ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জামিল উর রহমান

দূরে রাখুন মানসিক দুশ্চিন্তা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

দূরে রাখুন মানসিক দুশ্চিন্তা

ঝামেলাপূর্ণ চিন্তাগুলোর তালিকা তৈরি করুন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রিক্স ওয়ারেন হাফিংটন পোস্টকে বলেন, আপনি যদি আপনার নিজের মধ্যে উদ্বেগজনক চিন্তার উপস্থিতি লক্ষ্য করেন তাহলে চিন্তার প্রবাহকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন এবং তারপর চিন্তাকে স্থগিত রাখুন। ওয়ারেন এই কৌশলটিকে ‘দুশ্চিন্তা স্থগিতকরণ’ বা ‘দুশ্চিন্তার পরিকল্পনা’ নামে অভিহিত করেন, যা খুবই কার্যকরী। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনি হয়তো একটি ছবি দেখছেন এবং তখনই আপনার আসন্ন একটি প্রেজেন্টেশন নিয়ে উদ্বেগ অনুভব করা শুরু করেছেন। আপনার চিন্তাকে তখনই স্থগিত করে দিন এবং নিজেকে বলুন, ‘আমি এখন কাজের মধ্যে নেই, আগামীকাল অফিসে গিয়ে এই বিষয়ে চিন্তা করব’। পরে, আপনার উদ্বিগ্নতার কারণটি বিবেচনা করতে পারেন। আপনার বিশ্বস্ত কারও সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। ‘ক্যাটাসট্রফি স্কেল’ তৈরি করুন একটি সাদা কাগজের ওপর একটি দাগ আঁকুন। দাগটির শুরুতেই শূন্য সংখ্যাটি লিখুন, মাঝামাঝি অংশে ৫০ এবং শেষে ১০০ লিখুন। এটিকে ওয়ারেন ‘ক্যাটাসট্রফি স্কেল’ নামে অভিহিত করেছেন। তারপর নিজেকে প্রশ্ন করুন যে সম্ভাব্য খারাপ কী হতে পারে? এবং সেগুলো মাত্রা অনুযায়ী দাগটির পাশে লিখে ফেলুন। চাকরির ইন্টারভিউ এ বিলম্বে পৌঁছানো অথবা কোন দুঃখজনক ঘটনা আপনাকে বিমর্ষ করে তুলতে পারে। কিন্তু আপনি যদি এগুলোকে একটি ছকে ফেলতে পারেন তাহলে পর্যায়ক্রমে এগুলো থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন। আপনি নির্ভর করতে পারেন এমন বন্ধুদের সাহায্য নেয়া, ফোনে কথা বলা অথবা বাইরে কোথাও ঘুরে আসা এ কাজগুলো স্ট্রেস কমাবে এবং দুশ্চিন্তাও দূর হবে। বড় প্রকল্পকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিন ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক কিথ হামফ্রেস বলেন, কর্মক্ষেত্রে চিন্তা ও উদ্বেগ দেখা দিলে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়। হামফ্রেস হাফিংটন পোস্টকে বলেন, উদ্বিগ্নতায় যারা ভোগেন তারা সময়মত কাজ সম্পন্ন করতে চান। কিন্তু উদ্বিগ্নতা তাদের নিষ্ফলা করে দেয়। হামফ্রেস বড় প্রকল্পকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করার পরামর্শ দেন। সামাজিক উদ্বেগ মোকাবেলা করার জন্য ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করা অনেক কার্যকরী। কোন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণের ক্ষেত্রে যদি আপনি অস্বস্তি অনুভব করেন তাহলে সেই অনুষ্ঠানের মধ্যমণি হওয়ার চিন্তা না করে একটি ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন যেমন, নিমন্ত্রণকর্তাকে শুভেচ্ছা জানান অথবা সেই অনুষ্ঠানের অপরিচিত কোন একজনের সঙ্গে কথা বলুন। আপনার উদ্বিগ্নতাকে ভুল প্রমাণ করুন লস এ্যাঞ্জেলস-এর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাংজাইটি এ্যান্ড ডিপ্রেশন রিসার্চ সেন্টারের গবেষকগণ দেখেন যে, যারা উদ্বিগ্নতায় ভোগেন তাদের উদ্বিগ্নতার প্রকাশই উদ্বিগ্নতাকে দমন করতে পারে। আপনি নিজেকে দেখান যে, খারাপ কিছুই হয়নি, তাহলেই আপনার ভয়ের অনুভূতি কমবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি হয়তো পাতাল রেলে চড়তে ভয় পান, আপনার মনে হয় যে আপনি সেই ট্রেনে চড়লে বছরের পর বছর ধরে সেখানে আটকে থাকবেন কোন সাহায্য ছাড়া। আপনার এই অনুমানটিকে মিথ্যে প্রমাণের জন্য পাতাল রেলে চড়ুন, কোথাও আটকে না থেকে আপনি যখন ভালভাবে ঘুরে আসবেন তখন আপনার ভয়টি মিথ্যে প্রমাণিত হবে। ওয়ারেন বলেন, এটি ক্ষমতা বৃদ্ধি করার একটি ব্যায়াম। ডনজেকে শান্ত রাখুন আমাদের শরীর নিজেই স্ট্রেস মুক্ত হতে পারে, শুধু বিষয়টি তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া প্রয়োজন। হামফ্রে পরামর্শ দেন যে, আপনার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে নজর দিন, পায়ের পাতা মেঝেতে লাগিয়ে রাখুন। আপনার যদি হাসতে ইচ্ছা নাও করে তাও হাসুন। আপনার শরীরের পেশিগুলোর টানটান ভাব দূর করুন, তারপর আবার টানটান করুন। প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করুন। উদ্বেগকে গ্রহণ করে নিন ওয়ারেন এর মতে, উদ্বিগ্নতাকে মেনে নেয়া এবং একজন উদ্বিগ্ন মানুষ হিসেবে নিজেকে মেনে নেয়ার অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। তিনি বলেন উদ্বিগ্নতা মানুষকে দুর্দশায় ফেলে। ওয়ারেন বলেন, আপনার উদ্বিগ্নতাকে মেনে নিন এবং তাহলেই আপনি লক্ষ্য করবেন যে আপনি একা নন। উদ্বিগ্নতা নিয়ে নিজেকে সহযোগিতা করুন এমনভাবে যেন একজন বন্ধু আপনাকে সহযোগিতা করেছিলেন যেভাবে। উদ্বিগ্নতার সমস্যা নিরাময়যোগ্য হামফ্রে বলেন, যদি এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং দৈনিক উদ্বিগ্নতা আপনাকে অসাড় করে দেয় তাহলে মনে রাখবেন যে মানসিক সমস্যার নিরাময় সম্ভব, যা সত্যিই অনেক কার্যকরী। ইউ.এস এর সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল এ্যান্ড প্রিভেনশন এর মতে, মানসিক সমস্যাযুক্ত মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ মনে করে যে অন্যরা তাদের সমস্যাটির বিষয়ে বুঝতে পারবে। সর্বোপরি এটা আপনার মনে রাখতে হবে যে, শান্ত ও স্বাস্থ্যবান থাকা আপনার প্রাপ্য। আপনি উদ্বিগ্ন থাকলেও এটা আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে। হামফ্রেস বলেন, অন্যরা আমাদের নিয়ে কী ভাবছে তা নিয়ে আমাদের কম ভাবা উচিত।
×