ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

রিজভীর পর খালেদা ॥ দলীয় অফিসে টানা অবস্থানের নাটক

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ৭ জানুয়ারি ২০১৫

রিজভীর পর খালেদা ॥ দলীয় অফিসে টানা অবস্থানের নাটক

শংকর কুমার দে ॥ দুই বছর পর আবার সেই দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানের নাটক। রিজভী নাটকের পর অভিন্ন নাট্যমঞ্চে অবস্থান শুরু করলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির পল্টনের কার্যালয়ে একাধিকবার অবস্থান ছাড়াও একবার টানা ৫২ দিন অবস্থান করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আর বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া শনিবার রাতে থেকে টানা প্রায় ৪ দিন ধরে অবস্থান করছেন বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে। গুলশানেই নিজ বাসভবন সামনে থাকতে বেগম জিয়া কেন গুলশানেরই দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছেন, সেই বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানান, গুলশানের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে টানা অবস্থান কওে দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার পাওয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরা, মানবাধিকার সংগঠন, সুশীল সমাজ, বিশ্ব নেতৃবৃন্দের তীব্র নিন্দা-প্রতিবাদ আদায় ও সহানুভূতি পাওয়ার মাধ্যমে সরকারের ওপর এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টির এটা এক কৌশল বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। গুলশানের নিজ বাসভবনে অবস্থান করলে এই ধরনের কৌশল গ্রহণের সুযোগ পাওয়া যেত না। আবার আন্দোলনের ব্যর্থতার দায়ভার যাতে নিজ ও নিজ দলের কাঁধে না বর্তায় সেজন্যও এ ধরনের কৌশল নেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানান, বাসভবন ছেড়ে দলীয় কার্র্যালয়ে অবস্থান নাটকের প্রথম অবতারনা করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। একবার অসুস্থতা আরেকবার পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে প্রতিদিনই সংবাদ সম্মেলন, বক্তব্য, বিবৃতি প্রদান করতেন তিনি। বিগত ২০১৩ সালের অক্টোবরে একবার পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে রিজভী অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে দেয়ার পর তাকে দেখার জন্য বেগম খালেদা জিয়া এসেছিলেন রাত্রি বেলায়। এর আগে তিনি টানা ৫২ দিন পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন। যেই রাতে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে রিজভীকে দেখা করতে আসেন তখন তার সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় নিয়োজিত ব্যক্তিগত বাহিনীর সদস্যরা। বেগম জিয়া যখন আসেন তখন তার সঙ্গে ছিলেন প্রায় অর্ধশত মামলার আসামি ছাত্রদলের নেতা সালাউদ্দিন টুকু। বেগম জিয়ার সঙ্গে থাকা ছাত্রদল নেতা টুকুর নেতৃত্বে গাড়ি বহরের গাড়ি তুলে দেয়া হয় কর্তব্যরত পুলিশের ওপর। তখন ছাত্রদল নেতা টুকুকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, দায়ের করা হয়েছিল মামলাও। সেই মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। কিন্তু আবারও সেই দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানের নাটক রিজভীর পরিবর্তে এবার নিজেই শুরু করলেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির নেত্রী অবরুদ্ধ বলে তার দাবি অনুযায়ী এখন তার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের সাংবাদিক, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী পেশাজীবীরা। দেশী-বিদেশী টেলিভিশন চ্যানেল, সংবাদ মাধ্যমে তার সাক্ষাতকার প্রদান, বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে চলেছেন। অসুস্থও হয়ে পড়েছেন। প্রতি রাতেই টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর টক শো-তে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় বিষোদ্গার করে যাচ্ছেন সরকারের কাছ থেকে সুবিধা বঞ্চিত একশ্রেণীর ও জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের সুশীল সমাজের বুদ্ধিজীবীরা। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ৫ জানুয়ারির দিনকে সামনে রেখে রাজধানীর সচিবালয়, জাতীয় প্রেসক্লাব, মতিঝিলের অফিস পাড়াসহ স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতা ও নৈরাজ্যের আশঙ্কার বিষয়ে আগেই রিপোর্ট দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। শুধু তাই নয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের পর গ্রেফতারকৃত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির জঙ্গীরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার নীল নক্সা তৈরি করেছে জেএমবি। ৫ জানুয়ারির নাশকতা ও নৈরাজ্যের নীল নক্সা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর আবার কোন ষড়যন্ত্রের ছক আঁকা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
×