ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প

অবশেষে ২১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অবশেষে ২১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী ॥ অবশেষে দেশের সববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ হতে কৃষকরা সেচ পেতে শুরু করেছে। পুরো কমান্ড এলাকা সেচের আওতায় না এলেও রবিবার পর্যন্ত ৮টি উপজেলায় প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ মিলেছে কৃষকদের। আর ওই সেচ দিয়ে কৃষকরা সেচ নির্ভর বোরো ধান আবাদের চারা রোপণ করছে। এদিকে সেচ কার্যক্রম পরিদর্শনে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির পর তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় আসার কথা রয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর। ফলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহের উপর ভিত্তি করে যত দূর পর্যন্ত সংশ্লিষ্টরা সেচ প্রদানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কমান্ড এলাকার কৃষকরা জানায়, গত ১০ দিন আগেও তিস্তা নদীতে প্রায় ৫ হাজার কিউসেক উজানের প্রবাহ ছিল। সে সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেচ সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হয়। প্রধান ক্যানেল , সেকেন্ডারি ক্যানেল, মেজর সেকেন্ডারি ক্যানেল ও টারশিয়ারি ক্যানেলগুলো সংস্কার করা হয়নি। যা নিয়ে দুই দফায় দৈনিক জনকণ্ঠে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এদিকে জানা যায়, ওই সব ক্যানেল সংস্কারের জন্য প্রায় ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ক্যানেলগুলো সংস্কারের কথা থাকলেও তা সময় মতো করা হয়নি। দৈনিক জনকণ্ঠে দুই দফায় রিপোর্ট প্রকাশ হলে কর্তৃপক্ষ আদা নুন খেয়ে ক্যানেলগুলো সংস্কারের মাঠে নেমে পড়ে। এরপরেও বেশ কিছু উপজেলার টারশিয়ারি ক্যানেলগুলো এখনও সংস্কার না হওয়ায় কমান্ড এলাকা পরিপূরকভাবে সেচ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। জানা যায়, সেচ নির্ভর বোরো আবাদে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার ৬৫ হাজার হেক্টর জমি সেচ পাওয়ার কথা। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ হ্রাসের আশঙ্কায় সংশ্লিষ্টরা ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় বর্তমানে তিস্তা নদীতে রবিবার পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ ছিল। ফলে ওই প্রবাহে নীলফামারী সদর, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ, সৈয়দপুর, তারাগঞ্জ, চিরিরবন্দর ও গঙ্গাচড়া উপজেলার ২১ হাজার হেক্টর জমি সেচ পাচ্ছে। নীলফামারী সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের উত্তর কানিয়ালখাতা গ্রামের কৃষক রোস্তম আলী জানান, অবশেষে তিস্তা ব্যারেজের সেচ পেয়ে ৫ বিঘা জমিতে ইরি-বোরো ধানের চারা রোপণ করছে। জলঢাকা উপজেলার টেঙ্গনমারী, কিশোরীগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী, নিতাই, গাড়াগ্রাম ও সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি, কাশিরাম বেলপুকুর ও কামারপুকুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, সেচ পেয়ে কৃষকরা জমিতে চারা রোপণ করছে। তবে জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। এ উপজেলায় টারশিয়ারি ক্যানেলগুলো সংস্কার না করায় সেচ পাচ্ছেনা কৃষক। ফলে নিরুপায় হয়ে কৃষকরা অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে বিদ্যুতচালিত ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র ব্যবহার করে জমিতে সেচ দিচ্ছে। কৃষকরা অভিযোগ করে জানায়, দুই বছর আগে তিস্তা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে তারা চার হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে সেচ দিয়েছিল। কিন্তু এবার তিস্তার সেচ পাচ্ছে মাত্র ২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমি। পানিয়াল পুকুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম নামে এক কৃষক বলেন, তিস্তার সেচ পেলে বিঘা প্রতি বোরো আবাদে খরচ হয় ৫০০ হতে ৮০০ শত টাকা। কিন্তু বর্তমানে ক্যানেলে তিস্তার পানি না আসায় ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ করে প্রতি বিঘা জমিতে সেচ দিয়ে বোরো আবাদ করতে হচ্ছে। অভিযোগে জানা যায়, সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন ডিভিশনের আওতায় কিশোরীগঞ্জ উপজেলা ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে এই ডিভিশনের সেচ ক্যানেলগুলো সংস্কারের জন্য সরকারীভাবে ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এই উপজেলায় দায়িত্ব থাকা সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ক্যানেল সংস্কারের জন্য এখানে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। ওই টাকায় বেশ কিছু ক্যানেল সংস্কার করা হয়। তবে টারশিয়ারি ক্যানেলগুলো সংস্কারের জন্য বরাদ্দ না থাকায় সেগুলো সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে কৃষক বকুল হোসেন জানান, দুই বছর আগে আমারা এলাকায় টারশিয়ারি ক্যানেলের মাধ্যমে তিস্তা সেচের পানি পেতাম। যা দিয়ে উপজেলার সাড়ে চার হাজার হেক্টরের উপরে জমি সেচ পেত। কিন্তু বর্তমানে ক্যানেল সংস্কার না করার কারণে সেচ আসেনা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নীলফামারী উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় ৮৪ হাজার ২৭৯ হেক্টর জমিতে এবারে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবার। যারা তিস্তা সেচের পানি পাচ্ছেনা সে জন্য ৩২৮টি গভীর নলকূপ, ২৬ হাজার অগভীর নলকূপ ব্যবহার করছেন কৃষকরা।
×