ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শ্রাবণসন্ধ্যায় হাজার বছরের বাংলা গানে সিক্ত শ্রোতা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৩০ জুলাই ২০১৭

শ্রাবণসন্ধ্যায় হাজার বছরের বাংলা গানে সিক্ত শ্রোতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের মতোই এই ভূখ-ের গানের ইতিহাসটাও পুরনো। বিবর্তনের ধারায় সমৃদ্ধ সেই সঙ্গীত জগতটিও বলে যায় হাজার বছরের সমৃদ্ধতার কথা। চর্যাপদের সূত্র ধরে মেলে আদি বাংলার গানের নিদর্শন। আবেগী মনে, কৃষকের মাঠে, মাঝির গলুইয়ে, পান্থজনের ঠোঁটে কিংবা বন্ধুর আড্ডায়- সবখানেই ছুঁয়ে গেছে গানের সুর। নানা ধাপ পেরিয়ে নবরূবপ্রাপ্ত হাজার বছরের বাংলা গানের সেই সুরসুধা উপস্থাপিত হলো শনিবার। আপন সমৃদ্ধি পরিচয়বহ সেই সুরেলা শব্দধ্বনিতে সিক্ত হলো শ্রোতারা। শ্রাবণসন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমি ও সরকারী সঙ্গীত কলেজের যৌথ আয়োজনে একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে বসে ‘হাজার বছরের বাংলা গান’ শীর্ষক চমৎকার আয়োজনটি। গানে গানে সুরের ভেলায় ভেসে বেড়িয়েছে মিলনায়তন পরিপূর্ণ গানপ্রেমীরা। আয়োজনের শুরুতেই ছিল সংক্ষিপ্ত কথন পর্ব। এ পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সরকারী সঙ্গীত কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কৃষ্টি হেফাজ। আলোচনা শেষে ‘আ হাইয়া হা হা শ্রী মহা মঞ্জুশ্রী’ শীর্ষক চর্যাগানের মাধ্যমে শুরু হয় পরিবেশনা পর্ব। গানের সঙ্গে ছিল একাডেমির নৃত্যদলের নাচের পরিবেশনা। এরপর পরিবেশিত হয় আরেকটি চর্যাগান ‘উচা উচা পর্বত’। চর্যাগানের পর পরিবেশিত হয় ‘হে গোরক্ষ নাথ প্রভু’ শীর্ষক নাথগীতি। এ গানের সুর থামতেই ভেসে বেড়ায় রাগসঙ্গীতের আলাপ এবং সেই সুর আশ্রিত নৃত্য। শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন থেকে গীত হয় ‘নৌকা বিলাস খ-’। কীর্তনের পর ছিল বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের পুঁথি ও কাব্য সাহিত্যের পরিবেশনা। শুরুতেই ছিল মহাকবি আলাওলের ‘পদ্মাবতী’র সিংহল দ্বীপ বর্ণন খ-ের পুঁথিপাঠ। এরপর পরিবেশিত হয় বৈষ্ণব পদাবলী ও কীর্তন। মঙ্গলকাব্য থেকে গীত হয় মঙ্গলগান। ‘মনসামঙ্গল’ থেকে সাপের দেবী মনসার বন্দনা উচ্চারিত হয় ‘বন্দিগো মনসাদেবী’র পরিবেশনার মাধ্যমে। গীত হয় রামপ্রসাদী গান ‘মন রে কৃষি কাজ জানো না’। মঙ্গলগানের পর শুরু হয় লোকসঙ্গীতের পালা। ছিল ময়মনসিংহ গীতিকার গান আর কবিয়ালদের কথোপকথনের লড়াই। এরপর গীত হয় নিধুবাবুর বাংলা টপ্পা ‘সে কেনরে করে অপ্রণয়’। মোহাবিষ্ট শ্রোতারা এরপর শুনতে পায় দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্রহ্মসঙ্গীত থেকে দেহজ্ঞান ও দিব্যজ্ঞানের পরিবেশনা। বৈচিত্র্যময় পরিবেশনায় উপস্থাপিত দুটি নাট্যগীতি ‘চাঁদ তুমি আকাশে থাকো’ ও ‘কালো যদি মন্দ তবে’। ছিল ধামাইল নাচে পরিচিত সিলেট অঞ্চলের বিয়ের গানের পরিবেশনা। ‘তোমরা কুঞ্জ সাজাওগো’ গানের সঙ্গে ছিল নৃত্য। বাংলা গানের বিবর্তনের ধারা তুলে ধরা এ সঙ্গীতাসর মহিমান্বিত হয়ে ওঠে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, রজনীকান্ত, অতুলপ্রসাদ ও দ্বিজেন্দ্রলালÑ অর্থাৎ পঞ্চকবির গানের সুরে। সম্মেলক কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের ‘ও আমার দেশের মাটি’, নজরুলের ‘দুর্গমগিরি কান্তার মরু’, রজনীকান্তের ‘মায়ের দেয়া মোটা কাপড়’, দ্বিজেন্দ্রলালের ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা’ এবং অতুলপ্রসাদের ‘মোদের গরব মোদের আশা’ গানগুলো গীত হয়। এর পর গীত হয় বাংলা কাওয়ালী ও কাসিদা ‘আকাশের তারাগুলি ঝিলিমিলি জ্বলছে’। এরপর ছিল দুটি গণসঙ্গীতের পরিবেশনা। প্রথমেই বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে মুকুন্দ দাসের ‘ভয় কি মরণে’ ও তেভাগা আন্দোলন নিয়ে সলীল চৌধুরীর ‘হেই সামালো ধান হো’। এসব গানের সঙ্গে ছিল নৃত্য। এর পর আধুনিক বাংলা গানের পালা। একে একে গীত হয় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ‘আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন’, পিন্টু ভট্টাচার্যের ‘ভুল ভেঙ্গে গেলে কাছে আসবে’, হাসিনা মমতাজের ‘তন্দ্রা হারা নয়নও আমার এই মাধবী রাতে’। এরপর শচীন দেববর্মণের ‘কে যাসরে ভাটির গাঙ বাইয়া’, মান্না দের ‘দ্বীপ ছিল শিখা ছিল’ ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ‘এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন’। এর পর আলতাফ মাহমুদের ভাষার গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’। এর পর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দুই গান ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ ও ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গীত হয়। স্বাধীনতাপরবর্তী গানের পালার শুরুতেই চলচ্চিত্রের গান। ‘হারানো দিন’ চলচ্চিত্রের ‘আমি রূপনগরের রাজকন্যা’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ আয়োজন। এর পর একে এতে গীত হয় ‘সূর্যস্নান’র ‘পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া’, ‘রূপবান’র ‘সাগর কূলের নাইয়া’, ‘সূর্যকন্যা’র ‘চেনা চেনা লাগে’ এবং ‘পিচঢালা পথ’ চলচ্চিত্রের ‘ফুলের কানে ভ্রমর এসে’। এর পর ছিল ব্যান্ড মিউজিক ও জীবনমুখী গানের আয়োজন। গীত হয় ‘আলাল ও দুলাল’, ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’, ‘ও নদীরে তুই যাস কোথারে’ ও ‘তুমি ঘর বানাইছো কি দিয়া’। গণগ্রন্থাগারে সংবৃতার যুগপূর্তি উৎসবের সূচনা সময়ের পরিক্রমায় পথচলার ১২ বছরে পা রাখছে আবৃত্তি সংগঠন সংবৃতা। যুগপূর্তি উপলক্ষে আগামী সেপ্টেম্বরে দুই দিনব্যাপী উৎসবের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর ওই উৎসবের সূচনা হলো শনিবার। বিকেলে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর রবীন্দ্রনাথের গানকে কবিতায় সাজিয়ে উদ্বোধনী আবৃত্তিতে পরিবেশিত হয় ‘অন্তর মম বিকশিত কর’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ এবং বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম। যুগপূর্তির কেক কাটার আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রদর্শিত হয় ‘সময়ের সোপানে সংবৃতা’ শীর্ষক তথ্যচিত্র। অনুষ্ঠানে একক কণ্ঠে আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম, মীর বরকত ও মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, রফিকুল