ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতে জবানবন্দী

ঋণ থেকে রক্ষা পেতে জুয়াড়ি গিয়াস স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২৪ মে ২০২২

ঋণ থেকে রক্ষা পেতে জুয়াড়ি গিয়াস স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী ॥ প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ও ঋণের বোঝা থেকে বাঁচতে নরসিংদীর বেলাবতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে। আদালতে সোপর্দের পর হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে এ তথ্য দিয়েছে গ্রেফতারকৃত গিয়াস উদ্দিন শেখ। সোমবার বিকেলে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের বিচারক রাকিবুল হকের আদালতে এ জবানবন্দী প্রদান করেন। জবানবন্দীকে হত্যার নেপথ্যের কারণসহ নানা দিক উল্লেখ করা হয়। জবানবন্দী শেষে গিয়াস উদ্দিন শেখকে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আদালত সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর বেলাবতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার ঘটনায় নিহত রাহিমার ভাই মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা ৮-১০ জনকে আসামি করে বেলাব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত নিহত রাহিমা বেগমের স্বামী গিয়াস উদ্দিন শেখ পিবিআইর কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেন। পরে সোমবার বিকালে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। ওই সময় হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেন। জবানবন্দীতে উল্লেখ করা হয়, নিহত রাহিমা বেগমের স্বামী গিয়াস উদ্দিন শেখ পেশায় রং মিস্ত্রি। একই সঙ্গে মাদকাসক্ত ও জুয়ারি। জুয়ার টাকা জোগাড় করতে নিহত রাহিমা বেগমের নামে বিভিন্ন এনজিও থেকে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা, শ^শুর-শ্যালক ও শ্যালকের (বিয়াই) কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ও সুদে আরও দুই লাখ টাকাসহ সাড়ে ৯ লাখ টাকা ঋণ নেয়। এসব ঋণ নিহত রাহিমা বেগমের নামে আনা হয়। সুদে আসলে ঋণের টাকা ১২ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এই টাকা পরিশোধের জন্য নিহতের স্বামী গিয়াস উদ্দিনের ওপর চাপ ছিল। সর্বশেষ জুয়া খেলার মতো কোন টাকা তার হাতে ছিল না। তাই বাড়ির আঙ্গিনা থেকে কয়েকটি গাছ বিক্রি করেন। তা নেয়ার সময় প্রতিবেশী চাচাতো ভাই রেণু মিয়ার সঙ্গে ঝগড়া হয়। এরই মধ্যে সে জানতে পারে ঋণ গ্রহীতা ব্যক্তি মারা গেলে ঋণের টাকা মওকুফ হয়ে যায়। এই চিন্তা চেতনা থেকে গিয়াস স্ত্রী রহিমা বেগমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত গিয়াস রাতে বাড়ি ফিরে সন্তানদের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ে। পরে রাত আড়াইটার দিয়ে স্ত্রীকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে ও গরু জবাইয়ের ছুড়ি দিয়ে ছুড়িকাঘাত করে হত্যা করে। স্ত্রীকে হত্যার পর সন্তানরা সবাইকে বলে দিবে, এই ভয়ে গিয়াস সন্তানদেরও হত্যা করে। হত্যার পর পুলিশ ও মানুষের চোখ ফাঁকি দিতে রাতেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। পরে সকালে তাকে ফোন দিয়ে বাড়িতে ডেকে আনে। উল্লেখ্য, রবিবার রাতে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার পাটুলি ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের শেখবাড়ি প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ও ঋণের বোঝা থেকে বাঁচতে স্ত্রী রহিমা বেগম (৩৫), তার ছেলে সন্তান রাব্বি (১৩) ও মেয়ে রাকিবা আক্তারকে (৬) হত্যা করে।
×