ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জন্মদিনের শুভেচ্ছায় সিক্ত কবি আল মাহমুদ

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১২ জুলাই ২০১৭

জন্মদিনের শুভেচ্ছায় সিক্ত কবি আল মাহমুদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জন্মদিনে শুভাকাক্সক্ষীদের ভালবাসা ও ফুলের শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন সমকালীন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি আল মাহমুদ। মঙ্গলবার ছিল কবির ৮২তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে কবি-সাহিত্যিক ও ভক্ত-সুহৃদরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান কবিকে। ঘরোয়া আয়োজনে সেই সঙ্গে যুক্ত হয় আলোচনা, কবিতা পাঠ ও কেক কাটা। দিনভর ভক্ত ও অনুরাগীদের পদচারণ মুখরিত ছিল মগবাজারের আদ-দ্বীন হাসপাতাল সংলগ্ন কবির বাসভবন। আল মাহমুদ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সকালে আয়োজন করা হয় এ ঘরোয়া অনুষ্ঠানের। প্রিয় কবিকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে, ভালবাসা জানাতে সকাল থেকেই বাসায় আসেন তাঁর ভক্ত ও অনুরাগীরা। সারাদিন বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে কবিকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ উপলক্ষে কবির বসার ঘর হয়ে ওঠে শুভাকাঙ্খীদের উৎসবস্থল। নতুন পাঞ্জাবি ও পায়জামা পরানো হয় অশীতিপর এ কবিকে। পরে অসুস্থ কবিকে ধরাধরি করে নিয়ে আসা হয় বসার ধরে। সোফায় হেলান দিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকেন কবি। তাঁর পাশে বসেন কবি আসাদ চৌধুরী, বিচারপতি আবদুর রউফ, কবি ছড়াকার সালেহ চৌধুরী, কবি জাকির আবু জাফর প্রমুখ। এ সময় আল মাহমুদকে তাঁর কবিতা আবৃত্তি করে শোনান আবৃত্তিকার নাসিম আহমেদ। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে কেক কেটে জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এ সময় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তি উদ্যোগে কবিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবিদ আজম। নিজের অনুভূতি বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন কবি আল মাহমুদ। বলেন, ‘কবির কাজ হলো মানুষকে স্বপ্ন দেখানো এবং মানুষকে সত্য ও সুন্দরের পথে আসার আহ্বান জানানো। সারা জীবন মানুষকে আমি স্বপ্ন দেখিয়েছি, ভালবাসার কথা বলেছি। সত্য ও সুন্দরের পথে নিজে চলেছি, মানুষকেও চলতে বলেছি। আমি কবি হতে চেয়েছিলাম, আর কিছু হতে চায়নি। মানুষ আমাকে কবি হিসেবে জানে। আমার আর কোন অতৃপ্তি নেই।’ কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা যতদিন থাকবে, ততদিন থাকবেন আল মাহমুদ। বাংলাদেশ ও আল মাহমুদ এক ও অবিভাজ্য।’ আল মাহমুদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, ‘ভাঙা সুটকেস বগলদাবা করে ঢাকা শহরে এসেছিলেন তরুণ আল মাহমুদ। সেই সুটকেস যেন জাদুবাক্স। কবি সেই সুটকেস খুলে একের পর এক দেখান বাংলাদেশের নদনদী, খালবিল, পাহাড়-অরণ্য, খড়ের গম্বুজ, নারী-নিসর্গ, মক্তবের চুলখোলা আয়েশা আক্তার ইত্যাদি প্রকৃতি ও জীবন নিয়ে লেখা সব কবিতা। আসলে সেই সুটকেসে ভরা ছিল তাঁর অনেক কবিতা।’ আল মাহমুদ ফাউন্ডেশনের সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘আল মাহমুদ দেশ ও জাতির পরম সম্পদ। বয়সে প্রবীণ এ কবি প্রায় অসুস্থ থাকেন, কিন্তু সরকার তাঁর চিকিৎসার কোন উদ্যোগ নেয়নি। আমরা আশা করি, কবির সব চিকিৎসার দায়িত্ব নেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ তিনি আরো বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আল মাহমুদকে চাকরি দিয়েছিলেন। এ জন্য গোটা পরিবার বঙ্গবন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞ। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সহমর্মিতার হাত বাড়াবেন।’ গানে কথায় সুধীন দাশ ও করুণাময় গোস্বামী স্মরণ সম্প্রতি না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন সঙ্গীতজ্ঞ সুধীন দাশ ও সঙ্গীত গবেষক ড. করুণাময় গোস্বামী। মঙ্গলবার বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় গানে গানে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হলো সঙ্গীত অন্তঃপ্রাণ দুই বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে। বিশিষ্টজনদের আলোচনায় উচ্চারিত হলো সঙ্গীতকে উপজীব্য করে তাদের বর্ণাঢ্য জীবনের কথা। ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে এভাবেই তাদের প্রতি জানানো হলো ভালবাসা। স্মরণানুষ্ঠানটির আয়োজন করে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। দুই গুণীজনকে স্মরণ করে আলোচনা করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী এবং কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত। স্মরণানুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন খায়রুল আনাম শাকিল, লাইসা আহমদ লিসা, নাসিমা শাহীন, ইকবাল সুমন, মফিজুর রহমান ও সুপর্ণা হাসান মিতু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। আলোচনায় বক্তারা বলেন, একই সঙ্গে সুধীন দাশ ছিলেন সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও আদর্শ সঙ্গীত শিক্ষক। নজরুলের গানের সংগৃহীত রেকর্ড থেকে করে গেছেন বহুসংখ্যক গানের স্বরলিপি। তার তত্ত্বাবধানে লালনগীতির স্বরলিপিও প্রকাশিত হয়। নজরুলের বিকৃত সুর রোধে সুধীন দাশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। নজরুলের আদি গ্রামোফোন রেকর্ড থেকে নজরুলের সুর উদ্ধারে তিনি আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। কলকাতার আকাশবাণীতে যখন নজরুলসঙ্গীত গাইত শিল্পীরা তখন অনেকেই বিকৃত সুরে পরিবেশন করত। সেই সময় সেখানকার এক বিশিষ্টজন শিক্ষার্থীদের বলেছিলেন, নজরুলসঙ্গীত সঠিকভাবে গাইতে হলে শিল্পীদের সুধীন দাশ প্রণীত স্বরলিপি অনুসরণ করতে হবে। অন্যদিকে করুণাময় গোস্বামীর কর্মপরিধির বিস্তার ছিল সঙ্গীতজগৎকে কেন্দ্র করে। দীর্ঘ সময় নিয়ে প্রস্তুত করেছেন সঙ্গীতবিষয়ক অভিধান ‘সঙ্গীত কোষ’। এই সঙ্গীত কোষ নতুন প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পীদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি গ্রন্থ। এ কারণেই বাঙালী জাতি তাকে চিরকাল মনে রাখবে। এছাড়াও এই সঙ্গীত গবেষক বিভিন্ন বক্তৃতা ও লেখার মাধ্যমে জাতিকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। তাদের অবদানের কারণেই কীর্তিমান এই দুই ব্যক্তিত্বকে রাষ্ট্রীয়ভাবে যেন সব সময় স্মরণ করা হয়। ‘আসিফের মহাজাগতিক পথচলা’ প্রামাণ্যচিত্রের প্রকাশনা সদ্য নির্মিত হলো ‘আসিফের মহাজাগতিক পথচলা’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র। বাংলাদেশের একমাত্র পেশাদার বিজ্ঞান-বক্তা আসিফের বিজ্ঞানকে সবার কাছে সহজবোধ্য ও জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্রটি। সাধারণ মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে আসিফের নিরন্তর পথচলার গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্রটি। ডকুমেন্টারিতে উঠে এসেছে আসিফের পঁচিশ বছরের গবেষণালব্ধ কর্মকা-। আর এটি নির্মাণ করেছেন মাহবুবুল আলম তারু। মঙ্গলবার বিকেলে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে প্রামাণ্যচিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী ও প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রম্য পত্রিকা উন্মাদ এবং ট্র্যাভেল এ্যান্ড ফ্যাশন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন আসিফ ও প্রামাণ্যচিত্রের পরিচালক মাহবুবুল আলম তারু। সভাপতিত্ব করেন প্রামাণ্যচিত্রটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান লেজার ভিশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘গোটা বিশ্বে ধর্মের নামে উগ্রবাদ, সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে তার কারণ হলো কোথাও কোন যুক্তি কাজ করে না। উগ্রবাদীরা মনে করছে সে যা বলছে তাই সত্য। অথচ বিজ্ঞান কিন্তু ক্রমাগত প্রশ্ন করে, তার এই প্রশ্ন করার মানসিকতা এক খোলামেলা মনোভাব তৈরি করে দেয়। গড়ে তোলে বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী ও সহনশীল সমাজ।’ তিনি বলেন, ‘একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে গেলে শিল্প সাহিত্য, বিজ্ঞান চর্চার যে গুরুত্ব রয়েছে, তা আমাদের অভিভাবকরা বুঝতে পারেন না। সবার লক্ষ্য এখন ভাল রেজাল্ট করা, একটা ভাল চাকরি পাওয়া।’ রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘আসিফ আমার কাছে এক বিস্ময়ের নাম। মানুষ টিকেট কেটে বিজ্ঞান বক্তৃতা শুনে, এটা সত্যি একটি দারুণ ব্যাপার। এর ফলে তরুণরা বিজ্ঞান চর্চা করতে পারলে বড় কাজ হবে। কারণ বিজ্ঞানকে যুক্তি দিয়ে বুঝতে হয়। আমাদের দেশে যুক্তি দিয়ে বোঝার লোক কম। মত পছন্দ না হলে এখানে মেরে ফেলা হয়। বিজ্ঞান চর্চার মধ্য দিয়ে তরুণরা যুক্তিবাদী হবে বলে আশা করি।’ আসিফ বলেন, ‘পৃথিবীর উঁচু অংশ, নিচু অংশের বিতর্ক বিজ্ঞান চর্চার ফলে উঠে গেলেও মানুষের ভেতরে উঁচু-নিচু ধারণা রয়ে গেছে। আমরা বিজ্ঞানকে আংশিকভাবে মেনে নিয়েছি। যতটুকু নিজেদের পক্ষে ততটুকুকে গ্রহণ করি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা জরুরী। কারণ এটি হলে পরিবেশ আন্দোলন আর করতে হবে না। মানুষের মধ্যে হানাহানিও বন্ধ হবে, কারণ বিজ্ঞান পরিবেশ ও মানুষ রক্ষার কথা বলে। বিজ্ঞান খুব সহজ, এর মধ্যে কোন রহস্য নেই।’ মাহবুবুল আল তারু বলেন, ‘আসিফের বিজ্ঞান বক্তৃতা নিছক কোন পাঠদানের কর্মসূচীতে আবদ্ধ থাকে না। বরং বিজ্ঞান হয়ে ওঠে আনন্দ আর আগ্রহের বিষয়। বিশেষ করে তরুণদের কাছে। আসিফ তো এখন তরুণদের কাছে বিজ্ঞানের চারণ কবি হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন।’ প্রকাশনা উৎসব আর আলোচনা শেষে প্রদর্শিত হয় প্রামাণ্যচিত্রটি। যাতে দেখা যায়, বিজ্ঞান বক্তা আসিফ ১৯৯২ সাল থেকে দর্শনীয় বিনিময়ে বাংলাদেশেরে প্রত্যন্ত এলাকায় বিজ্ঞান বক্তৃতার আয়োজন করছে। বিজ্ঞানকে সহজভাবে উপস্থাপনই তার একমাত্র ব্রত। বিভিন্ন পেশার মানুষ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে আসিফের বিজ্ঞান বক্তৃতা শুনছেন, প্রশ্ন করছেন, উত্তর জেনে নিচ্ছেন। উত্তর মনঃপূত না হলে আবারও প্রশ্ন করছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানকে নিয়ে প্রশ্ন করার আগ্রহ জাগাতে পেরেছেন আসিফ।
×