জনকণ্ঠের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে এবার যুক্ত হয়েছেন উদীয়মান উদ্যোক্তা কাশ্মীরি বিউটি বাই জিনিয়াত (পেজের নাম)। তার সঙ্গে কথা বলেছেন ইশরাত পায়েল। সব শুনে জানাচ্ছেন- অপরাজিতা প্রতিবেদক
জিনিয়াত জাহান একজন নবীন সফল উদ্যোক্তা। বহু চড়াই-উৎরাই পার হয়ে এই তরুণীকে সামনে চলার পথ নিরাপদ আর নির্বিঘ্ন করতে হয়েছে। জীবনের সংগ্রামী সময়গুলো ভাগ করে নিয়েছেন জনকণ্ঠের সঙ্গে। আবার এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নময় অধ্যায়ও সাবলীলভাবে তুলে ধরতেও ছিলেন দ্বিধাহীন, অকুণ্ঠিত।
কেমন আছেন-
ভাল আছি। এখানে আসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
প্রশ্ন : শুরুটা কখন এবং কিভাবে-
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নিজেকে তৈরি করার অদম্য আগ্রহে ত্বক পরিচর্যার প্রতি প্রবল মনোযোগ নিবেদিত হলো।
মাঝখানে ২০২০ আর ২০২১ সালের করোনা দুর্ভোগ কিভাবে সামলানো গেল-
চরম ছোঁয়াছে রোগটি যেভাবে মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন গ্রন্থিতে বিচ্ছিন্নতা এনে দিল তা ছিল অত্যন্ত খারাপ একটা দুঃসময়। সেই স্থবিরতার চরম প্রকোপে মূলত সবাই ঘরবন্দী হয়ে গেল। যেখানে আমার ব্যবসাটা খুব বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি। কারণ আধুনিক ও প্রযুক্তির বাংলাদেশ যে নতুন বিশ্ব আমাদের উপহার দিল সেখান থেকেই আমরাও একটা বিস্ময়কর জগতে প্রবেশ করলাম। সে সময় শুধু গৃহিণীরা নয় অনেক কর্মজীবী নারী ও পড়ুয়া ছাত্রীরাও ঘরে আটকে গেল। সেটা স্কুল, কলেজ প্রথম থেকেই ত্বক পরিচর্যায় বিশেষভাবে নজর দিয়ে থাকে। ফলে আমার ব্যবসাটা সেখাবে লোকসানের পর্যায়ে যায়নি। তবে লাভ-ক্ষতির হিসেবটা মূলত আপেক্ষিক। সব মিলিয়ে লোকসান সেভাবে গুনতে হয়নি।
উদ্যোক্তার কাতারে সৌন্দর্যের রূপকার হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার গল্প-
ত্বক পরিচর্যা যে কোন মেয়ের সহজাত একটি সৌন্দর্য প্রিয়তা। নিজেকে মনোরমভাবে উপস্থাপন করতে গেলে ত্বকের যত্নের প্রয়োজন পড়ে সবচেয়ে বেশি। সেটা কিশোরী থেকে একবারে প্রৌঢ়ত্ব এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও ত্বকচর্চা বিশেষ জরুরী। নারী হিসেবে সেখানেই নজরটা গিয়ে নিবদ্ধ হলো। যা এক প্রকার স্বাভাবিকই বলা যায়।
ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে তৈরি করলেন কিভাবে-
বিবিএ সম্পন্ন করে একটা পেশায় সম্পৃক্ত হয়ে যাই। ইতোমধ্যে অনুভব করি কিছু শারীরিক সমস্যা, মাথাব্যথার যন্ত্রণায় কাতর হয়ে যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যাইÑ সে সময় পড়তে হয় মহা বিপাকে। ধারণা দেওয়া হয় আমার ব্রেন টিউমার হয়েছে। যার জন্য অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়। সেখানেও নাকি একই রিপোর্ট। ডাক্তারদের পরামর্শ আসেÑ ঘুরে বেড়াতে এবং বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আনন্দ করে সময় কাটানো। সত্যিই ভয়ই পেয়ে গেলাম। পরে একসময় বেরিয়ে পড়লাম ঘুরতে। ভ্রমণপ্রিয় মেয়ে আমি।
সুতরাং বেশ আনন্দ নিয়েই বেরিয়ে গেলাম নতুন দেশ দেখার আগ্রহে। ভারত আর পাকিস্তানের কাশ্মীরও বেড়াতে গেলাম। ভিন দেশের চিকিৎসায় ধরা পড়ল আমার আসলে কোন টিউমার হয়নি। সাইনাসের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছি। মনে হলো অনেক বড় সমস্যা থেকে মুক্তি মিলল। হাঁফ ছেড়ে যেন বেঁচে উঠলাম। শুধু তাই নয়, নতুন করে জীবনের গ্রন্থিকে নব রূপে ভরিয়েও তুললাম। চাকরি ছাড়ার দুঃসহ যাতনা সর্বক্ষণ তাড়িয়ে বেড়াতো। সেখান থেকেও বেরুতে সময় লাগল না। আশার আলোয় উদ্যোক্তা হওয়ার সুপ্ত বাসনায় আবারও নিজেকে সাজাতে লাগলামÑ রাঙিয়ে তুললাম।
নিজেকে উদ্যোক্তার কাতারে দাঁড় করানোর রহস্য?
