বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করেছে। করোনার বিস্তার রোধে সরকার থেকে কঠোরভাবে সবাইকে ঘরে অবস্থানের (হোম কোয়ারেন্টাইন) জন্য বলা হয়েছে। জনগণের সুরক্ষার জন্যই এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। যা আমাদের জন্য কল্যাণকর। কিন্তু স্বভাবতই আমরা কেউই চব্বিশ ঘণ্টা ঘরে থেকে অভ্যস্ত নয়। সারাদিন ঘরে বসে থাকায় একদিকে যেমন অলসতা আঁকড়ে ধরছে অন্যদিকে ভয়ভীতির মধ্যে দিন পার করায় মানসিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়ছি। অনেক দিন পর এখন বিরক্তি কাজ করছে। ক্যাম্পাসের দিনগুলো খুব মনে পড়ছে। ক্লাস, প্রাকটিক্যাল, এ্যাসাইনমেন্ট, আড্ডা সব যেন হঠাৎ হারিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে মনের প্রাণোজ্জ্বলতা। কিন্তু আমাদের ভাবা উচিত ঘরে থেকে শুধু নিজেদের না, আশপাশে সবার উপকার করছি সংক্রমণরোধে। ঘরে বসে এই লম্বা ছুটি অনলাইন ডিজাইনিংয়ের কোর্স, ভাষা শিক্ষা কোর্সগুলো শিখে এই সময়টা কাজে লাগিয়ে নতুন দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করছি। এই সময়ে সবাইকে মনোবল শক্ত করে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে লড়তে হবে। কতদিন এমন চলবে আমরা কেউ জানি না। আমাদের একটু সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সাহায্য করবে এ ক্রান্তিকাল কাটিয়ে উঠতে।
মাহমুদুল হাসান শিমুল
কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ, তৃতীয় বর্ষ
করোনাভাইরাস আতঙ্কে ১৬ মার্চ থেকেই ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীরা। দেরি না করে ১৭ মার্চ চলে আসি বাসায়। সাধারণত ক্যাম্পাস ছুটি থাকলে বাসায় এসে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করি- আড্ডা দেয়, পরিবারের সঙ্গে আনন্দে সময় কাটায়। কিন্তু এবার ছুটিটা অনাকাক্সিক্ষত। দীর্ঘদিন ঘরে বন্দী থাকার জন্য এ ছুটি। এখন মন ছুটে যেতে চায় ক্যাম্পাসের আড্ডায়। কিন্তু উপায় নেই কষ্ট হলেও বন্দী থেকেই করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে হবে।
এমনকি পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও আনন্দের রেশ মাত্র নেই। আছে শুধু আতঙ্ক। গ্রামে এসে দেখি সবাই করোনা বিষয়ে তেমন সচেতন নয়। তাই গ্রামের অসহায় মানুষদের করোনার সার্বিক অবস্থার বিষয়ে জানানোর চেষ্টা করছি। নিজেদের পরিষ্কার রাখা, হাঁচি-কাশি থেকে বাঁচা, বাইরে মাস্ক পরে বের হওয়ার বিষয়ে তাদের সচেতন করছি।
সময় কাটাতে বিভিন্ন গল্প-উপন্যাসের বই পড়ছি। ইউটিউব থেকে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করছি। আশা করছি, এই অবস্থার দ্রুতই সমাপ্তি হয়ে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
ফারহানা জান্নাত উর্মি
পশুপালন অনুষদ, প্রথম বর্ষ
ক্লাস না হওয়ায় ১২ মার্চ বাসায় চলে আসি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর এই প্রথম আমার বাসায় ফেরা। তাই অনেক আনন্দ নিয়েই বাসায় ফিরি। ভেবে রেখেছিলাম অনেক মজা করব, মায়ের হাতের মজার মজার রান্না খাবো। পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে অনেক ভাল সময় কাটাব। কিন্তু বাসায় আসার পর থেকেই করোনা আতঙ্ক দেশে বেড়ে যায়। ১৭ তারিখ ক্যাম্পাসে ফেরার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ক্যাম্পাসে পা দেয়ার সুযোগ হচ্ছে না। করোনা সংক্রমণরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাস আমাদের জীবনকে এতটা দুর্বিষহ করে তুলেছে যে ঘরের বাইরে যাওয়ার আগে অনেক চিন্তা করে বের হতে হয়। ঘরে এখন আমার সঙ্গী মোবাইল ফোন, ফেসবুক।
ক্যাম্পাসে ফেলে আসা দিনগুলোর জন্য মনটা স্থিও থাকছে না। শুধু ফিরে যেতে চায় চায়ের আড্ডায়, সবুজ ক্যাম্পাসের কোনায় কোনায়, লাইব্রেরিতে বন্ধুদের সাথে পড়ায়। এদিকে সচেতনতামূলক পোস্টার বানানো, সবাইকে পার্সোনাল হাইজিন নিয়ন্ত্রণ করতে বলা, আশপাশের বয়স্কদের খেয়াল রাখে কিছু সচেনতামূলক কাজ করছি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: