ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আগস্ট শেষে প্রবৃদ্ধি নেমেছে ১৪ দশমিক ৯৫ শতাংশে

তলানিতে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

তলানিতে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও কমে ৩১ মাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। গত আগস্ট শেষে প্রবৃদ্ধি নেমেছে ১৪ দশমিক ৯৫ শতাংশে। আগের মাস জুলাইতে যা ছিল ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এর আগে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশে ছিল। এরপর আর কখনও ১৫ শতাংশের নিচে নামতে দেখা যায়নি। মূলত নির্বাচনের বছরে ব্যাংকগুলোর ঋণে লাগাম টানতে গত জানুয়ারিতে ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানো এবং সুদ হার কমানোর সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংক খাতে তারল্যের টানাটানি তৈরি হয়েছে। এতে করে কমছে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত আগস্ট শেষে বেসরকারী খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৯৫ শতাংশে। আগের মাস জুলাইয়ে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আগস্টে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তা ৩১ মাসে হয়নি। এর আগে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশে ছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত জানুয়ারিতে ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানো এবং সুদ হার কমানোর সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংক খাতে তারল্যের (নগদ টাকা) সঙ্কট হয়েছে। তারা বলছেন, আমদানি বৃদ্ধিসহ কিছু কারণে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে ঋণ চাহিদা ব্যাপক বাড়তে থাকে। ফলে তারল্যের ওপরও চাপ পড়ে। এক অঙ্কের নিচে নেমে আসা ঋণের সুদহার বেড়ে দুই অঙ্ক হয়ে যায়। অনেক ব্যাংক ১০ শতাংশের বেশি সুদে আমানত নিতেও শুরু করে। এর মধ্যে গত ৩০ জানুয়ারি ব্যাংক খাতের এডিআর কমিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি চলতি বছরের ২০ জুন সুদহার কমানোর বিষয়ে এক বৈঠক করে। সে খাতে তারা ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ এবং ৬ শতাংশ সুদে আমানত নেয়ার ঘোষণা দেন। এরপর থেকে আশানুরূপ হারে আমানত পাচ্ছে না অধিকাংশ ব্যাংক। কারণ, ব্যাংকের আমানতের চেয়ে বেশি সুদ পাওয়া যাচ্ছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। ফলে মানুষ ব্যাংকের রাখা আমানত তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে। অবশ্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সমঝোতায় সরকারী অর্থ যাতে বেসরকারী ব্যাংকগুলো পায় সে জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সে অনুযায়ী নগদ অর্থও পেয়েছে ব্যাংকগুলো। বর্তমানে যেসব ব্যাংকের এডিআর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ওপরে রয়েছে, নানা উপায়ে তারা তা সমন্বয়ের চেষ্টার ফলে নতুন করে ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। এডিআর যেন বেড়ে না যায় এ জন্য লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকা ব্যাংকগুলোও সতর্কতার সঙ্গে ঋণ বিতরণ করছে। সব মিলিয়ে ব্যাপক চাপে পড়ে ব্যাংকগুলো আগের মতো আর ঋণ বাড়াতে পারছে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানি বৃদ্ধিসহ কিছু কারণে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে ঋণ চাহিদা ব্যাপক বাড়তে থাকায় তারল্যের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়। এক অঙ্কের নিচে নেমে আসা ঋণের সুদহার বেড়ে দুই অঙ্কে উঠে যায়। অনেক ব্যাংক ১০ শতাংশের বেশি সুদে আমানত নিতে শুরু করে। এর মধ্যে গত ৩০ জানুয়ারি ব্যাংক খাতের এডিআর কমিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে আবার ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি গত ২০ জুন এক বৈঠক থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ এবং ৬ শতাংশ সুদে আমানত নেয়ার ঘোষণা দেয়। এরপর থেকে আশানুরূপ হারে আমানত পাচ্ছে না অধিকাংশ ব্যাংক। বর্তমানে যেসব ব্যাংকের এডিআর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ওপরে রয়েছে, নানা উপায়ে তারা তা সমন্বয়ের চেষ্টার ফলে নতুন করে ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। এডিআর যেন বেড়ে না যায় এজন্য লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকা ব্যাংকগুলোও সতর্কতার সঙ্গে ঋণ বিতরণ করছে। সব মিলিয়ে ব্যাপক চাপে পড়ে ব্যাংকগুলো আগের মতো আর ঋণ বাড়াতে পারছে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কাঙ্খিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বাজারে মুদ্রা ও ঋণ সরবরাহ সম্পর্কে একটি আগাম ধারণা দিতে প্রতি ৬ মাসের মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এডিআর কমানো ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে সুদহার নির্দিষ্ট করে দেয়ার কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। সুদহার বেঁধে দেয়ায় আমানতের সুদহারও কমে গিয়েছে। ফলে ব্যাংকিং খাতের আমানত না থাকায় তারা বিনিয়োগ করতে পারেনি। তিনি বলেন, বেসরকারী খাত জিডিপি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে গেলে তাতে জিডিপি’র লক্ষমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা বাড়তে থাকে। এতে কর্মসংস্থানও কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন। বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলো বলছে, এখন ব্যাংকের আমানত অনেক কমে গেছে। অন্যদিকে নির্বাচনের বছরে উদ্যোক্তারাও যেমন ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় আনে তেমনই ব্যাংকগুলোও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। প্রসঙ্গত, বাজেটে ঘোষিত সরকারের রাজস্ব নীতির সমর্থন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কাক্সিক্ষত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ছয় মাস অন্তর আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করে থাকে। যাতে মুদ্রা ও ঋণ সরবরাহ সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়া হয়। চলতি অর্থ বছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ বেসরকারী খাতে ঋণ ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
×