বেড়াতে গিয়ে মূলত কাশ্মীরেই সৌন্দর্যচর্চার হরেক উপকরণের সঙ্গে পরিচিত হলাম। সাবান, প্রয়োজনীয় তেল (ঊংংবৎঃরধষড়রষ) এসবের খোঁজ পেয়ে দেশেও কিছু নিয়ে আসলাম। তারপর শুরু হলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা পাউডার সংগ্রহ করে তা মেশানোর নিত্যনতুন কর্মযোগ, সত্যিই অভাবনীয় এক বিস্ময় আর নতুন উদ্ভাবনে নিজেকে অন্যরূপে রাঙিয়ে তোলা। সেটা শুধু যে নারী সৌন্দর্যের নানা মাত্রিক উপকরণই নয় বরং নিজস্ব সুপ্ত ক্ষমতাকেও অন্যভাবে জাগিয়ে রাখা। ভারতের গোয়াতেও ভ্রমণ করার সময় সেখানকার অনেক খামারে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। সেখান থেকে অনেক আয়ুর্বেদী উপকরণও খোঁজ পেয়ে যাই। এইভাবেই নিজেকে নতুন রূপে তৈরি করার সুযোগ ও সুবিধা হাতের নাগালে আসে। তবে ক্রিম আপার নিজস্ব কোন ক্রিম নেই। বরং কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটুকুই শেখাতে পারে।
প্রতিষ্ঠিত সৌন্দর্যের রূপকাররা কিভাবে অনুপ্রেরণা দেন?
তারা কিছু শেখালেও সেখানে অর্থ লেনদেনের বিষয় থাকে। মাঝে মধ্যে টাকার অঙ্কটা বেশ ভারি হয়। নতুনভাবে তৈরি হওয়া উদ্যোক্তাদের প্রেরণা এবং প্রোডাক্ট বানাতে বিভিন্ন উপকরণ মেশানোর ওপর প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকেন রূপচর্চার রূপকাররা। তবে ব্যয় থেকে আয় খুব বেশি না হলেও সামঞ্জস্য সব সময় থাকে। সবচেয়ে জরুরী ক্রেতাদের সামর্থ্যকে বিবেচনায় আনা। ১০ লাখের মতো ক্রেতা এবং পেইজ ফ্যান ইতোমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে নিজের।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা-
নিজেকে সার্থক ও পরিপূর্ণভাবে উদ্যোক্তার কাতারে নিয়ে যাওয়া। আমার প্রেডাক্ট যারা ব্যবহার করেন তাদের ত্বককে যথার্থভাবেই যতœশীল রাখা।
সব থেকে অপছন্দের ক্রিম-
পাকিস্তানী ক্রিম যা ত্বকের বেশ ক্ষতির কারণ হয়।
সবচেয়ে পছন্দের-
অবশ্যই নিজের তৈরি করা ক্রিম।
পরীমণিকে কোন ক্রিমটা দেবেন-
নিজের তৈরি ক্রিমটাই দেব যা সব ধরনের ত্বক পরিচর্যায় সাহায্য করবে।
কালো হওয়ার কোন ক্রিম-
হাসতে হাসতে আসলে আমার জানা নেই।
বাংলাদেশের স্বঘোষিত হিরো-
হিরো আলম। তিনি আসলে ভাল মানুষ।
তাকে কি কোন ক্রিম দেওয়া যায়-
উচ্ছ্বল, উৎফুল্ল জিনিয়াত আনন্দে ভাসিয়ে দিলেন।