাভ করেন বলে জানা যায়। মজলিশের বিভিন্ন বৈঠকে যাতায়াত করতেন তিনি।
২১ ফেব্রুয়ারি ঘটনার সময় পুলিশের লাঠিচার্জ এবং কাঁদানি গ্যাসের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ছাত্রদের সঙ্গে তিনিও মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বেলা তখন ২টা। বরকত মেডিক্যাল কলেজের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতাকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন। এই সময় হঠাৎ করে রাইফেলের গুলিতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কয়েকজন ছাত্র তার দেহ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তাররা অপারেশন করান। রাত ৮টা ১৫ মিনিটের সময় তিনি মারা যান।
১৪ মার্চ ’৫২ তারিখে দৈনিক আজাদে প্রকাশিত সরকারী তথ্য বিবরণী থেকে জানা যায় আজিমপুর মসজিদের ইমাম হাফেজ মুহাম্মদ আব্দুল গফুর বরকতের জানান পড়ান। জানায় তার আত্মীয়দের মধ্যে এসএমজি বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি এ কাসেম ও এ্যাসিসটেন্ড এ্যাকাউন্ট অফিসার মালিক উপস্থিত ছিলেন। জানাজায় প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ ইউসুফও ছিলেন। একুশে ফেব্রুয়ারি রাত ১০টায় পুলিশের কড়া প্রহরায় বরকতের লাশ আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করতে নেয়া হয়। বরকতের মামা আব্দুল মালেক কবরের জায়গা কেনার জন্য টাকা ও কাফন খবর বহন করেন। কবর দিয়ে বাড়ি ফিরতে প্রায় ভোর হয়ে যায়। বরকতের পারিবারিক খরচেই পরে তার কবর পাকা করা হয়। বরকতের কবরের সমাধিতে লেখা আছে ‘২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের শহীদ, শহীদ আবুল বরকত (এমএ ক্লাস), বাবলা-মুর্শিদাবাদ- জন্ম ১৬-৮-২৭ ইং।’
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: