ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাবলো নেরুদার মৃত্যু ক্যান্সারে হয়নি!

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২২ অক্টোবর ২০১৭

পাবলো নেরুদার মৃত্যু ক্যান্সারে হয়নি!

নোবেল বিজয়ী কবি পাবলো নেরুদার মৃত্যু রহস্য নতুন মোড় নিয়েছে। ১৯৭৩ সালে মৃত্যুর পর চিলির এই কবি প্রোস্টেট ক্যান্সারে মারা গিয়েছেন বলে জানিয়েছিল তৎকালীন সরকার। তবে একনায়ক আগুস্তো পিনোশের ক্ষমতা দখলের দুই সপ্তাহের মধ্যে নেরুদার মৃত্যু নিয়ে তখনই সন্দেহ উঠেছিল। সরকারী ভাষ্য নিয়ে ৪৪ বছর ধরে চলা সন্দেহ আর অবিশ্বাসের মধ্যে শুক্রবার একদল ফরেনসিক গবেষক দাবি করেছেন, প্রোস্টেট ক্যান্সারে মৃতু্যু হয়নি নেরুদার। নেরুদার দেহাবশেষ থেকে নমুনা নিয়ে সম্প্রতি পরীক্ষা করে গবেষক দল এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। বিবিসি। তবে ঠিক কী কারণে নেরুদার মৃত্যু হয়েছে, সেই বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি গবেষক দল। তাকে পরিকল্পিত খুনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষক দলের প্রধান ডা. অর্লিও লুনা বলেন, প্রোস্টেট ক্যান্সার যে নেরুদার মৃত্যুর কারণ নয়, সে বিষয়ে তারা ‘একশ ভাগ নিশ্চিত’। তার মৃত্যু সনদে ‘প্রকৃত কারণ আসেনি’। এই কবি প্রোস্টেট ক্যান্সারে ভুগছিলেন ঠিকই, তবে ৬৯ বছর বয়সে তিনি যখন মারা যান, তখন তার ক্ষেত্রে প্রোস্টেট ক্যান্সার জীবনহানির মতো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল না বলে গবেষকরা দাবি করেছেন। ¯েপনের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুনা বলেছেন, তারা নেরুদার দেহাবশেষে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া পেয়েছেন, যা গবেষণাগারে তৈরি বলে তাদের মনে হচ্ছে। মৃত্যু ঘটাতে এই ব্যাকটেরিয়াই নেরুদার দেহে প্রবেশ করানো হয়েছিল কিনা, তাই নিয়ে এখন গবেষণা করছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। এই পরীক্ষার ফল আসতে ছয় মাস থেকে এক বছর লাগতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন ডা. লুনা। চিলির সমাজতন্ত্রী জাতীয়তাবাদী নেতা সালভাদর আলেন্দের সরকারকে হটিয়ে পিনোশের ক্ষমতা দখলের ১২ দিন পর ১৯৭৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে মৃত্যু ঘটে নেরুদার। ১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী পাবলো নেরুদা ছিলেন আলেন্দের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার গাড়িচালক আরায়ার দাবি, নেরুদা যখন ঘুমে ছিলেন, তখন তার দেহে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল, তাতেই তার মৃত্যু ঘটে। ২০১৩ সালেও বিসিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে আরায়া বলেছিলেন, তাকে হত্যাই করা হয়েছিল। মৃত্যুর আগেও আমি এই কথা থেকে একচুলও নড়ব না। পিনোশে ক্ষমতা দখলের পর নেরুদাকে মেক্সিকোতে নির্বাসনে পাঠাতে চেয়েছিলেন। নেরুদা দেশ ছাড়তে রাজি না হওয়ায় তাকে হত্যা করা হয় বলে আরায়ার দাবি। এরপর থেকে নেরুদার মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ক্ষমতা হারিয়ে ২০০৬ সালে পিনোশে মারা যাওয়ার পর নেরুদার মৃত্যুর তদন্তের দাবি জোরাল হয়ে ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সালে নেরুদার দেহাবশেষ তুলে তা পুনরায় পরীক্ষার আদেশ দেয় চিলির আদালত। নেরুদার মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে একযোগে কাজ করেছেন কানাডা, ডেনমার্ক, আমেরিকা, ¯েপন এবং চিলির ১৬ জন বিশেষজ্ঞের একটি দল।
×