সালমা খান
স্বনামখ্যাত নারী অধিকার নেত্রী সালমা খান সম্প্রতি প্রয়াত হলেন। কীর্তিমান এই নারী নেত্রী ও সংগঠক বর্ণাঢ্য জীবন পার করেন মানবতার জয়গান গেয়ে। শুধু তাই নয়, সমাজের অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া নারীদের স্বাধীনতা ও অধিকার হরণের লড়াইয়ে একজন পথিকৃৎ সেনানির ভূমিকায় আজীবন পাশে থাকার অঙ্গীকারই ছিল মহান ব্রত।
নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সাধনে এই মহীয়সী নেত্রী যে ঐতিহাসিক অবদান রাখেন তা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। বঞ্চিত নারীদের জন্য নিবেদিত এই অকুতোভয় যোদ্ধা নারীকে তার যথার্থ মর্যাদা ও সম্মান দিতে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের অংশীদার হয়ে আজও ভাস্বর হয়ে আছেন। জাতিসংঘের সিডও কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান এই দুঃসাহসিক নারীর যাবতীয় কর্মযোগ অসহায়, পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর জন্যই উৎসর্গিত ছিল। ১৯৪১ সালে জন্ম নেয়া সালমা খান দীর্ঘ জীবনের পালাক্রমে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষা জীবনের দুর্লভ সময়গুলো পার করেন।
স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে স্নাতকোত্তর ও মেধা-মনন যোগ্যতায় পার হতে পেছনের দিকে তাকাতে হয়নি। একই ধারাবাহিকতার জ্ঞানচর্চার অভাবনীয় স্ফুরণে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ^বিদ্যালয় থেকে উন্নয়ন অর্থনীতিতে স্নাাতকোত্তর সম্মান অর্জন করাও ছিল জীবনের বর্ণাঢ্য সম্মিলন। আমেরিকার কানেকটিকাট বিশ^বিদ্যালয় থেকে পাবলিক সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড ট্রেনিংয়ে ডিপ্লোমা কোর্স সমাপ্ত করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা করাও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
পরবর্তীতে পরিকল্পনা কমিশনে যোগ দিয়ে পেশাগত জীবনকে আরও বর্ণময় করে তোলেন। তেমন সফলতায় নিজেকে এগিয়ে নেন ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হওয়ার অবিস্মরণীয় গৌরবে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র বিরোধিতাকারী সালমা খান সিডও সনদের সরাসরি অংশীদারই শুধু নন তার চেয়ে বেশি জাতিসংঘ কমিটির চেয়ারপার্সনের পদ অলঙ্কৃত করাও নারী জাতির অধিকার আদায়ে সচেতন দায়বদ্ধতা।
তাছাড়া ১৯৯৭-৯৮ সালে প্রথম এশীয় হিসেবে তিনিই এই সম্মানজনক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন। এর আগ থেকেই সিডও সনদের প্রতি তার অকৃত্রিম সহযোগিতায় নারী সমাজ একজন দক্ষ ও কর্তব্যপরায়ণ নেত্রীকে তাদের সম্মুখ সমরে পাশে পেয়েছিল। সেটা একেবারে ১৯৯৩ সালে যখন তিনি সিডও কমিটির সদস্যপদ লাভ করেন।
পরপর তিন মেয়াদে তিনি এই কমিটিতে দায়িত্ব পালন করে ১২ বছর নিজেকে সম্পৃক্ত রাখাও ছিল অর্ধাংশ নারীদের জন্য সর্বসময়ের কর্মদ্যোতনা। বিভিন্ন সম্মানজনক পদ অলঙ্কৃত করে বেসরকারী সংস্থা ‘উইমেন ফর উইমেন’ এর সভাপতির আসনে অভিষিক্ত হন। নারী সংক্রান্ত এমন সংস্থার সঙ্গে নিজেকে সমর্পণ করে হরেকরকম গবেষণাকর্মও পরিচালিত করেন সংশ্লিষ্টদের জন্য।
নারী উন্নয়ন বিষয়ক গবেষণা ও প্রকাশনার জন্য ১৯৯০ সালে এশিয়াটিক সোসাইটির পক্ষ থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে পান শ্রেষ্ঠ নারী প্রশাসক হিসেবে অবিস্মরণীয় খেতাব নারীদের প্রতি অসীম দায়বদ্ধতায় রোটারি ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার সমৃদ্ধ জীবনের অনন্য যোগ। জীবনটা কেটেছে নারীর প্রতি সহিংসতা, বৈষম্য আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু, পর্যায়ক্রমিক প্রাতিষ্ঠানিক ও সুশৃঙ্খল কার্যক্রমের অবধারিত পরিক্রমায়।
নানামাত্রিক মর্যাদায় সম্মানজনক পদ অধিকার করাই শুধু নয় নারীর অসম্মান অপমানের বিরুদ্ধে নিয়ত ঠা-া লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়া এই মহীয়সী নেত্রী আগামীর দিনগুলোতেও নারী জাতির দিশারী হয়ে থাকবেন। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সহানুভূতি জানাচ্ছি।
অপরাজিতা প্রতিবেদক