ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

পান্থ আফজাল

উৎসবের অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

উৎসবের অর্থনীতি

উৎসবের অর্থনীতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।বিভিন্ন উৎসব ঘিরে নানা ধরনের ব্যবসায়িক কর্মকা- অর্থনৈতিক গতি প্রবাহ বাড়িয়ে তোলে। ভগ্ন অর্থনীতিকে করে চাঙ্গা।এই অর্থনৈতিক অবস্থা বাংলাদেশর ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। এ দেশে প্রায় সাড়ে তিন কোটির মতো লোক ছোট কিংবা বড় ব্যবসায়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে এদের ব্যবসায় হয়ে ওঠে রমরমা। বিশেষ করে ঈদকে কেন্দ্র করে। দিনকে দিন মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, বাড়ছে ক্রয়ক্ষমতা। ফলে ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ের আকার বাড়ছে, দেশের অর্থনীতিতেও যোগ হচ্ছে বেশি পরিমাণ অর্থ। এ বছর এই কোরবানির ঈদে দেশের অর্থনীতিতে কোটি কোটি টাকা যোগ হবে বলে প্রত্যাশা করছে ব্যবসায়ীরা।এরকম ঘটলে তা সত্যিই বিরাট ব্যাপার হবে। ঘুরে দাঁড়াবে দেশের অর্থনীতি। ঈদ-উল-আযহায় মূলত জমে ওঠে পশুরহাট। পশু কোরবানির মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায় এই উৎসব ব্যাপকভাবে পালন করে থাকে। সারা বছর গরুর মাংসের চাহিদা থাকলেও কোরবানির ঈদে বেড়ে যায় গরুর চাহিদা। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে- শুধু কোরবানির ঈদকে উপলক্ষ করে কোরবানির পশু, পশুর চামড়াসহ অন্য খাতে ৬০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও মাংস ব্যবসায়ীদের হিসাবে, দেশে বছরে ১ কোটি ৪০ লাখের মতো গরু ও মহিষ জবাই হয়। এর ৬০ শতাংশই হয় কোরবানির ঈদে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বর্তমানে দেশে গবাদিপশুর সংখ্যা চার কোটি ৯০ লাখ। এর মধ্যে গরু ও মহিষ দুই কোটি ৩৫ লাখ এবং ছাগল ও ভেড়া দুই কোটি ৫৫ লাখ। এ বছর কোরবানির উপযোগী এক কোটি ৫ লাখ পশু রয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ লাখ গরু ও মহিষ এবং ৭২ লাখ ছাগল ও ভেড়া। ঈদ-উল-আযহায় কি পরিমাণ পশু কোরবানি হয় তার সুনির্দিষ্ট হিস্যা না থাকলেও বাণিজ্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যমতে, প্রতিবছর দেশে ৪০ লাখ গরুসহ প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ পশু কোরবানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৩৬ লাখ গরু কোরবানি হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর কোরবানির গরুর চাহিদা তৈরি হয় কম-বেশি ৪০ লাখের মতো। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে এখন গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৮৬ লাখ। এর মধ্যে ১ কোটি ৭৫ লাখ গাভী। অভ্যন্তরীণ চাহিদার শতকরা প্রায় ৯০ শতাংশ নিজস্ব উৎপাদন থেকে আসছে। তবে কোরবানির সময় মোট চাহিদার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ঘাটতি থাকে। যুগ যুগ ধরে ভারতীয় গরুতে তা পূরণ হয়ে আসছে। ঈদ মানেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যবসায়ীদের রমরমা অবস্থা। এ সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছে পণ্যের দাম। টিসিবি থেকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ঈদকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি প্রসারিত হয় পোশাকের বাজার। সব শ্রেণীর মানুষই তার সার্মথ্য অনুযায়ী নতুন পোশাক পরতে চায় ঈদের দিন। ফুটপাথের দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় শপিংমলÑ সর্বত্রই চলে নতুন পোশাকের বিকিকিনি। কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জে চলে বেচা-কেনার ধুম। দেশের স্থানীয় চাহিদার প্রায় ষাট ভাগ এখান থেকে পাইকারি বাজারে সরবরাহ করা হয়। ইসলামপুর, বঙ্গবাজারসহ সারাদেশের পাইকাররা এখান থেকে ট্রাকে ট্রাকে পোশাক কিনে নিয়ে যায়। সারাদেশ থেকে বিভিন্ন শোরুমের খুচরা ব্যবসায়ীরা এ পাইকারি মার্কেটগুলো থেকে পোশাক কিনে সাজাচ্ছেন নিজেদের শোরুম ও দোকানগুলো। নতুন কোন কোন আইটেম বাজারে এসেছে, সেদিকেই মূলত সবার নজর বেশি। ঈদ উপলক্ষে টুপি, তসবিহ, আতর ও ধর্মীয় গ্রন্থের ব্যবসায়-বাণিজ্য বেশ জমে ওঠে। মসজিদের পাশে টেবিল কিংবা দোকান দিয়ে বসেন অনেকে। বেশ বেচা-বিক্রি চলে এগুলোর। ঈদ উপলক্ষে জমে ওঠে অলঙ্কার, কসমেটিক্সের ব্যবসাও। ঈদের দিনে নারীদের সাজগোজের অনুষঙ্গ হিসেবে অলঙ্কার ও কসমেটিক্সের ব্যবসায় রমরমা হয়ে থাকে। ঈদ উপলক্ষে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে যে জোয়ার সৃষ্টি হয়, তার ঢেউ লাগে ব্যাংকিং সেক্টরেও। এ সময়টাতে ব্যাংক লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ফলে অনেক সময় ছুটির দিনেও ব্যাংক খোলা রাখতে হয়। এ সময়টাতে দেশে রেমিটেন্সের পরিমাণও অন্যান্য মাস থেকে বেড়ে যায় কয়েকগুণ। প্রবাসীরা ঈদ উপলক্ষে বেশি করে টাকা পাঠানোয় বেড়ে যায় রেমিটেন্সের পরিমাণ। ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সেবা খাতেও এই মাসে বেশ রমরমা অবস্থা দেখা যায়। বিশেষ করে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের সংশ্লিষ্টদের আয় বেড়ে যায়। আয় বৃদ্ধি পায় শ্রমিকদেরও। সবারই আয় এ মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেড়ে যায়।
×