ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ মোঃ আতিয়ার রহমান

মলদ্বারে বিভিন্ন রোগ যখন চিন্তার কারণ

প্রকাশিত: ০০:১০, ১৭ মে ২০২২

মলদ্বারে বিভিন্ন রোগ যখন চিন্তার কারণ

সাধারণত পায়ুপথের সব রোগকেই বেশির ভাগ মানুষ পাইলস বলে জানে। পায়ুপথের রোগ মানেই কিন্তু পাইলস নয়। পায়ুপথে সাধারণত যেসব রোগ হয় : পায়ুপথে ফিসার, ফিস্টুলা, হেমোরয়েড, ফোড়া, প্রোলাপস, রক্ত জমাট, পলিপ বা টিউমার ইত্যাদি রোগ হতে পারে। সবটা সমস্যার সৃষ্টি এবং এর অন্যতম প্রধান কারণ কোষ্ঠকাঠিন্যেই। তাই এ থেকে আমাদের আগে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে এ থেকে কখনও কখনও ক্যান্সার বা বড় সমস্যাদিও দেখা দিতে পারে। তাই যথা সময়ে এর চিকিৎসা ও সতর্কতা কিন্তু জরুরী। পায়ুপথের রোগগুলোর মধ্যে যেমন:- ফিসার : কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পায়ুপথের সামনে অথবা পেছনে ফেটে গিয়ে ক্ষত তৈরি হলে তাকে ফিসার বলে। বাংলায় বলে ভগন্দর। এই সমস্যায় তীব্র বা মাঝারি ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হয়। মলত্যাগের সময় সামান্য রক্ত যায়। পায়ুপথ সরু হয়ে আসে। অনেকদিন ধরে যারা ভুগছেন, তাদের অস্ত্রোপচারের দরকার হয়। প্রাথমিক অবস্থায় খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, জিটিএন মলম ব্যবহার, পভিসেপ লোশন মেশানো কুসুম গরম পানিতে ছেঁক দিলে ভাল থাকা যায়। পাইলস: চিকিৎসকরা একে বলেন হেমোরয়েড। বাংলায় অর্শ পাইলস ক্রমান্বয়ে আকারে বৃদ্ধি পেয়ে নিচে নেমে আসে। পায়ুপথকে ঘড়ির সঙ্গে তুলনা করলে ৩টা, ৭টা ও ১১টা কাঁটার জায়গায় তিনটি রক্তের শিরা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে চাপ খেয়ে ফুলে ক্রমশ নিচের দিকে নামতে থাকে। এর পাঁচটি পর্যায় আছে। পাইলস ব্যথাহীন হলেও প্রচুর রক্তপাত হতে পারে। প্রথম পর্যায়ের পাইলসে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, মল নরম করার ওষুধ এবং কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ দিয়ে সারানো সম্ভব। দ্বিতীয় পর্যায়ের পাইলসে ব্যান্ড লাইগেশন খুবই কার্যকরী অস্ত্রোপচার। তৃতীয় ও চতুর্থ মাত্রার পাইলসে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাইলসগুলো কেটে ফেলা হয়। তাহলেই ভাল থাকবে। ফোড়া বা এবসেস : পায়ুপথের ভেতরে ও বাইরে ছোট-বড় নানা ধরনের ফোড়া হতে পারে। ডায়াবেটিস এর অন্যতম কারণ। অস্ত্রোপচার না করলে এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরে ফিস্টুলা হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। ফিস্টুলা: ফিস্টুলা হলো একটি ঘা, যার একটি মুখ পায়ুপথের বাইরে, অপরটি ভেতরে থাকে। ফোড়া হওয়ার কারণে এটি হয়। এরও চিকিৎসা অস্ত্রোপচার। তবে নালির ভেতরের মুখ যদি খুব ওপরে হয় বা আঁকাবাঁকা হয়, তবে অস্ত্রোপচার ব্যর্থ হতে পারে। কাজেই অস্ত্রোপচারের আগে ফিস্টুলোগ্রাম, এমআরআই করে নেয়া ভাল। প্রোলাপস: পায়ুপথ দিয়ে অনেক সময় বৃহদন্ত্রের কোন অংশ আংশিক বা পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারে। একে প্রোলাপস বলে। ল্যাপারোসকপি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা যায়। হেমাটোমা: এটিও কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পায়ুপথের রক্তনালি ফেটে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। কখনও কখনও প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেলে অস্ত্রোপচার করা লাগতে পারে। সচেতনতা ও প্রতিরোধ : মোট কথা কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সে ব্যবস্থা ও সতর্কতা উচিত শুরু থেকেই এবং বেশি শক্তি প্রয়োগ করে মলত্যাগ করা উচিত নয়। বারে বারে মলত্যাগের অভ্যাস ত্যাগ করা এবং ডায়রিয়া হলে দ্রুত চিকিৎসা করা উচিত। চিকিৎসা কী: উপরোক্ত সমস্যাদি দেখা দিলে অল্পদিনের মধ্যেই নিজেকে সচেতন রেখে সতর্কতা ও চিকিৎসা শুরু করে দিলে বিনা অপারেশনেই ভাল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রোগীকে খাবার-দাবারেও পরিবর্তন আনতে হবে, কোষ্ঠকাঠিন্য হয় এমন কোন খাবার না খাওয়াই ভাল, ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত তেল-চর্বি, গরুর মাংস, চিংড়িমাছ, গুরুপাক ও বাসি খাবার-দাবার বর্জন করা উচিত। বেশি ব্যথায় কোন কোন সময়ে ব্যথানাশক ওষুধও ব্যবহার করা যেতে পারে। সিজ বাথ নিলে উপকার হয়। এটির নিয়ম হচ্ছে আধা গামলা লবণ মিশ্রিত হালকা গরম পানির মধ্যে নিতন্ব ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হয়। স্থানিক অবশকারী মলম ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়। এতে যদি পুরোপুরি না সারে এবং রোগটি যদি বেশি দিন চলতে থাকে, তাহলে অপারেশন ছাড়া ভাল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। সার্জিক্যাল চিকিৎসা : পায়ুপথের নানা সমস্যাদিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য বেশির ভাগ সার্জন অপারেশনের বিপক্ষে। কারণ এতে কোন কোন রোগীর মল আটকে রাখার ক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে। তবে যদিও এখন এর আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে বাংলাদেশেই। পায়ুপথ বা মলদ্বারের স্ফিংটারে অপারেশন : এই অপারেশনে মলদ্বারের অভ্যন্তরীণ স্ফিংটার মাংশপেশিতে বা বিভিন্ন রকমফের সূক্ষ্ম অপারেশন করতে হয়। রোগীর সম্পূর্ণ অজ্ঞান করার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া দুইদিনের মধ্যেই রোগী বাড়ি ফিরে যেতে পারেন এবং অপারেশনের তিনদিন পর স্বাভাবিক কাজকর্ম করতেও পারেন। তাই ভয় বা আত্ঙ্কিত না হয়ে এ জটিল রোগটি যেন না বাড়ে এমনটি মাথায় রাখা উচিত সবার, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ পায়ুপথ সার্জনের পরামর্শ নেয়া জরুরী। লেখক : অধ্যাপক কলোরেক্টাল, ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি (অবঃ) বিএসএমএমইউ। চেস্বারঃ ডেল্টা হেলথ কেয়ার, লিঃ মিরপুর-১১ পল্লবী, বাস স্ট্যান্ডের সাথে, ঢাকা। মোবাইল: ০১৮১৯-২৪৯-৪৩৮, ০১৮৪১-৯১৪-৯১৪
×