ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক 

এফবিসিসিআই নির্বাচনে অসংগতির বিধান বাতিল চায় সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৯:৩৫, ১৭ জুন ২০২৫

এফবিসিসিআই নির্বাচনে অসংগতির বিধান বাতিল চায় সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ

ছবি: জনকণ্ঠ

আসন্ন এফবিসিসিআই নির্বাচন সামনে রেখে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার সকল অসংগতি বাতিল চেয়েছে সংগঠনটির নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নেতারা।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন সামনে রেখে সকল অসংগতি দূরীকরণ, ডিভিসি (DVC) বাতিল, চাঁদার হার কমানো, সহায়ক কমিটি বাতিল ও ১৯৯৪ সালের আইন বিলুপ্তির জন্য জোর দাবি জানায় সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ।

এ সময় উপস্থিত  ছিলেন সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের শীর্ষ নেতা ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ, নিজাম উদ্দিন রাজেশ। এছাড়া জোটের নেতা এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মো. সহিদুল হক মোল্লা, আমির হোসেন নূরানী, আবুল হাশেম, আবু সাদেক, মোহাম্মদ বখতিয়ার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এবসময় বৈঠক আরও অংশগ্রহণ করেন এফবিসিসিআই আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম খান। এ সময় বাণিজ্য  উপদেষ্টা   বিষয়টি দ্রুত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।


এদিকে, টানা দুইবার নির্বাহী কমিটি বা পর্ষদে থাকলে একবার বিরতি দিয়ে পুনরায় নির্বাচন করা যাবে। এই নিয়মটি ভবিষ্যতের পাশাপাশি বিগত সময়ের জন্যও প্রযোজ্য হবে। ফলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ সব বাণিজ্য সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের অনেকে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।


বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা-২০২৫ এ থাকা এই উপবিধি বাতিল চেয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনকে ইতোমধ্যে চিঠিও দিয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, একজন ভোটারের মৌলিক অধিকার হচ্ছে যেকোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। যেহেতু বাণিজ্য সংগঠনগুলো অলাভজনক, সেহেতু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপের মাধ্যমে বিরত রাখার বিধানটি মোটেই কাম্য নয়। শুধু তা–ই নয়, বিধিনিষেধ আরোপে অতীত সময়কাল থেকে কার্যকর করাটা আইনবহির্ভূত ও অধিকার ভঙ্গের শামিল।

এর আগে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের পক্ষে আহ্বায়ক মীর নিজাম উদ্দিন বাণিজ্য উপদেষ্টাকে এই বিধান বাতিল চেয়ে চিঠি দেন। এতে বাণিজ্য বিধিমালার ১৮ (৫) উপবিধি বাতিলের দাবি করা হয়। অর্থাৎ টানা দুইবার পর্ষদে থাকলে একবার বিরতি দিয়ে পুনরায় নির্বাচন করার বিধানটি ভবিষ্যতে কার্যকর চায় সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ। এ ছাড়া পণ্যভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন বা অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বারে ভর্তি ফি ও বার্ষিক চাঁদার পরিমাণ আগের মতো রাখার দাবি করেছে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ। তারা বলেছে, এত দিন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনে এককালীন ভর্তি ফি ছিল সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা। আর বার্ষিক চাঁদা ছিল ১ হাজার টাকা। নতুন বিধিমালায় সাধারণ সদস্যদের ভর্তি ফি ১৫ হাজার টাকা ও বার্ষিক চাঁদা ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত ফি ধার্য করায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। ভ্যাট, ট্যাক্স আর ব্যাংকঋণের সুদহার নিয়ে এমনিতেই সাধারণ ব্যবসায়ীরা সমস্যায় জর্জরিত। এমন প্রেক্ষাপটে ফি বাড়ানোর কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যাবে। এফবিসিসিআইয়ের বার্ষিক চাঁদা কমানোর দাবিও করেছে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ।

নতুন বিধিমালায় ক শ্রেণির অ্যাসোসিয়েশনের জন্য বার্ষিক চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। আর ক শ্রেণির চেম্বারের বার্ষিক চাঁদা ১ লাখ টাকা। ১৯৯৪ সালের বিধিমালায় এই ফি ছিল অ্যাসোসিয়েশনের জন্য ২৫ হাজার ও চেম্বারের জন্য ৩০ হাজার। দুই বছর আগে এফবিসিসিআইয়ের বার্ষিক চাঁদার হার অ্যাসোসিয়েশনের জন্য ৩৫ হাজার আর চেম্বারের জন্য ৪৫ হাজার করা হয়েছিল। নতুন বিধিমালায় চাঁদার হার যে হারে বাড়ানো হয়েছে তাতে ছোট অ্যাসোসিয়েশন ও মফস্বল চেম্বারের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন বিধিমালায় এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদের প্রত্যেক সদস্যের নিবন্ধন ফি ধার্য করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। আগে এই নিবন্ধন ফি ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা। এই ফি না বাড়ানোর অনুরোধ করেছে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ।

 
এ ছাড়া এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান প্রশাসকের সহায়ক কমিটি ভেঙে দেওয়ার দাবি করেছে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ। তারা বলেছে, সহায়ক কমিটির সঙ্গে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের প্রার্থীদের সরাসরি যোগসাজশ রয়েছে। 

শিহাব

×