ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

ট্রাম্পের সমালোচিতএকটি বছর

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

ট্রাম্পের সমালোচিতএকটি বছর

গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কার্যকালের একটি বছর পূর্ণ হয়েছে। এই একটি বছরে ট্রাম্পের অর্জন কি, ব্যর্থতাই বা কি তা পর্যালোচনা করে দেখার সময় হয়েছে। আমেরিকায় একটি নতুন বই নিয়ে এখন বহুল আলোচনা চলছে। তাতে ট্রাম্পকে কার্টুনসুলভ প্রগলভ, আত্মপ্রেমী পুরুষ-শিশু বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে যার দুনিয়াদারি কিংবা নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে বিন্দুমাত্র কৌতূহল নেই। আর তার সমর্থকরা বলেছেন যে, ট্রাম্পের রাজনৈতিকভাবে অশুদ্ধ ও চাছাছোলা কথাবার্তার জন্যই সমালোচকরা তার ওপর এত রুষ্ট। এসবের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে ট্রাম্পের অভিষেকের পরবর্তী একটি বছর বস্তুনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে। তার জন্য তিনি কি বলেছেন বা বলে থাকেন সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে তার প্রশাসন প্রকৃতপক্ষে কি করেছে তার কি করেনি সেটা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। প্রথমে অভ্যন্তরীণ এজেন্ডা দিয়ে শুরু করা যাক। দেখা গেছে, ট্রাম্পের চেয়ে ঢের ঢের বেশি জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টদের কংগ্রেসকে দিয়ে আইন পাস করিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বেলায় যেখানে কংগ্রেসের উভয় পরিষদে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে সেখানে আইন পাসের ব্যাপারে বিশাল অচলায়তনের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আইন প্রণেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ম্যানেজ করার কোন অভিজ্ঞতা তার নেই। এ নিয়ে মাথাব্যথাও নেই। বরং মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করে ফেলার প্রবণতাই বরং তার মধ্যে কাজ করে। তার ইমেজ কোন কাজে আসে না। অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার তিনি সমানে চালাচ্ছেন। সীমান্ত প্রাচীরের দাবি জানিয়েছেন। শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন দিয়েছেন। একাধিক মহিলার আনীত যৌন অসদাচরণের অভিযোগ তিনি গায়েও মাখেননি। তবে নীতির ক্ষেত্রে তিনি কট্টর রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের মতোই আচরণ করেছেন। ওবামা যুগের আইনকানুন বিশেষ করে জ্বালানি ও পরিবেশ বিধি গুটিয়ে নিয়েছেন। এমন এক কর আইনে স্বাক্ষর দিয়েছেন যেখানে কর্পোরেট ট্যাক্স বহুলাংশে কমানো হয়েছে। সকল আমেরিকানের স্বাস্থ্য বীমা ক্রয়ের ওপর বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়েছেন এবং অভিবাসন আইন জোরদার করেছেন। রক্ষণশীল বিচারপতিদের নিয়োগ দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান পদে একজন অর্থোডক্স ব্যক্তিকে বসিয়েছেন। ইসরাইলে মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে তিনি বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় তুলেছেন। একদা তিনি ন্যাটোকে অপ্রয়োজনীয় ও অচল বলেছিলেন। শেষে অন্য সদস্যরা প্রতিরক্ষা খাতে আরও বেশি অর্থ ব্যয়ে আগ্রহ দেখালে আগের অবস্থান থেকে তিনি সরে আসেন। তিনি প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করেছেন, আফগানিস্তান ও সিরিয়ায় কর্মকা- চালানোর অবারিত সুযোগ জেনারেলদের দিয়েছেন এবং প্রেসিডেন্ট বাশার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছেন এই অজুহাত তুলে সিরীয় বাহিনীর ওপর বোমা বর্ষণ করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার সীমান্ত বরাবর ন্যাটো বাহিনীর উপস্থিতি সম্প্রসারিত করেছেন। সৌদিদের দুবানুতে আলিঙ্গন করেছেন, পরমাণু চুক্তি বাতিল না করেও ইরানের প্রতি কঠোরতর ভূমিকা নিয়েছেন এবং উত্তর কোরিয়াকে বাগে আনতে চীনকে নিয়োজিত করেছেন। তবে ট্রাম্পের কথাবার্তায় যে কিছু যায় আসে না তা নয়। ইরান চুক্তিকে এ যাবতকালের নিকৃষ্টতম চুক্তি আখ্যায়িত করে সেই চুক্তি ছিন্ন করার যে হুমকি তিনি দিয়েছেন তাতে ইরানের পাশ্চাত্য বিরোধী উগ্রপন্থীদের শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উনকে তিনি আখ্যা দিয়েছেন রকেটম্যান। দেশটির সঙ্গে সংঘাতকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে যেতে তার আগ্রহের কারণে প্রেসিডেন্ট উনও তাকে সমানে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলেছেন। তিনি ট্রাম্প প্যাসিফিক পার্টনারশিপ থেকে সরে এসেছেন। নাফতা বাতিল করার হুমকি দিয়েছেন এবং চীন জার্মানি ও জাপানসহ সে সব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি আছে তাদের প্রত্যেককে অভিযুক্ত করেছেন। চলতি বছর চীন মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক বিশেষ বন্ধুর অবস্থার মধ্য দিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ট্রাম্প ছয়টি মুসলিম দেশ, উত্তর কোরিয়া ও ভেনিজুয়েলার নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে আগমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে দারুণ হৈচৈ ও আইনগত বিরোধিতার জন্ম দিয়েছেন। তার মেক্সিকো সীমান্ত জুড়ে প্রাচীর নির্মাণ করে সেই অর্থ মেক্সিকোর কাছ থেকে আদায় করার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের পক্ষ নিয়ে বলেছেন যে ভার্জিনিয়ার শার্লোটসভিলের মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অতি চমৎকার কিছু মানুষ ছিলেন। তিনি ফৌজদারি অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত এরিজোনা সাবেক শেরিফ জো আরপাইওকে ক্ষমা করে দিয়ে বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মাইলস হোয়েনিগ নামে এক মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে ট্রাম্পের এক বছরের শাসনকাল সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ এক কার্যকাল। একমাত্র কর সংস্কার বিলে সই দেয়া ছাড়া তিনি এ পর্যন্ত আইনবিষয়ক কোন কাজ করেননি। যা করেছেন সবই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে করেছেন। সকল মানদ-ের বিচারে প্রথম বছরটি তিনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। সূত্র : টাইম
×