ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘বিদেশে কোন সম্পদ নেই’

প্রধানমন্ত্রীকে বেগম জিয়ার উকিল নোটিস

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রধানমন্ত্রীকে বেগম জিয়ার উকিল নোটিস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আইনী নোটিস পাঠিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সৌদি আরবসহ দেশের বাইরে খালেদা জিয়ার সম্পদ রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেয়ায় খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ আইনী নোটিস পাঠিয়েছেন। মঙ্গলবার রেজিস্টার্ড ডাকযোগে এ নোটিস পাঠানো হয় বলে বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল জানান। নোটিসে বলা হয়েছে, ওই বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে এবং তা সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩০ দিনের মধ্যে তা করা না হলে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রসঙ্গত বিদেশে খালেদা জিয়ার সম্পদ নিয়ে যেদিন প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখেন সেদিনই রাতে বিএনপির পক্ষ থেকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে সম্পদ আছে প্রমাণ করতে না পারলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর দুই সপ্তাহ পর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ আইনী নোটিস দিলেন। কম্বোডিয়া সফর শেষে দেশে ফিরে ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারী বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি কম্বোডিয়া সফর সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিষয়ে বলেন, বিভিন্ন দেশে তাদের অবৈধ টাকার বিষয়টি বের হয়ে আসছে। এগুলো তো বাংলাদেশ সরকার করছে না। কাজেই ক্ষমা তাদেরই চাওয়া উচিত। সৌদি আরবে খালেদা জিয়ার অর্থ নিয়ে দেশের গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, সৌদি আরবে যে বিশাল শপিং মলের খবর পাওয়া গেল এই খবর দেয়ার কোন আগ্রহ দেখলাম না। ‘আপনারা কি সৌদি আরবে সেই শপিং মলে বিনা পয়সায় শপিং করার জন্য কার্ড পেয়েছেন। দু-একটি ছাড়া কোন পত্রিকা- টেলিভিশনে তো রিপোর্ট দেখলাম না। আপনাদের এত দুর্বলতা কিসের জন্য। সৎ সাহস হলো না রিপোর্ট দেয়ার। আমার নাম এলে কী করতেন?’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যারা এত সম্পদের মালিক, তারা জানে মুখ বন্ধ কীভাবে করতে হয়। তাই তারা মুখে রসগোল্লা ঢুকিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন মঙ্গলবার ডাকযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ের ঠিকানায় ওই আইনী নোটিস পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া বুধবার পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৫-এর সামনে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশে খালেদা জিয়ার কোন শপিং মল বা সম্পদ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য খালেদা জিয়ার জন্য মানহানিকর। তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার না করা হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ৩০ দিনের মধ্যে এই বক্তব্য প্রত্যাহারে ব্যবস্থা নিতে নোটিসে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমে বিদেশী একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে খালেদা জিয়ার বিদেশে সম্পদ থাকার একটি খবর প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে দুর্নীতি মামলায় বিচারের মুখে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে সৌদি আরবে। ৭ ডিসেম্বর গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো আইনী নোটিসে আরও বলা হয়, আপনি খালেদা জিয়া এবং তার পুত্রদের সম্পর্কে যে অভিযোগ এনেছেন তা সাজানো, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিদ্বেষমূলক। দেশের নির্দোষ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিসম্পন্ন সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে খালেদা জিয়ার সুনাম বিনষ্ট করার হীন উদ্দেশে পরিকল্পিতভাবে আপনি এসব অভিযোগ এনেছেন। আপনার ওই বক্তব্যের কারণে খালেদার জিয়ার অপূরণীয় লোকসান ও ক্ষতি হয়েছে। তাই আপনাকে খালেদা জিয়ার নিকট নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করার আহ্বান জানাচ্ছি। নোটিসে খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলেছেন, নোটিস প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে সব জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন সংবাদপত্র এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি যথাযথভাবে প্রকাশ ও প্রচার করতে হবে। অন্যথায় আপনার বিদ্বেষপূর্ণ, মানহানিকর এবং কপট ও কুটিল বক্তব্যের কারণে আপনার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আদায়ের নিমিত্তে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমাদের ওপরে নির্দেশ রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেসব অভিযোগ করেছেন এর কোন সত্যতা নেই, কোন অস্তিত্বও নেই। দুঃখজনকভাবে প্রধানমন্ত্রী মুখে নানা কথা বললেও অভিযোগ প্রমাণে কোন তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি। তাই আমরা আমাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আইনী নোটিস পাঠিয়েছি। এ কথাটি আমরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানালাম। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল হাই, প্রফেসর শাহিদা রফিক, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-সাংঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইয়েদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ। আমরা রাজপথে নামতে নয়, পদের জন্য বেশি আগ্রহী-গয়েশ্বর ॥ বিএনপি কেন রাজপথে নামতে পারছে না এমন আত্মসমালোচনা করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আমরা রাজপথে নামতে নয়, দলের পদেও বেশি আগ্রহী। তবে আমি মনে করি কিছু না করে কারাগারে যাওয়ার চেয়ে কিছু করে যাওয়াই শ্রেয়। বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার মুক্তির দাবিতে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গয়েশ্বর বলেন, দেশের বর্তমান অবস্থা কারাগারের চেয়ে ভয়াবহ। শুধু রাতে নয় এখন মানুষ দিনে চলাচল করতেও ভয় পায়। তাই দেশকে বাঁচাতে এবং জনগণকে মুক্তি দিতে রাজপথে নেমে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। আয়োজক সংগঠনের মহাসচিব জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ।
×