ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্ত ব্যাংক

প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার

বিডিনিউজ ॥ প্রথম এ্যাকাউন্ট খুলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) পরিচালিত ‘সীমান্ত ব্যাংক লিমিটেড’-এর তফসিলি ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে বৃহস্পতিবার এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মাত্র কয়েক দিন পরে আমাদের ঈদ-উল-আযহা। সীমান্ত ব্যাংকের উদ্বোধন এই বাহিনীর সকল সদস্যের জন্য আমার ঈদের শুভেচ্ছা উপহার।” শেখ হাসিনা ২২১ বছরের ঐতিহ্যবাহী বাহিনী বিজিবির পরিচালনায় এই ব্যাংকের উদ্বোধন করতে পেরে নিজের আনন্দের কথা প্রকাশ করেন এবং বিজিবি আরও নতুন নতুন ‘উপার্জনশীল প্রকল্প’ গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে প্রধানমন্ত্রী সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নতুন এই ব্যাংকের ফলকও উন্মোচন করেন। ৪০০ কোটি টাকা অনুমোদিত এবং ১০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে গঠিত সীমান্ত ব্যাংক লিমিটেডকে তফসিলি ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে গত ১০ আগস্ট গেজেট প্রকাশ করে সরকার। এর মধ্য দিয়ে অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ তৈরি হয় এ ব্যাংকের জন্য। সীমান্ত ব্যাংকের মালিকানা থাকবে বিজিবি কল্যাণ ট্রাস্টের হাতে। ঢাকার জিগাতলায় সীমান্ত স্কয়ারের কাছে নির্মিত নতুন ভবনে এর প্রধান কার্যালয়। এ বছরই খুলনা, সিলেট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহসহ ছয়টি স্থানে সীমান্ত ব্যাংকের শাখা খোলা হবে। আর আগামী বছরের মধ্যে আরও ২০টি শাখা খোলার লক্ষ্য ঠিক করেছে কর্তৃপক্ষ। এই ব্যাংক বিজিবি সদস্য এবং তাদের পরিবারের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে বলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “এখানে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও যথেষ্ট অবদান রাখতে পারবে।” এনআরবি ব্যাংকের এমডি মোখলেছুর রহমানকে ইতোমধ্যে সীমান্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পদাধিকারবলে এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হবেন বিজিবির মহাপরিচালক। সেনাবাহিনী পরিচালিত ট্রাস্ট ব্যাংকের আদলে নতুন এই ব্যাংকের কার্যক্রম চলবে। এই ব্যাংকে চাকরির ক্ষেত্রে বিজিবির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন। ঋণের ক্ষেত্রেও তারা বিশেষ সুবিধা পাবেন। স্বনির্ভরতা অর্জনে সরকার প্রতিটি বাহিনীকে সহায়তা করবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “আজ যে সীমান্ত ব্যাংক চালু হচ্ছে তা বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের একটি স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান।” ২০১৪ সালে পিলখানার দরবারে বিজিবির পক্ষ থেকে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আবেদন জানানো হলে তাতে সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী। গত বছর বিজিবি দিবসের অনুষ্ঠানে নতুন ব্যাংকের ‘লোগো’ উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এ ব্যাংকের আয় বিজিবির মুক্তিযোদ্ধা সদস্য, কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং তাদের পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। এ ব্যাংক সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, পেনশন স্কিম, গৃহনির্মাণ ঋণ, দুরারোগ্য রোগের জন্য দেশে-বিদেশে চিকিৎসা সহায়তা, কৃষি ঋণ, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মতো বহুবিধ খাতে ঋণ সহায়তা দেবে।” সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োাজনীয় অর্থ সহায়তা দিতে পারবে এই ব্যাংক। বিজিবির নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত ‘আলোকিত সীমান্ত’ ও ‘সমৃদ্ধির পথে সীমান্ত’ এর মতো বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নেও সহায়তা দিতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সবাইকে একটি করে ব্যাংক করে দেয়া হয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনীকে একটি ব্যাংক করে দেয়া হয়েছে। নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনী একটি করে ব্যাংক চাচ্ছিল। আমি বলেছি, দু’জনে যৌথভাবে করেন। তারা সে উদ্যোগটা নিয়েছে।” মুক্তিযুদ্ধে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাহসী ভূমিকার কথা স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, “একাত্তরের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারে তৎকালীন ইপিআরের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ধারণ করা ঘোষণা সুবেদার মেজর শওকত আলী ইপিআরের বেতারের মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়েছে দেন।” শওকত আলীসহ তিনজনকে পরে পাকিস্তানী বাহিনী আটক করে। চারদিন ধরে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয় তাদের। বিজিবির ১২ হাজার সদস্য সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন, শহীদ হন ৮১৭ জন। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য এ বাহিনীর দু’জন বীরশ্রেষ্ঠ, আট জন বীরউত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম এবং ৭৮ জন বীরপ্রতীক উপাধি পান। অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র সচিব মোঃ মোজাম্মেল হক খান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব মোঃ ইউনুসুর রহমান, বিজিবি মহাপরিচালক ও সীমান্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আহমেদ এবং সীমান্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোখলেছুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে সীমান্ত ব্যাংকের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রীকে একটি ক্রেস্ট উপহার দেন বিজিবির মহাপরিচালক আজিজ আহমেদ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর হাতে দুটি চিত্রকর্মও তুলে দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীও বিজিবি মহাপরিচালকের হাতে একটি ক্রেস্ট তুলে দেন।
×