ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় চার সেনা কর্মকর্তা ও তনুর বাবা-মা’র সঙ্গে ফের আলোচনা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২০ এপ্রিল ২০১৬

কুমিল্লায় চার সেনা কর্মকর্তা ও তনুর বাবা-মা’র সঙ্গে ফের আলোচনা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ১৯ এপ্রিল ॥ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলার তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান সিআইডি ঢাকার বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহ্ার আকন্দের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি দল মঙ্গলবার ফের কুমিল্লায় আসেন। দুপুরের দিকে এ দলটি কুমিল্লার সিআইডির কর্মকর্তাদের নিয়ে সেনানিবাসে যান। এ সময় তারা যে স্থান থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল সেই স্থান পুনরায় পরিদর্শন করেন এবং তনুর বাসায় গিয়ে তার বাবা-মা এবং ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া সিআইডির দলটি ৪ সেনা কর্মকর্তার সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা করে। বিকেলের দিকে কুমিল্লা সিআইডি কার্যালয়ে ফিরে এসে প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডাঃ শারমিন সুলতানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মামলাটি বুঝে পাওয়ার পর থেকে সিআইডি এ পর্যন্ত সামরিক-বেসামরিক ও চিকিৎসকসহ ৫২ জনকে বিভিন্ন সময় জিজ্ঞাসাবাদ করে। এদিকে প্রথম ময়নাতদন্ত রিপোর্টে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ না থাকায় এবং দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রদানে বিলম্ব হওয়ায় হতাশ তনুর পরিবারসহ বিচার দাবিতে প্রতিবাদীরা এখনও সোচ্চার। গত ২০ মার্চ রাতে কলেজছাত্রী তনুর লাশ সেনানিবাসের ভেতরে একটি জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার পিতা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথম তদন্তের দায়িত্ব পান কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সাইফুল ইসলাম। পরবর্তীতে তদন্তের ভার আসে ডিবির কাছে। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ওসি একেএম মনজুর আলমের আবেদনের প্রেক্ষিতে তনুর লাশ উত্তোলনের আদেশ দেয় আদালত। ৩০ মার্চ জেলার মুরাদনগর উপজেলার মীর্জাপুর গ্রামের কবরস্থান থেকে তনুর লাশ উত্তোলন করে পুনঃসুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত, ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আলামত সংগ্রহ করা হয়। এতে তনুর প্রথম সুরতহাল রিপোর্ট ও দ্বিতীয় সুরতহাল রিপোর্টে গরমিলসহ প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ না থাকায় তনুর পরিবার ও হত্যার বিচার দাবিতে আন্দোলনরত প্রতিবাদীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম নেয়। এছাড়া দ্বিতীয়বার লাশ উত্তোলনের পর ২১ দিন পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়ায় তনু হত্যার বিচার নিয়ে তার পরিবার ও জনমনে ক্ষোভ-হতাশা ক্রমেই বাড়ছে। এদিকে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডিও দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সিআইডির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মামলাটি বুঝে পাওয়ার পর থেকে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে গত ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও তনুর বাবা-মা পরিবারের সদস্যদেরসহ এ পর্যন্ত ৫২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা বিশ্লেষণে সিআইডির ডিআইজি (ক্রাইম-ইস্ট) মাহবুব মোহসিনসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা ঢাকা ও কুমিল্লায় একাধিকবার বৈঠক করেছেন। এরই মাঝে মামলা তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান সিআইডি-ঢাকার বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দের নেতৃত্বে এএসপি এহসান উদ্দিন চৌধুরী, পরিদর্শক মনজুর এ মাওলাসহ উচ্চপর্যায়ের তদন্ত সহায়ক দল ৪র্থ বারের মতো মঙ্গলবার কুমিল্লায় আসেন। দুপুরে তদন্ত সহায়ক দল এবং কুমিল্লাস্থ সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব চন্দ্র রায়, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমেদ, সহকারী পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীমসহ কর্মকর্তারা কুমিল্লা সেনানিবাসে যান। সিআইডির কর্মকর্তারা সেনানিবাসে তনুর লাশ উদ্ধারের স্থান পুনরায় পরিদর্শন করেন এবং তনুদের বাসায় গিয়ে তার বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগমসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। সিআইডির কর্মকর্তারা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অতিথিশালায় বসে লে. কর্নেল ও মেজর পদমর্যাদার ৪ সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন। বিকেলে কুমিল্লা সিআইডির কার্যালয়ে ফিরে এসে প্রথম ময়নাতদন্তকারী কর্মকর্তা ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডাঃ শারমিন সুলতানাকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করে। সূত্র জানায়, মামলার রহস্যোদ্ঘাটন ও ঘাতকদের শনাক্ত করতে আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং এ যাবত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া কিছুদিনের মধ্যে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টও পাওয়া যাবে। সিআইডি-কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান জানান, এটি একটি নিছক পরিকল্পিত হত্যাকা-। মামলার তদন্তে ঢাকার সিনিয়র কর্মকর্তাদের নিয়ে আমরা নানা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
×