ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম কাস্টমসের এক-পঞ্চমাংশ রাজস্ব আয় ৩৫ প্রতিষ্ঠান থেকে

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১৮ আগস্ট ২০১৬

চট্টগ্রাম কাস্টমসের এক-পঞ্চমাংশ রাজস্ব আয় ৩৫ প্রতিষ্ঠান থেকে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আয়ের এক-পঞ্চমাংশই এসেছে ৩৫টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। অর্জিত ৩১ হাজার ৩শ’ কোটি টাকা রাজস্বের মধ্যে ৬ হাজার ২৯১ কোটি টাকা রাজস্ব পরিশোধ করেছে এই প্রতিষ্ঠানসমূহ। কাস্টম হাউসের প্রস্তুত করা পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা যায়। চট্টগ্রাম কাস্টম সূত্রে জানা যায়, সমাপ্ত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শুল্ক ভবন রাজস্ব আয় করেছে ৩১ হাজার ৩শ’ কোটি টাকা, যা এনবিআর নির্ধারিত সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার কোটি টাকা বেশি। আমদানির বিনিময়ে দেশের মোট ৬ হাজার ৯৭১টি প্রতিষ্ঠান এ রাজস্ব পরিশোধ করে। সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আসে ফার্নেস অয়েল, মোটর কার, পিস্টন ইঞ্জিন, রেলওয়ের ব্যবহৃত লোহা ও ইস্পাত, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত ভোজ্য তেল ও রিফ্রিজারেটর আমদানির বিপরীতে। তবে উল্লেখযোগ্য হলো, মোট রাজস্বে ২০ শতাংশই আসে ৩৫টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। শুল্ক ভবন সূত্রে জানা যায়, বরাবরের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি রাজস্ব পাওয়া যায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) আওতাধীন পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, যমুনা অয়েল ও ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে। সে হিসাবে বিপিসি একক বৃহত্তম রাজস্ব পরিশোধকারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ব্যক্তি মালিকানার প্রতিষ্ঠান ৬ সহস্রাধিক হলেও ৩৫টি প্রতিষ্ঠান যোগান দেয় পাঁচ ভাগের একভাগ রাজস্ব। প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিগত অর্থ বছরে ৩৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আবুল খায়ের গ্রুপ সবচেয়ে বেশি রাজস্ব পরিশোধ করে। আমদানির বিপরীতে এ প্রতিষ্ঠান থেকে রাজস্ব আদায় হয় ৭১৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব যোগানদাতা প্রতিষ্ঠান উত্তরা মোটর্সের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় হয় প্রায় ৪৯৫ কোটি টাকা, তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৫৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা রাজস্ব পরিশোধ করেছে বেসরকারী মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। শীর্ষ দশের বাকি সাত প্রতিষ্ঠান হলো- মেনুকা মোটরস লিমিটেড ২৯৯ কোটি ৭৮ কোটি টাকা, মেঘনা গ্রুপের ইউনাইটেড এডিবল অয়েল ২৬০ কোটি ২৭ লাখ টাকা ও তানভীর অয়েল লিমিটেড ২৭০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, সিটি গ্রুপের ফারজানা অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড ১৪৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ও ভট অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড ১০৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, কেএসআরএম ২২৬ কোটি ২ লাখ টাকা ও রবি অজিয়াটা লিমিটেড ২২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এছাড়া বাংলা লিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন ২১৯ কোটি ৭ লাখ টাকা, টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেড ২১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, টিকে গ্রুপের শবনব ভেজিটেবল অয়েল ২১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড ১৮৮ কোটি ১২ লাখ টাকা, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ১৮৪ কোটি ২২ লাখ টাকা, সিঙ্গার বাংলাদেশ ১৭৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, আরএফএল প্লাস্টিক ১৬২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, এমআই সিমেন্ট ১৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা, প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস ১৩৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, বিএসআরএম ১২১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল ১২০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, ওয়ালটন ১১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেড ১১৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা, সেভেন রিং বাংলাদেশ সিমেন্ট কোম্পানি ১০৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা, নাভানা ৮৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, আকিজ সিমেন্ট ৭৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, এইচএন্ডএস অটো মোবাইলস ৭৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং পিএইচপি গ্রুপ ৬৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব পরিশোধ করেছে। প্রসঙ্গত, দেশের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে। প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম হয়ে সিংহভাগ আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে বিধায় এ শুল্ক ভবনের আয় সবচেয়ে বেশি। দেশের প্রধান আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও শিল্প গ্রুপের পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়, যার শুল্কায়ন হয় চট্টগ্রাম কাস্টমসে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি। বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর শিল্প কারখানা সম্প্রসারণ, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের নতুন নতুন কারখানা গড়ার ফলে দেশের সমৃদ্ধি যেমন উন্নীত হচ্ছে তেমনিভাবে আমদানির বিপরীতে রাজস্ব আয়ও বাড়ছে। এতে করে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে প্রায় প্রতিবছরই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ভেঙ্গে চলেছে নিজেরই রেকর্ড।
×