ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গো. আযমের ভাগ্নের দাপটে গণপূর্ত ভবন ছেড়েছেন জাইকা কর্মকর্তারা

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৩০ জুলাই ২০১৬

গো. আযমের ভাগ্নের দাপটে গণপূর্ত ভবন ছেড়েছেন জাইকা কর্মকর্তারা

ফিরোজ মান্না ॥ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের ভাগ্নের হুমকিতে জাইকার কর্মকর্তারা গণপূর্ত ভবনে দুই সপ্তাহ ধরে অফিস করছেন না। তারা বাসায় বসে অফিসের কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। জাপানী কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করার জন্য অধিদফতরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও নিরাপত্তা প্রহরী মোতায়েন করা হলেও তারা ভয়ে অফিসে যাচ্ছেন না। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের ভাগ্নের সঙ্গে কয়েকজন জামায়াতপন্থী কর্মকর্তা অধিদফতরে প্রকাশ্যে মিছিল মিটিং করে যাচ্ছেন। প্রধান প্রকৌশলী তাদের সতর্ক করলেও তাতে পাত্তা দিচ্ছেন না জামায়াতপন্থী এসব কর্মকর্তা। এদিকে গণপূর্ত অধিদফতরে জামায়াতপন্থী (ঢাকা জোন) কর্মকর্তারা ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে হরিলুট করেছেন কোটি কোটি টাকা। ঢাকা জোনের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হলেও মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বিষয়টি নিয়ে গণপূর্ত অধিদফতরে দুটি পক্ষ মুখোমুুখি অবস্থান নিয়েছে। দুর্নীতিবাজরা একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধান প্রকৌশলী বলছেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংসদীয় কমিটি গণপূর্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের (গোলাম আযমের ভাগ্নে) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে। তার সঙ্গে রয়েছেন বাংলাদেশ পিডাব্লিউডি প্রকৌশলী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর, সহকারী প্রকৌশলী ওমর সাখাপ (৩ মাস আগে তাকে জয়পুরহাটে বদলি করা হয়), সহকারী প্রকৌশলী হাবিব (৩ মাস আগে নাটোরে বদলি করা হয়), রাশিদুল হাসান (হবিগঞ্জে বদলি করা হয়)। অভিযোগ রয়েছে, এই গ্রুপটি বহিরাগত লোক নিয়ে এসে অধিদফতরে শোডাউন করেন। আলী আকবরের ঢাকা জোন (সাভার) শেরেবাংলা নগরে। কিন্তু তিনি শেরেবাংলা নগরে অফিস করেন না। তিনি অধিদফতরেই সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে চলা ফেরা করেন। যাদের বদলি করা হয়েছে তারা কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে প্রতিদিন ভবনে নানা অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। তাদের বেপরোয়া আচরণের কারণে জাপানী কর্মকর্তারা গণপূর্ত ভবনে তাদের অফিস থাকার পরও তারা সেখানে অফিস করছেন না। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হলে মন্ত্রণালয় ভবনের নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দেয়। পরে ভবনে সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা রক্ষী বসানো হয়। কিন্তু এই গ্রুপটি এতে কোন তোয়াক্কা করছে না। যখন তখন তারা সেখানে বহিরাগত নিয়ে ঢুকে পড়ছেন। তারা প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সীর বিরুদ্ধে মিছিল পর্যন্ত করেছেন। এ ঘটনার পর প্রধান প্রকৌশলী আলী আকবরকে তলব করে ভবনে যাতে কোন বহিরাগত না আসে সে বিষয়ে সতর্ক করেন। তাতেও কোন লাভ হয়নি। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর মদদে তিনি তার কাজ করেই যাচ্ছেন। এ বিষয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি কোন কথা বলেননি। তবে আলী আকবর বলেন, ভবনে মিছিল মিটিং করা অসম্ভব একটি বিষয়। পুরো ভবনটি ১৪-১৫টা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটর করা হয়। আমার অফিস সাভার জোনে। আমি নিয়মিত অফিস করে বিকেল ৫টা সাড়ে ৫টায় পূর্ত ভবনে আমাদের সমিতির অফিসে বসি। সেখানে রুটিন কাজ করে চলে যাই। তাছাড়া বর্তমান অবস্থায় কি করে মিছিল মিটিং করব আপনিই বলেন। অন্যদিকে, পিডাব্লিউডি ঢাকা জোনে বেশ কিছু ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে জামায়াতপন্থী কর্মকর্তারা। সরকারবিরোধী ওই কর্মকর্তা উল্টো বরং সরকার সমর্থক কর্মচারী-কর্মকর্তাদের নানাভাবে শায়েস্তার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমন অভিযোগ অস্বীকার করে জামায়াতপন্থী কর্মকর্তারা বলেন, আমাদের নানাভাবে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। জামায়াতপন্থী কর্মকর্তাদের একচ্ছত্র দাপটে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সীসহ অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীই কোণঠাসা হয়ে আছেন। কাউকে তোয়াক্কা না করে গণপূর্ত অধিদফতরের ঢাকা জোনের আওতাধীন বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করাচ্ছেন তিনি নিজের পছন্দের জামায়াত-বিএনপি ঘরানার ঠিকাদারদের দিয়ে। তার এই কর্মকা-ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেছেন সরকার সমর্থক ঠিকাদাররা। পাশাপাশি রফিকুল ইসলামের স্বেচ্ছাচারিতায় গণপূর্ত অধিদফতরের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যেই দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। সূত্র জানিয়েছে, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ঢাকাতেই সাড়ে ৬ বছর ধরেই কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে একাধিকবার তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও স্বপদেই বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই কর্মকর্তা তার মামা যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম যখন মারা যান সেই জানাজায়ও অংশও নিয়েছিলেন। এর আগে তার সরকারী গাড়িতে গোলাম আযমকে নিয়ে এলাকায়ও গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই সময় এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছিল। তিনিই এখন গণপূর্ত অধিদফতরে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সী বলেন, তাদের শক্তির উৎস কোথায় আমার জানা নেই। তবে আমি বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখবেন। কয়েক দফা তাদের সতর্ক করা হলেও তারা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, গণপূর্ত অধিদফতরে জামায়াত-বিএনপিপন্থীদের অরাজকতার কারণে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী কাজে গতি আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। কাজের গতি কিছুটা ফিরলেও ষড়যন্ত্র চলছে।
×