স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ এ যেন ভাঙ্গা ঘরে চাঁদের আলো। আর্থিক অনটন অদম্য মেধাবী পিঞ্জিরা খাতুনকে দমাতে পারেনি। রং মিস্ত্রি বাবার উপার্জনের টাকায় সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরালেও লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন নিয়মিত। সফলতাও পেয়েছে সে। চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় মনিরামপুর ডিগ্রী কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পিঞ্জিরা। তার সাফল্যে সবাই আনন্দিত। কিন্তু উচ্চ শিক্ষা নিয়ে সংশয়ে পিঞ্জিরার পরিবার।
যখন তার সহপাঠীরা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বাড়িতে বসে শুধুই চোখের জল ফেলছে পিঞ্জিরা। সহযোগিতা করছে মায়ের কাজে। পিঞ্জিরা মনিরামপুর পৌর শহরের বিজয়রামপুর গ্রামের ওবায়দুল ইসলামের মেয়ে।
পিঞ্জিরার বাবা ওবাইদুল ইসলাম জানান, তিনি পেশায় একজন রং মিস্ত্রি আর তার স্ত্রী গৃহস্থালীর কাজ করেন। সহায়-সম্বল বলতে গ্রামে ৭ শতক ভিটে ছাড়া আর কিছুই নেই। তার সামান্য আয়ের ওপর চলে অভাবের সংসার। পরিবারের সদস্যদের মুখে তিন বেলা অন্ন যোগাতেই তাকে হিমশিম খেতে হয়। এ আয়ে তার দুই ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগানো তার পক্ষে একবারেই অসম্ভব।
নয়ন
নিজস্ব সংবাদদাতা নাটোর থেকে জানান, নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় বাবা বলেছিল ‘আর নয় এবার লেখা পড়াবাদে দিয়ে আমার সঙ্গে কাজে লেগে পড়। আর যদি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাস তবে নিজের পয়সায় পড়গে, আমি আর তোর লেখাপড়ার পেছনে একটা টাকা খরচ করতে পারব না।’ সেদিন দরিদ্র বাবার কথা শুনে কষ্টে বুকটা ফেটে একাকার হয়ে গিয়েছিল নয়নের। বুকের ভেতরের জমাট বাধা কষ্ট সইতে না পেরে ঘরের কোনে অঝোর ধারায় কেঁদেছিল সেদিনের এই কোমলমতি নয়ন। নিজের একান্ত ইচ্ছা ছিল সে একদিন অনেক লেখাপড়া করবে, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বাবা-মায়ের দুঃখ ঘোচাবে। কিন্তু বাবার কথায় যেন সেদিন তার সকল আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নয়ন মনে মনে পণ করে বসে। যেভাবেই হোক লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে। আর তখন থেকেই লেখাপড়া ও আর নিজের খরচ যোগাড় করতে লেখাপড়ার পাশাপাশি দিনমজুরের কাজ বেছে নেয়। এভাবে আগদীঘা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার পরে উপবৃত্তির টাকা ও অন্যের জমিতে কাজ করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে নয়ন তার প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে এসেছে। নাটোর শহরের সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ব্যবসায় বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ অর্জন করেছে। তার এই সাফল্যের পেছনে কলেজের শিক্ষক ও প্রতিবেশী বড়ভাই শাহীনুর রহমানের অনবদ্য অবদান রয়েছে বলে জানায় নয়ন। বড়ভাই রবিউল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ খরচে পড়ালেখা করছেন। ছোট ভাই রনি দশম শ্রেণীর ছাত্র। নয়ন জানায়, তিন ভাই মেধাবী হলেও ভষিব্যত নিয়ে চিন্তিত তারা। বাবার স্বল্প আয়ে সংসারই যখন চলে না তখন তিন ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ বহন করা বাবার পক্ষে বহন করা অসম্ভব।
শান্তা
নিজস্ব সংবাদদাতা আমতলী বরগুনা থেকে জানান, আমতলী পৌরসভার চাওড়া কালিবাড়ী গ্রামের রিক্সাচালক মোস্তাফিজুর রহমানের কন্যা শাহনাজ আকতার শান্তা শিক্ষক হতে চায়।
রিক্সাচালক মোস্তাফিজুর রহমানের একমাত্র কন্যা শাহনাজ আকতার শান্তা। শান্তা ২০১৭ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। কন্যার জিপিএ-৫ পাওয়ায় হতদরিদ্র পরিবারের কাছে খুশির সংবাদ হলেও উচ্চশিক্ষা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছে। বাবা মোস্তাফিজুর রহমান রিক্সা চালিয়ে সংসার পরিচালনা করে মেয়ের লেখাপড়া খরচ যোগাচ্ছেন। এতদিন নিজ এলাকায় লেখাপড়ার সুযোগ থাকলেও উচ্চ শিক্ষায় সেই সুযোগ আর নেই। মেধাবী শান্তার উচ্চ শিক্ষার জন্য দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবার।বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মোর মাইয়্যা হুনছি পরীক্ষায় বড় পাস হরছে’ এহ্যান আমতলী পড়াইতে পারমু না। ভালো ল্যাহা পড়ার জন্য দূরের কলেজে ভর্তি হরা লাগবে। মুই কি দিয়া মাইয়্যারে ভর্তি হরমু।
মুই রিক্সা চালাইয়্যা খাই, কলেজের স্যারেরা খরচ দেছে বইল্ল্যা মোর মাইয়্যা ল্যাহাপড়া হরাইতে পারছি। এ্যাহন কি দিয়া ল্যাহাপড়া হরামু”। মেধাবী ছাত্রী শাহনাজ আকতার শান্তা জানান, এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছি। হতদরিদ্র বাবার পক্ষে আমাকে উচ্চশিক্ষা করানো সম্ভব হবে না।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: