ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাংবাদিক তুলির জন্য ভালবাসা

-

প্রকাশিত: ২২:০৬, ১৮ জুলাই ২০২২

সাংবাদিক তুলির জন্য ভালবাসা

সাংবাদিক তুলি

নারী নির্যাতন শুধু বাংলাদেশেই নয় দুনিয়াজুড়ে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক দুঃসময়বিভিন্ন দিক থেকে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া সমাজের সমসংখ্যক নারীর নানামাত্রিক সঙ্কটের আবর্তে পড়াও এক প্রকার দুর্ভোগউন্নয়নশীল দেশ তার গতিশীল কর্মযোগে বিভিন্ন অপশক্তির শিকারে বিপন্ন হয় তা নতুন কিছু একেবারেই নয়সেই অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্প বিপ্লবের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের ধারায় হরেক বিপত্তি মাথাচাড়া দেওয়াও এক অনাকাক্সিক্ষত বিপর্যয়তেমন দুঃসময়ে ইউরোপব্যাপী ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায় নারী নির্যাতন, আত্মহত্যা, কিশোর অপরাধসহ বহুমাত্রিক অবক্ষয়বাংলাদেশও অতিক্রম করছে তেমন ক্রান্তিকাল

উন্নয়নের অবধারিত কর্মপ্রকল্পের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় সমাজ সংস্কার যে মাত্রায় চরম কোপানলে আবর্তিত হয় সেখানে ওঁ পেতে থাকা অপশক্তির দায়ও কোনভাবেই কম নয়সম্প্রতি উঠে আসে এক সম্ভাবনাময় নারী সাংবাদিক সোহানা তুলির মর্মান্তিক মৃত্যুরাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় একটি বাসা থেকে তুলির মরদেহ উদ্ধার করা হয়শোবার ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলানো অবস্থায় তার শবদেহ পাওয়া যায়তুলির বয়স ৩৮ বছরঘটনাটি আত্মহত্যা নাকি খুন এই বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ এখন অবধি হয়নিতবে লাশের ময়নাতদন্তের মধ্য দিয়ে সব রহস্য বের হয়ে আসার অপেক্ষায় আছেন স্বজন এবং শুভাকাক্সক্ষীরা২০১৮ সাল থেকেই সোহানা তুলি হাজারীবাগের বাসায় ভাড়া থাকতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করে গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে পেশাগত জীবনকে নতুনভাবে তৈরি করতে থাকেন

তেমন সম্ভাবনায় দৈনিক আমাদের সময়’, ‘দৈনিক কালের কণ্ঠেনিজের কর্ম জীবনকে এগিয়ে নেনতবে গণমাধ্যমের এই পেশায় কয়েকবার পরিবর্তনের ধারায় কর্মক্ষেত্রে এসেছে ভিন্ন মাত্রার যোগসাজশসর্বশেষ তিনি ২০২১ সালের মে পর্যন্ত বাংলা ট্রিবিউনেকর্মরত ছিলেন জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক হিসেবেশেষমেশ সেখান থেকেও চলে যাওয়ার চিত্র উঠে আসে

পরবর্তীতে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানেও কাজ করার অভিজ্ঞতাও অর্জন হয়তবে মৃত্যুর আগে অনলাইন ব্যবসায়ও নিয়োজিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়যেখানে একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে নতুনভাবে তৈরি করার চিত্র দৃশ্যমান হয়

সোহানা তুলি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য ছিলেনসাব এডিটর কাউন্সিলেরও সদস্যপদ পান তিনি১৩ জুলাই বুধবার নিকটতম বান্ধবী নন্দীতা ফোন করে তুলিকে না পেয়ে চিন্তিত হনদেরি না করে সরাসরি বাসায় চলে আসেন নন্দীতাদরজায় কড়া নাড়ার পর কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না দেখে বাসার নিরাপত্তা কর্মীকে খবর দেওয়া হয়দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে দেখা যায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলানো তুলির নিথর মরদেহছোট ভাই মোহাইমিনুল ইসলামও আগের দিন যশোর থেকে ঢাকায় আসেসেদিনই ভাইয়ের সঙ্গে তুলির সর্বশেষ কথা হয়

তুলির দেশের বাড়ি যশোর জেলায়প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা মনে হলেও ময়নাতদন্তের ফলের ওপর নির্ভর করছে সবটাহত্যা না আত্মহত্যাতবে পা ওপরে ঝুলানোই ছিল যা আত্মহত্যার আলামত দিচ্ছেপারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকেও এমন কোন তথ্য উপাত্ত উঠে আসেনি যাতে হত্যার কোন চিহ্ন পাওয়া যেতে পারতসবটা এখন সুরতহালের ওপর নির্ভর করছে

 

তথ্যসূত্রে জানা যায় অনলাইন ব্যবসায় লাভের মুখ দেখেননি তুলিলোকসান গুনেছেনএখনও সবই অনুমানভিত্তিকসঙ্গত কারণে হতাশা থেকেই আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক ধারণা পুলিশেরতবে বিভিন্ন দিক থেকে তদন্ত অব্যাহত রয়েছেমূল সূত্র জানতে আরও অপেক্ষা করতে হবেনারীরা এমনিতে সাংবাদিকতার জগতটায় পা রাখে একটু দেরিতেইজোয়ার এসেছিল নব্বইয়ের দশকেএর পর পর ক্রমান্বয়ে এগিয়ে চলা নারীরা সাংবাদিকতার সমৃদ্ধ বলয়ে নিজেদের যোগ্যতম হিসেবে এগিয়ে নেওয়াই শুধু নয় প্রতিষ্ঠা আয়ত্বে আনাও এক অভাবনীয় কর্মযোগ

তবে সব কিছুর ওপর পেশাকে দায়ী করা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়তুলির জীবনে অন্য কোন হতাশা তাকে দুর্বল করেছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরীদেখা যাক কোন বিপন্ন পরিস্থিতিতে তুলির পৃথিবী থেকে শেষ বিদায়- তাও যদি আত্মহননের মতো দুর্বিষহ পরিস্থিতি হয় মেনে নেওয়া আসলেই কঠিন হবেআবার হত্যার মতো মর্মস্পর্শী অঘটন ঘটলেও দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিতেও তার যথার্থ বিচার হয়ই না

অপরাজিতা প্রতিবেদক

×