ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

তালিকাভুক্তির পর বিক্রয় কমেছে মোজাফফর হোসেন স্পিনিংয়ের

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ১০ মার্চ ২০১৯

 তালিকাভুক্তির পর বিক্রয় কমেছে মোজাফফর হোসেন স্পিনিংয়ের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পরে বিক্রয় বাড়ার পরিবর্তে মোজাফফর হোসাইন স্পিনিং মিলসের কমে এসেছে। যার ওপর ভিত্তি করে কোম্পানিটি এখন লোকসানে। এছাড়া ধারাবাহিক লভ্যাংশ পতনে কোম্পানিটি এখন ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নেমে এসেছে। মুনাফা বাড়ানোর লক্ষ্যে মোজাফ্ফর হোসাইন ২০১৪ সালে শেয়ারবাজার থেকে ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ার ইস্যু করে ১০ টাকায়। ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথমার্ধের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ০.৭৩ টাকা ও ১৯.৫৬ টাকা শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দেখিয়ে এই দরে শেয়ার ইস্যু করা হয়। যা উত্তোলনে ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করে আলফা ক্যাপিটাল ম্যানেজম্যান্ট। এছাড়া সহযোগী ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করে এএফসি ক্যাপিটাল। কোম্পানিটি ২৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ ও আইপিওতে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ের কথা বলে শেয়ারবাজার থেকে ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে। তবে তালিকাভুক্তির ৫ বছরে কোম্পানিটির ঋণ কমেছে ১৩ কোটি টাকা। যাতে কোম্পানির সুদজনিত ব্যয় কমেছে। তারপরেও কোম্পানিটি এখন লোকসানে। দেখা গেছে, আইপিও পূর্ব ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর মোজাফফর হোসাইন মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৫১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। যা ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর কমে এসেছে ৩৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে কোম্পানিটির ঋণের পরিমাণ কমেছে ১২ কোটি ৯৭ লাখ। আইপিও পূর্ব ২০১২ সালের ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির ৩৯ কোটি টাকার পণ্য বিক্রয় হয়। তবে সর্বশেষ ২০১৮ সালের একই সময়ে বিক্রয় নেমে এসেছে ১৭ কোটি ৮০ লাখ টাকায়। এক্ষেত্রে ৫ বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রয় কমেছে ২১ কোটি ২০ লাখ টাকার বা ৫৪ শতাংশ। এদিকে আইপিও পূর্ব কোম্পানিটির বিক্রয় থেকে সব ব্যয় শেষে ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.৭৩ টাকা মুনাফা হয়। আর ২০১৮ সালের একই সময়ে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.২৭ টাকা। অথচ আইপিও পূর্বের ৬৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার নিট সম্পদ বেড়ে এখন ১৬১ কোটি ১২ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মুনাফা না বাড়লেও নিয়মিত বোনাস শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন দ্বিগুণ করা হয়েছে। যা ইপিএসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কোম্পানিটির আইপিও পূর্ব ৩৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন এখন ৯৯ কোটি ১ লাখ টাকায় উন্নিত হয়েছে। যা আইপিও’র অর্থের মধ্যে ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও ২০১৪ সালে ২৫ শতাংশ, ২০১৫ সালে ১৫ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৫ শতাংশ ও ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার প্রদানের মাধ্যমে এই মূলধন বাড়ানো হয়েছে। ভাল ব্যবসা দেখিয়ে মোজাফ্ফর হোসাইন শেয়ার ইস্যু করলেও তার কোন সুফল পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা। প্রতিটি শেয়ারে ১০ টাকা বিনিয়োগ করা কোম্পানি থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রাপ্তি ৫ শতাংশ। আর শেয়ার দর ১৪.৬০ টাকায় নেমে এসেছে। বোনাস শেয়ার প্রদানের কারণ নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরার বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষা করছে মোজাফ্ফর হোসাইন স্পিনিং। বিএসইসির ‘ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং ও ডিসক্লোজারস’ শীর্ষক এক নির্দেশনায়, বার্ষিক প্রতিবেদনে বোনাস শেয়ার প্রদানের কারণ উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া উক্ত বোনাস শেয়ার প্রদানের মাধ্যমে রেখে দেয়া মুনাফা কি কাজে ব্যবহার করা হবে, তা উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। এসব বিষয়ে মোজাফ্ফর হোসাইন স্পিনিংয়ের সচিব হারিস আলম বলেন, বর্তমানে কোম্পানির ৫০ শতাংশ মেশিন বন্ধ রয়েছে। যে কারণে বিক্রয় কমে গেছে। এতে কোম্পানির লোকসান হয়েছে। তবে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ১৬৬ কোটি টাকা দিয়ে ৩৬ হাজার স্প্যান্ডেল বিশিষ্ট রিং স্পিনিং মিলস নামের নতুন ইউনিট চালু করার কাজ চলছে। যার কনস্ট্রাকশন কাজ কিছুদিন আগে শেষ হয়েছে এবং সকল প্রকার মেশিনারি ও আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এই নতুন ইউনিটটি এপ্রিলের শুরুতে উৎপাদনে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সেক্ষেত্রে উৎপাদন আগের তুলনায় দ্বিগুণ হবে।
×