ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রশংসা

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ২৬ জুন ২০২২

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহু আশা-আকাক্সক্ষার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হলো। শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে স্বপ্নের সেতুটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু উদ্বোধনের পর দেশী গণমাধ্যমের পাশাপাশি বিদেশী গণমাধ্যমগুলোতেও উচ্ছ্বাস প্রকাশিত হয়েছে। এটি নিয়ে বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যমগুলো বহুদিন আগে থেকেই ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছিল। এখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও গুরুত্বসহ প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক হয়ে ওঠা পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবর। শনিবার কলকাতার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা শীর্ষ শিরোনাম করেছে ‘পদ্মা সেতু: জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়! পদ্মা সেতু উদ্বোধনে হাসিনার কণ্ঠে সুকান্ত’। এমনকি তাদের ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করেছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। পত্রিকাটি বলছে, পদ্মা সেতুর ফলে যাতায়াতের অনেকটা সুবিধা হবে। কলকাতা থেকে বাসে ঢাকায় আসতে হলে কিছু দিন আগে পর্যন্ত পদ্মা পার হতে স্টিমারের প্রয়োজন হতো। পদ্মা সেতু চালু হলে সড়কপথেই সরাসরি ঢাকায় পৌঁছা যাবে। কলকাতা থেকে ঢাকার দূরত্ব অন্তত ৫০ শতাংশ কমে যাবে। আগে কলকাতা থেকে ঢাকা, ৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগত ১০ ঘণ্টা। এখন তা মোটামুটি চার ঘণ্টায় হয়ে যাবে। আর রেলপথে পৌঁছতে সময় লাগবে মোটামুটি সাড়ে ছয় ঘণ্টা। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই শেখ হাসিনা ভারত সফরে যেতে পারেন এই পদ্মা সেতু দিয়েই। শুধু যে কলকাতা-ঢাকার দূরত্ব কমাবে তাই নয়, পদ্মা সেতুর ফলে বঙ্গোপসাগর তীরের মোংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব এক শ’ কিলোমিটার কমে যাবে। সংশ্লিষ্ট বন্দর দু’টিকে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ফলে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে ভারতের মূল ভূখ-ের যোগাযোগ সুগম হবে। দুই দেশই আশা করছে, শেখ হাসিনার সফরের আগেই ভারত-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির খুঁটিনাটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে। পদ্মা সেতু দু’দেশের বাণিজ্যেও নতুন সেতুবন্ধন তৈরি করবে। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে সেতু উদ্বোধনকালে হাসিনা বলেছেন, কারও বিরুদ্ধে আমার কোন অনুযোগ নেই। আমরা নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা দেশবাসীকে নিয়ে সব সমস্যা মোকাবেলা করে যাচ্ছি। হাসিনা এর পর সুকান্তের কবিতা থেকে দুটি লাইন শোনান, জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়। আমরা মাথা নোয়াইনি, আমরা মাথা নোয়াব না। জাতির পিতা আমাদের মাথা নোয়াতে শেখাননি। বিবিসি অনলাইন ॥ বিবিসি বাংলার অনলাইন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দুই যুগ আগে যে সেতুর পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল, সেই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ জেলা রাজধানী ঢাকা এবং বাকি অংশের সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত হয়ে গেল। বেলা পৌনে বারোটার দিকে সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্রদান করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বারোটার দিকে মাওয়া প্রান্তে একটি উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন তিনি। গাড়িযোগে সেতু পার হয়ে জাজিরা প্রান্তে আরেকটি উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন তিনি। উদ্বোধনের আগে মাওয়া প্রান্তে এক সুধী সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, শত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও এই সেতু নির্মাণের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে আজ বহু কাক্সিক্ষত সেতু দাঁড়িয়ে আছে। এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহার কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয় এ সেতু আমাদের অহঙ্কার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা আর জেদ। শেখ হাসিনা বলেন, সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক ও রেলপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এর ফলে এ অঞ্চলের মানুষের একদিকে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির লাঘব হবে, অন্যদিকে অর্থনীতি হবে বেগবান। আশা করা হচ্ছে এ সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে এক দশমিক দুই-তিন শতাংশ হারে অবদান রাখবে এবং প্রতিবছর দশমিক আট-চার শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচন হবে। হিন্দুস্তান টাইমস ॥ ভারতের আরেক সংবাদ মাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের বাংলা সংস্করণও লাইভ আপডেট দিয়েছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের। স্মারক নোট প্রকাশ থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর টোল পরিশোধের খবর ধারাবাহিকভাবে উঠে এসেছে তাদের প্রতিবেদনে। সংবাদ প্রতিদিন লিখেছে, শত বাধা পেরিয়ে তৈরি স্বপ্নের পদ্মা সেতু, বাংলাদেশকে অভিনন্দন আমেরিকা ও চীনের’। ইটিভি ভারতের শিরোনামে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পদ্মা সেতু: ঢাকা-কলকাতা আরও কাছাকাছি, বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনে শেখ হাসিনা। এই সময় ॥ প্রতিবেদনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নপূরণের কথা উল্লেখ করেছে ভারতের টাইমস গ্রুপের বাংলা সংবাদ মাধ্যম এই সময়। তাদের শিরোনাম, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণ, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করলেন শেখ হাসিনা’। সেতুটি নির্মাণে কত খরচ হয়েছে তা নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদন করেছে তারা। কলকাতার জাতীয় দৈনিক আজকালের শিরোনাম, বাংলাদেশ আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বুকে : শেখ হাসিনা। এএনআই ॥ বার্তা সংস্থা এএনআই লিখেছে, বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের স্বপ্ন সত্য হলো : পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’। দ্য ইকোনমিক টাইমস এবং টাইমস অব ইন্ডিয়াও একই খবর প্রকাশ করেছে। দ্য হিন্দু পত্রিকা শিরোনাম করেছে, বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু খুললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের শিরোনাম, পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বললেন স্বপ্ন সত্য হয়েছে। বার্তা সংস্থা এ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের খবরের শিরোনাম, বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতুর উদ্বোধন হয়েছে। তাদের এই খবর প্রকাশ করেছে এবিসি নিউজ, টরেন্টো স্টারের মতো বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। সিঙ্গাপুরভিত্তিক দৈনিক দ্য স্ট্রেইট টাইমস শুক্রবার পদ্মা সেতু নিয়ে বিশদ এক প্রতিবেদন করেছে। তাদের শিরোনাম, বিদেশী ঋণের ফাঁদ, আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়িয়েছে বাংলাদেশের নতুন সেতু।
×