ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শুরু হলো ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড

তথ্যপ্রযুক্তির বিপুল সম্ভার, তরুণদের পদচারণায় মুখর

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২০ অক্টোবর ২০১৬

তথ্যপ্রযুক্তির বিপুল সম্ভার, তরুণদের পদচারণায় মুখর

মোরসালিন মিজান ॥ আমি কেমন করে পত্র লিখি গো বন্ধু/গ্রাম পোস্ট অফিস নাই জানা...। কিছুকাল আগেও গ্রাম পোস্ট অফিসের খোঁজ করতে হতো। ‘পিতার কাছে টাকা চাহিয়া পত্র লেখা’র যুগ চলছিল। আজ একেবারেই বিপরীত চিত্র। আমুল বদলে গেছে দেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ নামে নতুন পরিচিতি পেয়েছে। অনটনের গল্প পেছনে ফেলে তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই সচেতন প্রয়াস ও দূরদর্শী চিন্তার চমৎকার প্রকাশ ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড।’ তিন দিনব্যাপী উৎসব বুধবার থেকে রাজধানী শহর ঢাকায় শুরু হয়েছে। ভেন্যুÑ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা। পুরোটাজুড়ে দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানের স্টল। প্যাভিলিয়ন। অধুনিক তথ্য প্রযুক্তির বিশাল ভা-ার এখানে মেলে ধরা হয়েছে। যার যে বিষয়ে কৌতূহল, সেই বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানার চেষ্টা করছেন। চলছে কেনাকাটা। দেশ বিদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে আদান-প্রদানের সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। সব মিলিয়ে দারুণ উৎসবের আমেজ। তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ উৎসব বা মেলাটির নাম ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড। ২০১২ সালে প্রথম আয়োজন করা হয়। ২০১৪ সালে এসে আন্তর্জাতিক রূপ পায়। গত বছরও ছিল ব্যাপক আয়োজন। এবার চতুর্থবারের মতো আয়োজন করা হলো ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড। ‘নন স্টপ বাংলাদেশ’ সেøাগানে এর আয়োজন করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বেসিস, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। বিগত দিনের তুলনায় এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড আরও বড় আরও বিস্তৃত হয়েছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রতিবছরই এতে যোগ দেন। এবার সংখ্যাটা অনেক বেশি। আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেন এমন খ্যাতিমান দুই শতাধিক ব্যক্তি উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন। নেপাল, ভুটান, সৌদি আরবসহ ৭ দেশ থেকে এসেছেন ৭জন মন্ত্রী। বিকেল মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে অংশ নেন তারা। মাইক্রোসফট, ফেসবুক, জেডটিই, একসেন্সার, হুয়াওয়েসহ পৃথিবী বিখ্যাত বহু প্রতিষ্ঠান উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। উৎসবে শুধু সফটওয়্যার কোম্পানি আছে ৪০০টি। এছাড়া রাখা হয়েছে সফটওয়ার শো- কেসিং, ই-গভর্নেন্স এক্সপোজিসন, মোবাইল ইনোভেশন, ই-কমার্স এক্সপো ও স্টার্টআপ জোন। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে বিশেষ উপস্থাপনা পেয়েছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ যে কথার কথা নয়, সেটি মেলা ঘুরে বোঝা যায়। কোন কোন উন্নতি দেখে অবাক হতে হয়। সরকারের মন্ত্রণালয় দফতর অধিদফতরগুলো কিভাবে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করছে কীভাবে জনগণকে সেবা দিচ্ছেÑ সংশ্লিষ্ট স্টলগুলো থেকে পরিষ্কার ধারণা নেয়া যায়। সরকারের ৪০টি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল সেবা সম্পর্কে ধারণা দেয়া হচ্ছে। স্টল সাজিয়েছে শতাধিক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ডিজিটাল কার্যক্রম দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরছে। আয়োজক সূত্র জানায়, উৎসবে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে আইটি ক্যারিয়ার বিষয়ক সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। উন্নয়ন সহযোগিদের নিয়ে প্রথমবারের মতো থাকছে ডেভেলপার সম্মেলন। উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সেমিনার। এবারও বিভিন্ন বিষয়ের উপর ১২টি সেমিনার আয়োজনের কথা রয়েছে। ৪০ জন বিদেশীসহ ২০০ বক্তা বিভিন্ন দিনে বক্তব্য রাখবেন। আয়োজন করা হবে ডেভেলপমেন্ট পার্টনার্স কনফারেন্স, আইসিটি এডুকেশন সম্মেলন। এসবের বাইরে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে মহাযজ্ঞ। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উৎসবস্থল ত্যাগ করলে ভেতরে প্রবেশ করেন সাধারণ দর্শনার্থীরা। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে উপস্থিতি। বিকেলে বিভিন্ন বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। বনানী থেকে মেলায় এসেছিলেন অরিন ও তাহিয়া। দুই বন্ধু অনেক্ষণ ধরে ঘুরে দেখছিলেন স্টল। এক পর্যায়ে কিছুটা যেন ক্লান্ত মনে হলো। অরিন বললেন, বিশাল আয়োজন। সবই দেখতে মন চায়। নতুন নতুন সফটওয়্যার খুঁজেছি। বোঝার চেষ্টা করেছি। এখন মনে হচ্ছে কালও আসতে হবে। আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটির তেজগাঁ ক্যাম্পাস থেকে এসেছিল শিক্ষার্থীদের একটি দল। দলের সদস্য মিশেল বললেন, আমি আগেও এই মেলায় এসেছি। এর পরও দেখে অবাক হতে হচ্ছে। বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল ঘুরে বিভিন্ন ডিভাইস দেখলাম। দারুণ অভিজ্ঞতা। আরেক বন্ধু সাব্বির বললেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের যে চিত্র এখানে দৃশ্যমান হয়েছে তা সত্যি অবাক হওয়ার মতো। একেবারে তৃণমূলে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও যা ভাবনায় ছিল না, এখন তা-ই হচ্ছে। উৎসব প্রতিদিনই সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। কোন প্রবেশ ফি ছাড়াই ঘুরে দেখা যাবে বিপুল আয়োজন। মেলায় প্রতিদিন ৩ দিনে ৫ লাখ দর্শনার্থীর সমাগম হবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা। তবে সমৃদ্ধ এই আয়োজন মূল শহর থেকে অনেক দূরে। প্রচ- যানজট ঠেলে গরম সহ্য করে উৎসবস্থলে পৌঁছা অনেকের পক্ষেই কঠিন হয়ে যাবে। প্রথম দিন মেলা ঘুরে এমন মন্তব্য শোনা গেছে বারবার।
×