ইসলাম, ফয়জুল আলম আপ্পু, মজুমদার বিপ্লব, লাবণ্য শিল্পী, ও একেএম সামছুদ্দোহা প্রমুখ। রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর রচিত কবিতায় নাসির উদ্দিন পিটুর নির্দেশনায় পরিবেশিত হয় ‘ইশতেহার’ শীর্ষক প্রযোজনা। ‘পটের গান : বাংলার বাঘ’ বাঘমামাকে নানা ভঙ্গিমায় ক্যানভাসে মেলে ধরেন চিত্রশিল্পী পটুয়া নাজির হোসেন। এই শিল্পীর আঁকা বাঘের ছবিতে হিংস্রতার পরিবর্তে উদ্ভাসিত হয় নানা মজার বিষয়। নাজিরের ক্যানভাসে বাঘ কখনও নৌকা চালাল, কখনও ঢোল বাজিয়ে ঘুরে বেড়ায় গ্রাম বাংলায় পথে-প্রান্তরে। এভাবেই নাজিরের চিত্রপটে মানুষের সঙ্গে সহাবস্থান করে বাঘ। শিল্পীর নিপুণ হাতের রং-তুলির আঁচড়ে চিত্রিত বাঘগুলো শিল্পানুরাগীদের নয়নে ছড়ায় ভাললাগার রেশ। আর শনিবার বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হলো ‘পটের গান : বাংলার বাঘ’ শীর্ষক পটটিত্র প্রদর্শনী। সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে রাজধানীর শ্যামলীর মুক্তিযুদ্ধ আর্ট গ্যালারি। শনিবার বিকেলে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি কাজী রোজী, কথাশিল্পী আজিজুর রহমান আজিজ, গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর ও শিল্প-সমালোচক মইনুদ্দিন খালেদ। ৭১টি পটচিত্রের সাজানো এ প্রদর্শনী চলবে আগামী ৪ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। নূরজাহান আলীমের সঙ্গীতসন্ধ্যা শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরে ছিল বাবার কণ্ঠে মেয়ের গানের আয়োজন। কিংবদন্তি লোকসঙ্গীতশিল্পী আবদুল আলীমের গান শোনালেন মেয়ে নূরজাহান আলীম। জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বসেছিল এই গানের আসর। এ সঙ্গীতসন্ধ্যার আয়োজন করে ঢাকাস্থ ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (আইজিসিসি)। অনুষ্ঠানের শুরুতে শিল্পীকে শ্রোতাদের কাছে পরিচয় করিয়ে দেন আইজিসিসির পরিচালক জয়শ্রী কু-ু। চারুকণ্ঠের আবৃত্তিসন্ধ্যা ‘বিনম্র রোদের ছায়া’ শনিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হলো চারুকণ্ঠ আবৃত্তি সংসদের আয়োজনে ত্রৈমাসিক আবৃত্তিসন্ধ্যা ‘বিনম্র রোদের ছায়া’। কবি আহসান হাবীবের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তার কবিতা নিয়ে চারুকণ্ঠের আবৃত্তিশিল্পীদের পাশাপাশি অন্য তিনটি আবৃত্তি সংগঠনের তিনজন আবৃত্তিশিল্পী আবৃত্তি পরিবেশন করেন। চারুকণ্ঠের নিয়মিত এই আয়োজনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবিপুত্র মঈনুল আহসান সাবের এবং কবি তুষার দাশ। প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ কণ্ঠশিল্পী সেমন্তী মঞ্জরী। শনিবার বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত হলো তার ™ি^তীয় একক রবীন্দ্রসঙ্গীতের এ্যালবাম ‘দেখো রে চিত্তকমলে’। সন্ধ্যায় ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ্যালবামটির মোড়ক উন্মোচন করেন ছায়ানট সভাপতি সঙ্গীতজ্ঞ, শিক্ষক ও গবেষক ড. সন্জীদা খাতুন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতা হক। সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।
×